ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্বপ্নেও কবিতা লিখি, বুনি সত্যের গাঁথুনি’

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

‘স্বপ্নেও কবিতা লিখি, বুনি সত্যের গাঁথুনি’

মনোয়ার হোসেন ॥ বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ বুকার পুরস্কারজয়ী নাইজিরীয় কবি ও কথাসাহিত্যিক বেন ওকরি। মাটি-মানুষের সঙ্গে দেশের গল্প তিনি মেলে ধরেন তার গল্প, উপন্যাসে। আর কবিতার পঙক্তিমালায় তুলে আনেন মানবতার গল্প। ঢাকা লিট ফেস্টে অংশ নেয়া এই কবি জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রকাশ করেছেন কবিতার প্রতি তার অনুরাগের। জানান, কবিতার সঙ্গে নিত্য বসবাস বেন ওকরির। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিনই নতুন নতুন সব কবিতা লিখি, মানে একজন কবি প্রতিদিন যা করে আর কি ! এমনকি আমি যখন ঘুমাই তখন স্বপ্নের মাঝেও কবিতা লিখি। তবে আমি কখনও খুব তাড়াহুড়ো করতে চাই না। একেকটা কবিতার জন্য আমি বেশ খানিকটা সময় নিই। বেন ওকরির কাছে কবিতা মানে শুধু ভাবের প্রকাশ নয়; কবিতা হচ্ছে সত্যের বয়ান। এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার কাছে কবিতার মানে হলো সত্য, কবিতাকে সত্যিটাই বলতে হবে আজীবন। একেকটা কবিতা লেখার আগে আমি বারবার ভাবি, যা লিখছি তা কতটা সত্য। পঙক্তিগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতেই থাকে। কিন্তু নিজের উত্তেজনা দমন করে আমি সেই পঙক্তিগুলো একের পর এক সাজাতে থাকি। এভাবেই নির্মিত হয় আমার কবিতা। লন্ডনে বসবাসকারী নাইজিরীয় বংশোদ্ভূত এই কবি, সাহিত্যিক প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন। বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এলাম। ভীষণ ভাল লাগছে। বাংলাদেশের সাহিত্য, কবিতা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। এবার আমি বাংলা সাহিত্য পড়তে শুরু করব। পত্রিকার মাধ্যমে লেখালেখির শুরু করেন বেন ওকরি। কখনও হাতে লিখে, কখনওবা টাইপ রাইটারে টাইপ করে লেখা পাঠাতেন। কিন্তু নিজের লেখা সম্পাদনা করার সময় তিনি এখনও সেই কাগজে-কলমেই করেন। এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি এটাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। নিজের লেখা সম্পাদনার জন্য এর চেয়ে সেরা পন্থা আমার আর কিছুই মনে হয় না। বুকার পুরস্কারবিজয়ী ফিকশন লেখক বেন ওকরি ছোটবেলায় চিত্রশিল্পী হতে চেয়েছিলেন। পরে কবি হয়ে গেলাম। কিন্তু চিত্রকর্মের প্রতি আগ্রহ হারাইনি এতটুকু। কাব্য সাহিত্য চর্চার বাইরে সুযোগ পেলেই তিনি ছুটে যান চিত্রকর্ম খুঁজতে। এমনকি চিত্রকলার নানা উপাদান উপজীব্য করে কবিতাও লিখেছেন তিনি। ১৯৫৯ সালে নাইজিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন বেন ওকরি। নাইজিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে তার পরিবার ১৯৬৮ সালে লন্ডনে চলে আসে। পরে তুলনামূলক সাহিত্যে যুক্তরাজ্যের এসেক্স এবং ওয়েস্টমিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি । তার প্রথম উপন্যাস ‘ফ্লাওয়ার্স এ্যান্ড শ্যাডোস’। প্রকাশ পায় ১৯৮০ সালে। এরপর ‘ল্যান্ডস্কেপ উইদিন’। প্রকাশ পায় ১৯৮১ সালে। লন্ডনে বসে তিনি লেখেন উপন্যাস ‘ইনসিডেন্টস এ্যাট দ্য শ্রাইন’, ‘স্টারস অব দ্য নিউ কার্ফ্যু’। ১৯৯১ সালে ওকরি বুকার প্রাইজ পান তার ‘দ্য ফেমিশড রোড’ উপন্যাসের জন্য। তার কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সংস অব এ্যাটাচমেন্ট’, ‘ইনফিনিট রিচেস’, ‘এ্যাসটোনিশিং দ্য গডস’, ‘ডেঞ্জারাস লাভ’, ‘আর্কেডিয়া’, ‘স্টারবুক’, ‘এ্যান আফ্রিকা এলিজি’, ‘মেন্টাল ফ্লাইট’, ‘এ ওয়ে অব বিং ফ্রি’। তার অধিকাংশ গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় উঠে আসে নাইজিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কথা। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা।
×