ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রুমি নোমান

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পথ চলার ৩৯ বছর

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পথ চলার ৩৯ বছর

বাংলাদেশে ইসলামী গবেষণা বা শিক্ষার প্রসারে ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার দেশে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৭ সালের শুরুর দিকে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান প্রত্যেক মুসলিম দেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করেন। পরবর্তীতে প্রস্তাবটি গৃহীত হলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও একটি আন্তর্জতিকমান সম্পন্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম এ বারীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রস্তাবিত রিপোর্টেও ভিত্তিতে ২২ নবেম্বর ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সরকার কুষ্টিয়ার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে স্থান পরিবর্তনসহ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করে ১৯৮৫ সালে। প্রথম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে থিওলজি এ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের অধীনে আল কুরআন-ওয়া উলুম কুরআন ও উলুমত তাওহীদ ওয়াদ্ দাওয়াহ নামে দুটি বিভাগ এবং মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থ্পানা বিভাগ নামে দুটি বিভাগে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগ, ১টি ইনিস্টিটিউট, প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী, ৩৫৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ৩০০ জন কর্মকর্তা, ১৭৯ সহায়ক কর্মচারী এবং ২৯৫ জন সাধারণ কর্মচারী নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে প্রায় ১৪শ’ ফাযিল ও কামিল মাদ্রাসা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. হারুন-উর রশিদ আসকারী। দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়টি আগামী ২২ নভেম্বর ৩৮ বছর শেষে ৩৯ বছরে পদার্পণ করবে। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে ১৭৫ একর আয়তনের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টি প্রশাসনিক ভবন, ৪টি একাডেমিক ভবন, ৫টি ছাত্র হল, ৩টি ছাত্রী হল, ১টি অত্যাধুনিক মিলনায়তনসহ ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টি.এস.সি.সি) ও ক্যাফেটেরিয়া, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার, একটি আধুনিক ব্যায়ামাগার, বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক মুক্তবাংলা, ভাষা শহীদদের স্মারক শহীদ মিনার, একটি স্মৃতিসৌধ, একটি ডাকঘর, ইবি থানা ও সুদৃশ্য মফিজ লেক। এছাড়াও রবীন্দ্র-নজরুল একাডেমিক ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার, বৈদ্যুতিক সাব- স্টেশনসহ একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম লিমা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পূর্বে সেশনজটের ভয়াবহতার কথা শুনেছিলাম, কিšুÍ ভর্তি হওয়ার পর দেখলাম অবস্থা পুরোপুরিই পাল্টে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস পরীক্ষা হওয়ায় সেশনজট প্রায় পুরোপুরিই কেটে গিয়েছে।’ এছাড়া আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার লক্ষ্যে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে ইন্টারনেটের আওতায় আনার কাজ অনেকাংশেই শেষ হয়েছে। এছাড়া আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের শিক্ষকরাও আসছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। লাইব্রেরীর ডিজিটালাইজেশনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য উন্নতমানের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, ‘লাইব্রেরীতে ইন্টারনেট সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন করায় শিক্ষর্থীরা খুবই উপকৃত হচ্ছে। পড়াশোনার জন্য এখন তারা লাইব্রেরীতে বেশি সময় অতিবাহিত করছে।’ এছাড়া অনলাইনে রেজাল্ট প্রাপ্তির মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশনের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে ইসলামী বিশ্বদ্যিালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ভর্তি পরীক্ষা ও ৪র্থ সমাবর্তন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোর সংস্কার হচ্ছে, রঙের ছোয়ায় পুরনো ভবনগুলো পাচ্ছে নতুনত্ব, প্রতিটি গাছে করা হচ্ছে চুনকাম, সব মিলিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকেই চলছে এখন উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। রাস্তার দুপাশে লাগানো ফুল গাছের সারি যেন আপনাকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে স্বাগত জানানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্য প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। একটি সুন্দর ক্যাম্পাসে একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস-এই চিন্তাকে সামনে রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণানির্ভর আন্তর্জাতিকমানের ও আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
×