অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্রাজিলের কাছে তৈরি পোশাকের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা বাজার সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি সহজ হবে না। বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সবকিছুতে নেতিবাচক মন্তব্য করে দলটি ছোট মনের পরিচয় দিচ্ছে।
রবিবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জও তাবাজোরা ডি.ওলিভেইলা জুনিয়র। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ব্রাজিলের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা আছে। কিন্তু সেদেশে শুল্ক অনেক বেশি। তাই ব্রাজিলকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) শর্ত অনুযায়ী শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। তাদের জানিয়েছি, চিলিসহ বিশ্বের অনেক দেশ তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়। তিনি আরও বলেন ব্রাজিল যদি বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা না দেয় তাহলে আমাদের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) করার প্রস্তাবও দিয়েছি। এ চুক্তি হলে উভয় দেশ শুল্ক বা কোটামুক্ত পণ্য রফতানি করতে পারবে। এফটিএ সই হলে ব্রাজিলের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক স্থান করে নিতে পারবে। শিগগিরই আমরা ব্রাজিলের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে আলোচনা শুরু করবো। আমাদের প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী বছর ব্রাজিল সফর করবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ব্রাজিলকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছি। বাংলাদেশের চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও জুতার প্রতি ব্রাজিলের বেশ আগ্রহ আছে। ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিনিময় করতে চাই। আগামী বছরের মার্চ মাসে বাণিজ্য বাড়াতে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হবে। উল্লেখ্য, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে ২০৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়। বিপরীতে আমদানি করা হয় ৯২৭ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো সহজ হচ্ছে না ॥ নির্যাতনের কারণে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেও ফেরত পাঠানো সহজ হবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এই দুই দেশকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দিতে চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখনও সেই অবস্থানে রয়েছে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সারা পৃথিবীতেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে প্রত্যেকটি দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। ভারত প্রথম যে অবস্থায় ছিল এখন তা নেই। তারা পক্ষেও ভোট দেয়নি বিপক্ষেও দেয়নি। তিনি বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসে বলেছেন তিনি উদ্যোগ নিতে পারেন যাতে করে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারেন। চীনেরও একটা স্বার্থ আছে মিয়ানমারের প্রতি। তারা সেখানে ইকনোমিক জোন করবে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক করবে। তাদের অনেক ব্যাপার আছে। ভারত সেখানে পোর্ট করেছে। রাশিয়া অস্ত্র বিক্রি করে। তবে বাংলাদেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুকে আন্তর্জাতিক ইস্যু করতে পেরেছে দাবি করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, মিয়ানমারও এখন নমনীয় হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা আশা করি, রোহিঙ্গা পাঠাতে পারব।
বিএনপি ছোট মনের পরিচয় দিচ্ছে ॥ সব কিছুতে নেতিবাচক ও বেফাস মন্তব্য করে বিএনপি ছোট মনের পরিচয় দিচ্ছে। তিনি বলেন, গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল নাগরিক সভা হয়েছে। এটা দলীয় সভা নয়, এটা সকলের জন্য। ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আনন্দের ব্যাপার, তাও কষ্ট করে বলেছে। এইটুকু বলতে কষ্ট হয়েছে, যে না বলে পারা যায় না। কারণ এরাই তো তারা যারা এই ৭ মার্চেও ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। তিনি বলেন, গতকাল (নাগরিক সমাবেশে) হাজার হাজার লাখ লাখ লোক এসেছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সকাল থেকে দেখলাম স্কুলের বাচ্চাদের বাসে করে নিয়ে আসা হচ্ছে। তারা শিক্ষকদের বলছেন, না আসলে বেতন কাটা যাবে। ব্যাংকে চিঠি দিয়েছেন কর্মচারীদের। তাদের বলা হয়েছে, সমাবেশে না আসলে ৫ দিনের বেতন কাটা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো রাজনীতিবিদের কাছ থেকে জাতি এমন মন্তব্য আশা করে না। রাজনীতি করতে হলে মন বড় করতে হয়। ছোট মন নিয়ে রাজনীতি করলে সেই রাজনীতিতে সফলতা আসে না।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্ব যেখানে শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ ও ‘স্টার অব দ্য ইস্ট’ উপাধি দিয়েছে সেখানে বিএনপি তার সমালোচনা করছে। বিএনপি সবকিছুতেই নেতিবাচক মন্তব্য করে।