ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতা কিংবা শক্তি থাকলে নির্বাচন বানচাল করে দেখান

প্রকাশিত: ০২:০৬, ২২ নভেম্বর ২০১৭

ক্ষমতা কিংবা শক্তি থাকলে নির্বাচন বানচাল করে দেখান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগে ৯০ দিনের মধ্যে যে কোনো দিন নির্বাচন হবে। আর বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। ক্ষমতা কিংবা শক্তি থাকলে নির্বাচন বানচাল করে দেখান। ‘সমঝোতায় না এলে সরকারকে টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে’ মর্মে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের দেওয়া এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতা থাকলে আপনারা সরকারকে টেনে-হিচড়ে নামান। আপনাদের কি সেই ক্ষমতা আছে? এত সহজ? এ সমস্ত অসাংবিধানিক বক্তৃতা দেওয়া বা অঘটনমূলক বক্তৃতা মানুষ পছন্দ করে না। আমাকেও মানুষ চিনে, মওদুদ আহমেদসহ তাদেরকেও মানুষ চিনে। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরোমের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে ‘৭ই মার্চের মহাকাব্য-বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় সব দেশে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে। বাংলাদেশে তাই হবে।’ মওদুদ আহমেদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে ২০০১ সালের মতো দেশে আবার ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সুযোগ দেশের মানুষ মওদুদ সাহেবদের আর দেবে না। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল এবং ২০১৫ সালে সরকার পতনের জন্য আন্দোলনের নামে কোন কিছু করতে বাদ রাখেননি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আদালতে হাজিরা দিয়ে ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে, ক্ষমতাসীন সরকার দৈনন্দিন কাজ করবে এবং অন্তর্বতীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আপনার (মওদুদ) যদি শক্তি থাকে আপনি চেষ্টা করতে পারেন। এত সহজ না! এটা ঊনসত্তর না, আইয়ূবের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করেছি। আপনারা তো চেষ্টা করেছেন। মনে রাখবেন বাংলার মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছি। আপনারা জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতায় যাবেন, আবার ধ্বংস-যজ্ঞ চালাবেন, এটা বাংলাদেশে আর কোনো দিন হবে না। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ধ্বংস করতে পাকিস্তানের প্রথম চেষ্টার কথা তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, জিয়াউর রহমানের সময়ও এই ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। সেই সময় ৭ মার্চ বা ১৫ আগস্ট এই ভাষণ বাজালে মাইক কেড়ে নেওয়া হত। এরপর খালেদা জিয়া আসলেন, ১৯৯৩ সালে সংসদে বলেছিলাম, এই ভাষণ টেলিভিশনে প্রচার করা হোক; আমার প্রস্তাব প্রত্যাখান করা হয়। আজকে এই ভাষণ আন্তর্জাতিক বিশ্বে শ্রেষ্ঠ ভাষণ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। বর্তমান মেয়াদে তিনি দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গা সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মিয়ানমারকে একদিন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতার জন্যই রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আর সেজন্যই বিশ্ববাসী বঙ্গবন্ধু কন্যাকে মাদার অব হিউমিনিটি উপাধিতে ভূষিত করেছে। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহ-সভাপতি ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নূরে আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জমান, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহ-সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, ফারজানা শাহনাজ মুনির ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবিশ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরের মহাসচিব হারুন হাবিব।
×