ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালীর নিজস্ব উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

বাঙালীর নিজস্ব উৎসব

কবি জীবনানন্দ দাশ এ দেশকে বলেছেন নবান্নের দেশ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি সুফিয়া কামাল ও পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের কবিতায়ও আমরা নবান্নকে খুঁজে পাই অনন্য মহিমায়। নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাস, ঐহিত্য ও সংস্কৃতি। এ উৎসব বাংলার মানুষের কাছে অতি আপন এবং বাঙালী মননের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলার কৃষিজীবী সমাজের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব এই নবান্ন। অনাদিকাল থেকে কৃষিসভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলায় পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব। একসময় অত্যন্ত সাড়ম্বরে উদযাপিত হতো নবান্ন উৎসব। সকল মানুষের অন্যতম অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিল। ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ হলো ‘নতুন অন্ন’। নতুন ধান কাটা আর সেই সঙ্গে প্রথম ধানের অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় এই উৎসব। নবান্ন উৎসব হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে তৈরি চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। মোগল স¤্রাট আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই ঘোষণা করেছিলেন বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস। নবান্ন উপলক্ষে আমাদের গ্রাম বাংলায় প্রচলিত আছে অনেক আচার অনুষ্ঠান। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয় পিঠা-পায়েস। খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে কৃষকরা মইয়না শাইল ধানের চাল দিয়ে পালন করে এই উৎসব। নেত্রকোনার হাজংরা হাতিবান্দা ধান দিয়ে ও মান্দিরা মিদিম ধানের চাল দিয়ে নবান্ন করে। শেরপুর অঞ্চলের কোচ জনগোষ্ঠী পুরাবিনি ধান দিয়ে পালন করে থাকে এই নবান্ন উৎসব। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুসারে নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রদ্ধা না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগি হতে হয়। কিন্তু কালক্রমে নবান্ন হয়ে উঠেছে কৃষিভিত্তিক গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব এবং এ উৎসবই পরিণত হয় বাঙালী জাতির অন্যতম নিজস্ব উৎসবে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৮ সাল থেকে রাজধানী ঢাকা শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন শুরু হয় নবান্ন উৎসব পালন। জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ প্রতিবছর পহেলা অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসব উদযাপন করে থাকে। শহরের মানুষজন এ উৎসব প্রাণভরে উপভোগ করে থাকে। অনেকে বাড়িতে পিঠাপুলির আয়োজন না করতে পারলে বছরে অন্তত একবার নবান্নকে ঘিরে যে মেলা বসে সেই মেলায় এসে পিঠাপুলির স্বাদ নিয়ে থাকেন। এই নবান্ন উৎসবকে ঘিরে আজ প্রত্যাশা সকল সঙ্কটে হীনস্বার্থ ত্যাগ করে বাঙালী জাতি ভেতরে লালন করুক সাম্যের চেতনা। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×