ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢামেক হাসপাতালে থেকে চুরি যাওয়া শিশু ফতুল্লা থেকে উদ্ধার

প্রকাশিত: ০১:২৭, ২১ নভেম্বর ২০১৭

ঢামেক হাসপাতালে থেকে চুরি যাওয়া শিশু ফতুল্লা থেকে উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফের জিম নামে তিন মাসের এক শিশু চুরির অভিযোগ উঠেছে। ১৭ ঘন্টা পর মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে শিশুটিকে নারায়নগঞ্জ ফতুল্লা থানা এলাকার একটি মার্কেট থেকে উদ্ধার করেছে করা হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে ফতুল্লা থানার ডিউটি অফিসার এসআই রোখসানা আক্তার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শাহবাগ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ফতুল্লা থানা পুলিশের এসআই সাইফুল হকের নেতৃত্বে একটি টিম শিশু জিমকে উদ্ধার করেছে। এসআই রোখসানা জানান, এ ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। শিশুটি এখন ফতুল্লা থানায় আছে। এদিকে শিশু চুরির ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ফাইন্যান্স) বিদ্যুত কান্তি পালকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ কে এম তারিক জানান, আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে শিশু চুরির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন, উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ আবু জাহের ও উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ সাইদুজ্জামান। চুরি হওয়া শিশু জিমের বাবা মো. জুয়েল জানান, ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪০ নম্বর বেডে মেয়েকে রেখে বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন মা মাজেদা। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সজাগ পেয়ে দেখেন জিম (মেয়ে) নেই। এদিকে ঘটনার পর ঢামেক হাসপাতালে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এর আগেও ঢাকা মেডিকেল থেকে শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরি হয়ে যাওয়া শিশুর বাবার নাম জুয়েল মিয়া ও মায়ের নাম মাজেদা বেগম। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার খুরশিদ মহল গ্রামে। অসুস্থ বাবা জুয়েলকে সঙ্গে গত ৩১ অক্টোবর ঢামেক হাসপাতালে এসেছিল সে। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, ডায়াবেটিস ও কিডনি সমস্যা নিয়ে জুয়েল হোসেন হাসপাতালের নতুন ভবনের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪০ নম্বর বেডে ভর্তি হন। তার সেবার জন্য জিমকে নিয়ে তার মা সুমাইয়া ওরফে মাজেদা বেগমও হাসপাতালে থাকছিলেন। এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, সোমবার রাত ১২ দিকে সুমাইয়া স্বামীর পাশে ৪১ নম্বর বেডে জিমকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখেন জিম নেই। তার চিৎকারে অন্যরা এগিয়ে এসে খোঁজাখুঁজি করলেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ শিশু জিমের মা সুমাইয়া হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, তার মেয়েকে দেখে অন্য রোগীর স্বজনসহ অনেকেই প্রশংসা করেছেন, কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের কেউ জিমকে চুরি করেছে কি না সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তিনি জানান, শিশুটিকে উদ্ধারের সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে। সুমাইয়ার খালতো ভাই রাফসান জানান, জুয়েল মিয়া পেশায় রিকশাচালক। অসুস্থ হওয়ায় গত ৩১ অক্টোবর জুয়েল মিয়াকে ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। জুয়েলকে দেখভালের জন্য শিশু সন্তান জিমকে নিয়ে হাসপাতালে থাকেন তার স্ত্রী। সোমবার রাতে শিশু সন্তান জিমকে নিয়ে তার মা পাশের বেডে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত তিনটার দিকে সুমাইয়ার ঘুম ভেঙে গেলে দেখেন তার মেয়ে নাই। তখন তিনি কান্নাকাটি করতে থাকেন। পরে অন্যান্য রোগী, রোগীর স্বজন ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ছুটে আসেন। তবে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও জিমকে কোথাও পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান, বিকেলে শাহবাগ থানার পুলিশের একটি টিম নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকার একটি মার্কেট থেকে শিশুটি উদ্ধারে করা হয়েছে। এর আগে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে চোরকে সনাক্ত করা হয়। পরে শাহবাগ থানার পুলিশের একটি শক্তিশালী টিম শিশুটিকে উদ্ধারে মাঠে নামে। এর আগে ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেল থেকে খাদিজা আক্তার নামে সাড়ে তিন মাসের এক শিশু চুরির অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়া ওই বছরের ৫ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেড় বছরের শিশু আয়েশাকে চুরি করার সময় পপি আক্তার নামের এক নারীকে হাসপাতালের কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা আটক করেন। তারও আগে ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ড থেকে অপরিচিত এক নারী যমজ দুই ছেলেসন্তানের একজনকে কান্না থামানোর কথা বলে কোলে নিয়ে পালিয়ে যান। পরে অবশ্য র্যা ব হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবি সংগ্রহ করে চোরকে গ্রেফতার করে। পরে তার কবল থেকে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করে। ২০১২ সালের ১৯ মার্চ একই হাসপাতাল থেকে হৃদয় নামের চার বছরের এক শিশুকে চুরি করার সময় নাদিম নামের এক যুবক হাতেনাতে ধরা পড়েন।
×