ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হুইট ব্লাস্ট ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যে ভারতের গম আবাদে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২০ নভেম্বর ২০১৭

হুইট ব্লাস্ট ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যে ভারতের গম আবাদে নিষেধাজ্ঞা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের গমের হুইট ব্লাস্ট নামের একটি ছত্রাক যেন ভারতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য নতুন এক উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির কৃষি দফতর। কৃষি দফতর জানিয়েছে, আগামী দুই বছর বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় গম চাষ করা যাবে না। কেননা তারা আশঙ্কা করছে সীমান্ত এলাকায় গমের চাষ করলে তার মাধ্যমে হুইট ব্লাস্ট ছত্রাক পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে ভারতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলের যেসব এলাকায় এ বছর গম চাষ করা হয়েছিল তা ইতোমধ্যেই জ্বালিয়ে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তার জন্য মোট চার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়েছে কৃষকদের। খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলা- নদীয়া এবং মুর্শিদাবাদের ওপর কৃষি দফতর বিশেষ নজর দিচ্ছে, কারণ সেখান থেকেই ভারতে রোগ ছড়ানোর সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ও সীমান্তবর্তী এলাকা হরিহরপাড়ার জনপ্রতিনিধি মোশারফ হোসেন বলেন, গত মৌসুমে শুধু আমাদের মুর্শিদাবাদ জেলাতেই প্রায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে বোনা গম এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার পাঁচটি ব্লকে এ সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ওই ফসল নষ্ট করে দিতে হয়েছে। প্রথমে কৃষকরা বুঝতেই চাইছিলেন না, কিন্তু পরে সরকারী ব্যবস্থায় ওই সব গম নষ্ট করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণও দিয়েছি আমরা। গত বছর বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেও একই ভাবে গমের ফসল নষ্ট করা হয়েছে রোগ আটকাতে। আর পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় পরের দুই বছর যাতে কেউ গম চাষ না করেন, তার জন্য সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রচার। কৃষিবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আক্রান্ত গমের বীজ ভারতে প্রবেশ করে থাকতে পারে। হরিয়ানার কারনালে কেন্দ্রীয় গম ও বার্লি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষিরোগ বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক দেবেন্দর পাল সিং ব্লাস্ট রোগের বিষয়ে বলেন, প্রথম ব্রাজিলে গমের ফলনে এ ছত্রাক রোগ দেখা যায়। তার পরে সেটি দক্ষিণ আমেরিকার নানা দেশেও ছড়ায়। এটা এশিয়ার এ অঞ্চলের রোগ নয়। তবে বাংলাদেশ সম্প্রতি ওই সব দেশ থেকে সস্তার গম আমদানি করেছে। কিছু চাষী হয়ত ওই গম বীজ হিসেবে ব্যবহার করেছেন আর তার থেকেই সে দেশে ওই রোগ ছড়িয়েছে। সেজন্যই সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই রোগটাকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানালেন ভারতের গম ও বার্লি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান কৃষিরোগ বিশেষজ্ঞ সিং। কৃষিরোগ বিশেষজ্ঞ দেবেন্দর পাল সিং জানান, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রতিটি রাজ্যেই এ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য অঞ্চলে গম চাষ খুব একটা হয় না, তাই মূল নজরটা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলাতেই।
×