ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রামু, নাসির নগর এবং ঠাকুরপাড়ায় হামলা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ॥ কাদের

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

রামু, নাসির নগর এবং ঠাকুরপাড়ায় হামলা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ॥ কাদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ কক্সবাজারের রামু, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার নাসির নগর এবং রংপুরের পাগলাপীরের ঠাকুরপাড়ার হিন্দু পল্লীতে হামলা একই সূত্রে গাঁথা। এ জঘন্য পাশবিক হামলা একই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কাজ। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এ ধরণের যঘন্য কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু পরিবারের উপর হামলাকারী, ইন্ধন দাতা, এবং পরিকল্পনাকারী সব অপরাধী ধরা পড়েনি। এদের ধরতেই হবে। ঘটনার পর ৯ দিন চলে গেছে। যতদ্রুত সম্ভব এদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করে বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড় করানো হবে। রবিবার দুপুর ১২ টায় রংপুরের পাগলাপীরের ঠাকুরপাড়ায় সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দু পরিবারকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন, সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী এবং আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী বলেন, আমাদের নিকট প্রতিবেশী ও বন্ধু প্রতীম দেশ ভারতের সাথে আমাদের দেশের সম্পর্ক এখন সকল সময়ের চেয়ে ভালো। এ সুসম্পর্ক নষ্ট করার জন্য স্বার্থান্বেষী মহল নানা রকম ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কিন্ত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যারা এ সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তিনি বলেন, ঠাকুরপাড়া হামলার প্রথম দিন থেকেই আমরা ভীত, সন্ত্রস্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে আছি, শেষ পর্যন্ত থাকবো। যারা সনাতন ধর্মীদের উপর এ পাশবিক হামলা করেছে, যারা মঞ্চে ছিল, যারা নেপথ্যে ছিল, তারা যেই হোক তাদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। তদন্ত চলছে, অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদেরকেও ধরা হবে। তিনি আরও বলেন, এরা শাস্তি না পেলে একই ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটার সম্ভবনা আছে। তাই তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এই বিষধর স্বর্পক’লের কেউ রেহাই পাবে না। এ সময় মন্ত্রী বলেন, যে ১১টি পরিবারের ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের প্রত্যক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা এবং ভাংচুরের স্বীকার ৭ টি পরিবারের মাঝে ১০ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকার ও পূজা কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া হবে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে ঘর-বাড়ি, আসবাব, হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন পর্যন্ত কিনে দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির ইতোমধ্যে পূণনির্মাণ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ শুধু মুসলমানরা করেনি। তখন হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান বলে কোন বিভেদ ছিল না । তখন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই ছিলাম বাঙ্গালী। তাই খুব সহজেই আমরা স্বাধীনতার শত্রুদের পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। সেই পরাজিত শক্তি এবং তার দোসররা এখনো এদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় আছে এবং দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক চক্রান্ত করছে। ’৭১ এর মতো আবারো ঐক্যবদ্ধভাবে এদের মোকাবেলা করতে হবে। তিনি সকলকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর চক্রান্ত ক্রিয়াশীল আছে। রবিবার সকালে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে নেমে সড়ক পথে প্রতিনিধি দল নিয়ে ঘটনাস্থল ঠাকুর পাড়ায় যান মন্ত্রী। তিনি প্রথমেই টিটু রায়ের বাড়িসহ ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়িঘর পরিদর্শন করেন এবং তাদের সাথে কথা বলেন। এরপর প্রেস ব্রিফিং শেষে তিনি ব্রাক্ষ্মনপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য দেন। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম স¤পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক স¤পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী ও বিএম মোম্মেল হক(এমপি), সুজিত নন্দী এমপি, হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ওানা দাশ গুপ্ত প্রমূখ। জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রেজাউল করিম রাজুসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে রানা দাশ গুপ্ত সংখ্যা লঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করার দাবি জানান। সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আর খালেদা জিয়া সেই স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরকে লালন করে তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে এসব অপকর্ম ঘটানো হচ্ছে। এ সব কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পরিকল্পিত চক্রান্ত। উল্লেখ্য , টিটু রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে ১০ নবেম্বর ঠাকুরপাড়া গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের মিছিল থেকে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয় । আগুনে টিটু রায়ের তিনটি, সুধীর রায়ের ছয়টি, অমূল্য রায়, বিধান রায় ও কৌশল্য রায়ের দুটি করে ছয়টি, কুলীন রায়, ক্ষিরোধ রায় ও দীনেশ রায়ের একটি করে ঘর পুড়ে যায়। পুলিশের হামলায় একজন নিহত, আরও ১৫ জন আহত হন।
×