ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আসেম সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ, রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২০ নভেম্বর ২০১৭

আসেম সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ, রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রবিবার রাতে মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। আসেম পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলন শেষে তিনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অনুষ্ঠেয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। আজ সোমবার থেকে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোয় দুই দিনব্যাপী আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হচ্ছে। সম্মেলনে ৫৩ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বক্তব্য রাখবেন। আর এই সম্মেলনে থেকেই রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। মিয়ানমারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রবিবার রাতে মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। আবুল হাসান মাহমুদ আলী জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েলের সঙ্গে একটি বিশেষ বিমানে মিয়ানমার গেছেন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সিগমার গ্যাব্রিয়েল রবিবার সকালে ঢাকায় আসেন। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেই আবুল হাসান মাহমুদ আলী রবিবার রাত নয়টায় নেপিডোর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সূত্র জানায়, নেপিডোয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শেষে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আগামী ২২-২৩ নবেম্বর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ফেরত ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে চায়। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হতে পারে। আর সেই চুক্তি অনুসারে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন হবে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শনিবার মধ্যরাতে ঢাকায় আসেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারোকানো। রবিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে জাপানের সক্রিয় সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া রবিবার সকালে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার, ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মোগেরিনি ঢাকায় আসেন। তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন। রবিবার রাতে তারাও মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। মিয়ানমারে আসেম পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলনে তারা যোগ দেবেন। ২০-২১ নবেম্বর নেপিডোয় অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কটকেই প্রাধান্য দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের আসেম সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগেই বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনিও মিয়ানমারের আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে রবিবার মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বতর্মান রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশের জন্য আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অত্যন্ত কার্যকর একটি ফোরাম বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছে। কেননা, এই সম্মেলনের আয়োজন করছে এবার মিয়ানমার। সে কারণে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের কাছে রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরার পাশাপাশি বহুবিধ সুবিধা অর্জন করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের রফতানির একক বৃহত্তম বাজার এবং অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার। আসেম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এশিয়ার দেশসমূহের সম্মিলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ইউরোপীয় দেশসমূহের সঙ্গে তার স্বার্থ সমুন্নত রাখার কাজটি করতে পারে। আসেম অন্যান্য দেশের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় করার পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদান করে যা বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
×