ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রামু, নাসিরনগর ও রংপুরে হিন্দুপল্লীতে হামলা একইসূত্রে গাঁথা ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২০ নভেম্বর ২০১৭

রামু, নাসিরনগর ও রংপুরে হিন্দুপল্লীতে হামলা একইসূত্রে গাঁথা ॥ কাদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ও স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে ॥ সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এবং রংপুরের পাগলাপীরে ঠাকুরপাড়ার হিন্দুপল্লীতে হামলা একসূত্রে গাঁথা। এসব পাশবিক হামলা একই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কাজ। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ চালিয়ে যাচ্ছে। রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু পরিবারের ওপর হামলাকারী, ইন্ধনদাতা এবং পরিকল্পনাকারী সব অপরাধী ধরা পড়েনি। এদের ধরতেই হবে। ঘটনার পর ৯ দিন চলে গেছে। যতদ্রুত সম্ভব এদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। রবিবার দুপুর ১২ টায় রংপুরের পাগলাপীরের ঠাকুরপাড়ায় সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, নিকটপ্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশের সম্পর্ক এখন সকল সময়ের চেয়ে ভাল। এ সুসম্পর্ক নষ্ট করার জন্য স্বার্থান্বেষী মহল নানা রকম ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কিন্ত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যারা এ সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তিনি বলেন, ঠাকুরপাড়া হামলার প্রথম দিন থেকেই আমরা ভীত, সন্ত্রস্ত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি, শেষ পর্যন্ত থাকব। যারা সনাতন ধর্মীদের ওপর এ পাশবিক হামলা করেছে, যারা মঞ্চে ছিল; যারা নেপথ্যে ছিল, তারা যেই হোক তাদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। তদন্ত চলছে, ইতোমধ্যে অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদেরও ধরা হবে। তিনি বলেন, এরা শাস্তি না পেলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবার আশঙ্কা আছে। তাই তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এই বিষধর সর্পকুলের কেউ রেহাই পাবে না। এ সময় মন্ত্রী বলেন, যে ১১টি পরিবারের ঘর জ¦ালিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের প্রত্যক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা এবং ভাংচুরের শিকার ৭ টি পরিবারের মধ্যে ১০ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকার ও পূজা কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া হবে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঘর-বাড়ি, আসবাব, হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন পর্যন্ত কিনে দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ইতোমধ্যে পুননির্মাণ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। রবিবার সকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে প্রতিনিধি দল নিয়ে ঘটনাস্থল ঠাকুরপাড়ায় যান মন্ত্রী। তিনি প্রথমেই টিটু রায়ের বাড়িসহ ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর পরিদর্শন করেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর প্রেস ব্রিফিং শেষে তিনি ব্রাহ্মণপাড়া সরকারী প্রাইমারি স্কুলে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য দেন। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম স¤পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক স¤পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী ও বিএম মোজাম্মেল হক (এমপি), সুজিত নন্দী এমপি এবং হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত প্রমুখ। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ স¤পাদক এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদন আরও ৭ দিন সময় পেল ॥ রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সাত দিন সময় চেয়েছে। রবিবার সকালে কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এই সময়ের জন্য আবেদন করেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোঃ আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম সাত দিনে তদন্ত শেষ করতে না পারায় সময় বাড়ানোর আবেদন করা হলে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান তা মঞ্জুর করেন। বিএনপির মহাসচিব যা বলেন ॥ সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার চক্রান্ত করে রংপুরের ঠাকুরপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নাম জড়িয়ে নিজেদের দোষ ঢাকতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। আজকে (রবিবার) ঠাকুরপাড়া গ্রামের আমারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্ত সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যাচ্ছেন। তাই সেখানে এক সঙ্গে দুটি দলের প্রোগ্রাম করা সমীচীন নয়, এ বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। তাই, আমি তাদের ছাড় দিয়েছি। সেখানে আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে লালমনিরহাটে, মিটিং শেষ করে আবার বিকেলে ঢাকায় ফিরতে হবে। আমি সোমবার রংপুরের ঠাকুরপাড়া গ্রাম পরিদর্শনে যাব। ফিরতি পথে দেখা ও কথা হলো কাদের-ফখরুলের ॥ ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দেখা বা কথা না হলেও রবিবার বিকেলে ঢাকা ফেরার পথে এই বিমানবন্দরে দেখা ও কথা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। তবে দুইজনে ঢাকা ফিরেছেন পৃথক বিমানে। সকালে ঢাকা হতে সৈয়দপুরে আসার সময় যেমনটি হয়েছিল। বিকেলে সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ফেরার পথে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষা করছিলেন ওবায়দুল কাদের। পাশের আরেকটি কক্ষে মির্জা ফখরুল আছেন জেনে তার সঙ্গে দেখা করতে যান কাদের। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে মির্জা ফখরুলকে দেখে ওবায়দুল কাদের বললেন, আমরা যেহেতু রাজনীতি করি, তাই আলাপ আলোচনার পথ খোলা রাখাই ভাল। কুশল বিনিময়ের সময় কাদের বলেন, সকালে সৈয়দপুর আসার পথে ঢাকা এয়ারপোর্টে আপনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু শুনলাম আপনি আসছেন না। একসঙ্গে এলে ভাল হতো। কথা বলা যেত। জবাবে ফখরুল বলেন, তিনি সকালের ফ্লাইটেই আসতেন। কিন্তু পারিবারিক কারণে একটু পরে আসতে হয়েছে। ফ্লাইটের সময় হলে ওবায়দুল কাদের সেখান থেকে ঢাকায় চলে আসেন। আর পরের আরেকটি বেসরকারী বিমান সংস্থার ফ্লাইটে ঢাকা ফিরেন বিএনপির মহাসচিব। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স¤পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান দুইজনেই পৃথকভাবে জানান ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল ইসলামের দেখা হয়েছে। কুশল বিনিময়ও হয়েছে।
×