ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘অর্থ লেনদেনের নামে ‘লুটপাট ও ডাকাতি’

প্রকাশিত: ০১:০৫, ২১ নভেম্বর ২০১৭

 ‘অর্থ লেনদেনের নামে ‘লুটপাট ও ডাকাতি’

অনলাইন রিপোর্টার ॥ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, অর্থ লেনদেনের এই পদ্ধতিতে ‘লুটপাট ও ডাকাতি’ হচ্ছে। নিয়ামক পরিমণ্ডল (রেগুলেটরি ফ্রেইম ওয়ার্ক) না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফরাসউদ্দিন বলেন, “বগুড়ায় আমার এক শিক্ষককে কিছু টাকা পাঠাইতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গুণে গুণে ২ শতাংশ কেটে রেখেছে। তারপর টাকা তুলতে গেলে শিক্ষকের কাছ থেকেও টাকা কেটে নিয়েছে। এই রকম লুটপাট ও ডাকাতি করছে। যেহেতু কোনো নিয়ামক পরিমণ্ডল নেই, তাই কাউকে ধরা যাচ্ছে না।” ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে শূন্য দশমিক ৫ পয়সা শতাংশ কাটা হয় বলে জানান তিনি। রেগুলেটরি ফ্রেইম ওয়ার্ক ছাড়া বাজার অর্থনীতি চলছে এবং এতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও তা আশানুরূপ হবে না মন্তব্য করেন তিনি। “বাজার অর্থনীতিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতবাজ-লুটেরারা অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে।কারণ হল ওই যে পরিমণ্ডল, যদি রেগুলেটরি ফ্রেইম ওয়ার্ক ছাড়া টেকনলজিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্টে চলে যান... এই যে মোবাইল ফান্ড ট্রান্সফার, বলে মোবাইল ব্যাংকিং, আমি তীব্র ভাষায় নিন্দা করি, ধিক্কার জানাই।” দেশে ই-কমার্সে কেনাকাটায় কর না থাকার সমালোচনা করেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ফরাসউদ্দিন বলেন, “সেখানে ট্যাক্স বসানোর জন্য পাঁচ বছর ধরে বলছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।” ব্যক্তি পর্যায়ে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগেরও সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার পড়ে আছে, বাংলাদেশের মুদ্রা অবমূল্যায়ন হতে বাধ্য। যখন অবমূল্যায়ন হবে তখন স্বল্প সুদেও হবে না, অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।” সুনির্দিষ্ট নিয়ামক না থাকায় আগে বিদেশ থেকে যারা ঋণ এনেছিলেন তাদের ৯০ শতাংশই নানা কৌশলে অর্থ পাচার করেছে বলেও অভিযোগ করেন ফরাসউদ্দিন। “২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে বাংলাদেশ থেকে ছয় হাজার ৫০০ কোটি ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে। দেশের ভেতরে বিনিয়োগে কিছু সমস্যা আছে, থাকতেই পারে। তাহলে কী দেশের বাইরে টাকা পাঠিয়ে দেবেন?” শুধু বিচার-আচারের মাধ্যমে দুর্নীত দমন সম্ভব নয় বলে মনে করেন ফরাসউদ্দিন। দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় দুই কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব শামসুল আরেফিন সভায় বক্তব্য দেন। বড় দুর্নীতবাজদের কাছে যেতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমদ। তিনি বলেন, “আমরা অনেক বড় দুর্নীতবাজের কাছে যেতে পারিনি। এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। তবে এই যে পারিনি, এটা স্বীকার করার সাহস আমাদের রয়েছে। আমরা শুরু করলে শেষ করব, মাঝপথ থেকে ফিরে আসব না।” উন্নয়ন ও দুর্নীতিকে ‘যমজ ভাই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রেগুলেটরি ফ্রেইম ওয়ার্কগুলো যদি ঠিক থাকে তাহলে উন্নয়ন ঠিকই হবে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যাবে। তাহলে জনগণের উন্নয়নের জন্য যে অর্থনৈতিক উন্নতি দরকার, সেটা করা সম্ভব হবে। “সম্পদের অসমতা থাকলেও আমরা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছি। এই উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতির গতিকে টেনে ধরাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।” দুদক জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি বলেও স্বীকার করেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “জনগণের আস্থা যদি না থাকে তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি যে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান সেই আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারিনি।” এসময় তিনি জনগণকে হয়রানি না করতে কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
×