ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জেনারেটর বিকল ॥ চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জেনারেটর বিকল ॥ চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ ২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ২৫০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক জেনারেটরটি বিকল হয়ে গেছে। ১৮ মাস ধরে চলছে এর মেরামত কাজ। ১৬ নভেম্বর রাতে পিডিবির লোডশেডিংয়ের সময় টানা প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা সময় গোটা হাসপাতাল অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকলেও জেনারেটর চালু না করায় বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ ও শহরবাসীর মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মূলত: উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওই জেনারেটরটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জেনারেটরটি ২৫০ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষমতাসম্পন্ন। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে প্রায় ২৫ লাখ ২৪ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয়ে এই বৈদ্যুতিক জেনারেটরটি স্থাপন করা হয়। জেনারেটর চালানোর জন্য ডিজেলের মজুদ থাকলে পিডিবির লোড শেডিং বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, সকল ওয়ার্ড, অস্ত্রোপচার কক্ষ ও আবাসিক ভবনসহ গোটা হাসপাতালের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো যায়। কিন্তু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই জেনারেটরটি স্থাপনের পর থেকে হাতুরে মিস্ত্রি দিয়ে মেরামত করার কারণে দিনে দিনে এটি বিকল হয়ে গেছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ জুন সকাল ১০টা ৩৩ মিনিট থেকে ১১টা ৩ মিনিট পর্যন্ত অর্থাৎ আধা ঘন্টা সময় চালু রেখে জেনারেটর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে খরচ হয় ১৩ লিটার ডিজেল। এর কয়েকদিন আগে ২০০ লিটার ডিজেল ক্রয় করা হয়েছিল। এরপর থেকে প্রায় প্রায় ১৮ মাস ধরে জেনারেটরটি আর চালু করা হয়নি। জেনারেটরটিতে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দিলেও জামালপুরের স্থানীয় একজন হাতুরে মিস্ত্রি দিয়ে তা মেরামত করাচ্ছেন। কিন্তু ওই মিস্ত্রি তার মেরামত কাজ শেষ করে এখনও তা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত বা মৌখিক কোনোভাবেই নিশ্চিত করেননি। হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, জেনারেটর মেরামতের মজুরি বাবদ ওই মিস্ত্রি প্রায় ১ লাখ টাকার বিল করেছেন। টাকা বরাদ্দ না থাকায় তার বিল পরিশোধ করা হয়নি। তবে তেলের মজুদ থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যখন যা তেল লাগবে তা ক্রয় করে দুর্যোগের মুহূর্তে জেনারেটর চালু করার আদেশ থাকলেও জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না। কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার কারণে প্রায় ১৮ মাস ধরে জেনারেটরটি বিকল হয়ে পড়ে থাকায় পিডিবির লোড শেডিংয়ের সময় জরুরি মুহূর্তে দিনেও চিকিৎসা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়। অন্যদিকে রাতে পরিণত হয় ভুতুরে অবস্থার। হাসপাতাল এলাকায় রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে একদিকে যেমন চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হয়, অন্যদিকে বিদ্যুৎবিহীন ভুতুরে সময়ে বিশেষ করে রাতে মাদকাসক্ত এবং ছিনতাইকারীদের দ্বারা অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। ১৬ নভেম্বর রাত পৌনে ৮টা থেকে রাত ১১টা ৯ মিনিট পর্যন্ত টানা প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পিডিবির লোড শেডিংয়ের সময় হাসপাতালের জেনারেটরটি চালু না করায় এ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর লোকজন এবং শহরবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় হাসপাতাল কর্তপক্ষও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালাক চিকিৎসক মো. সিরাজুল ইসলাম পিডিবির লোড শেডিংয়ের সময় গোটা হাসপাতাল প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকা প্রসঙ্গে বলেন, এতো দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকার সময় আমাকে কেউ জানায়নি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক, নার্স, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, এমন কি জেনারেটরের দায়িত্বে থাকা বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি কেউ আমাকে জানায়নি। আমাকে জানালে আমি সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতাম। জেনারেটর বিকল প্রসঙ্গে বলেন, না এ কথা ঠিক না। জেনারেটর ঠিকই আছে এবং তেলও মজুদ আছে। এ ঘটনায় তিনি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের কারণদর্শানোসহ বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান। টানা প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা সময় ধরে জেনারেটর চালু না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. শফিকুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে রাতে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কেউ আমাকে জানায়নি। তিনি স্বীকার করেন যে, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন ৪৫০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এর ওপর রয়েছে রোগীদের স্বজনদের ভিড়। এতে ওইদিন রাতে অন্তত ১ হাজার মানুষের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এটা আমাদের একটু ভুল বা যোগাযোগের গ্যাপের কারণে হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জামালপুর-শেরপুর ইউনিটের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইউছুফ আলী বলেন, এটি সঠিকভাবে পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে হয়তো ত্রুটিপূর্ণ হয়ে গেছে। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি জেনারেটর। যখন এটি স্থাপন করা হয় তখন শুনেছিলাম প্রতি ঘন্টায় ৪৩ লিটার ডিজেল খরচ হয় জেনারেটরটি চালাতে। এই ধরনের একটি জেনারেটর এখন নতুন করে স্থাপন করতে গেলে দেড় কোটি টাকা লাগতে পারে। এটি ভালো প্রকৌশলী সংস্থা দিয়ে সঠিকভাবে মেরামত করা হলে ভালোমতো চলবে বলেও তিনি মনে করেন।
×