ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন কংগ্রেসে তুলে ধরা হবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের চিত্র

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

মার্কিন কংগ্রেসে তুলে ধরা হবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের চিত্র

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমার যে এখনও আন্তরিক নয় তা একেবারে সুস্পষ্ট। প্রত্যাবাসনে শর্ত জুড়ে দিয়ে সুচি সরকার ও সে দেশের জান্তাবাহিনী নানা কুমতলব আঁটছে; যা অনেকটা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো। রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য ও স্বীকৃত। এই স্বীকৃত ও সত্য বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘসহ সারাবিশ্ব শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বার বার উচ্চারণ করে এলেও মিয়ানমার সরকার এর সুষ্ঠু সমাধানের পথে এখনও নেই। বিদেশী শক্তিশালী হাতেগোনা কয়েকটি রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা পেয়ে সুচি সরকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক ধরনের নির্লজ্জ অপতৎপরতায় মেতে আছে। সারাবিশ্ব বলছে, রোহিঙ্গারা বংশ পরম্পরায় মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের নাগরিকত্বসহ সবকিছু কেড়ে নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ চালানো হয়েছে গণহত্যা। অথচ, সে দেশের সেনাবাহিনীর কথিত তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা নিজেরাই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে; যা কিনা সত্যের অপলাপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের একক সহায়তার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। এর কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহল থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন প্রকাশ্যে মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করে আছে। জাতিসংঘে চীনের সকল বক্তব্য মিয়ানমারের পক্ষে। নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে ভেটোও দিয়েছে চীন। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশ চীনের এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ের এ ইস্যু নিয়ে সমাধানের পথ খোঁজার বিষয়ে একমত নয়। গত ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ঘটনা যে শুরু হয়েছে তা এখনও অব্যাহত। শনিবার ভোরেও টেকনাফ এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নতুন করে এসেছে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। এ অবস্থায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সত্য ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিনেটর জেফ মার্কলের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন ২ সিনেটর ও ৩ কংগ্রেসম্যান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। অপরদিকে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে মার্কিন সিনেটরদের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে শুক্রবার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ জিয়াউদ্দিন শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সিনেটরদের সঙ্গে সাক্ষাত করে এ আহ্বান জানিয়েছেন। অপরদিকে, উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে আশ্রিত রোহিঙ্গা তরুণীদের একটি অংশ অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। অসামাজিক কাজে এসব তরুণীকে লিপ্ত করার কাজে সহযোগিতার দায়ে ৫০ দালালকে দ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি এইচআইভিতে আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৬৫ এইডস রোগী। মার্কিন কংগ্রেসে উপস্থাপন করা হবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ॥ শনিবার সকালে মার্কিন সিনেট ও কংগ্রেসম্যানের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর জানানো হয়েছে, শীঘ্রই রোহিঙ্গাদের নিয়ে সকল তথ্য সে দেশের কংগ্রেসে উপস্থাপন করা হবে। এর আগে প্রতিনিধিদল ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছে উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্প পরিদর্শন করে। তারা সেখানে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্রের ২ সিনেটর ও ৩ কংগ্রেসম্যান পৃথক পৃথকভাবে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করেন। পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দলের নেতা সিনেটর জেফ মার্কলে সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তারা গণহত্যা, গণধর্ষণ ও নির্যাতনের নানা তথ্য পেয়েছেন। বাংলাদেশ সফর শেষে তারা মিয়ানমার যাবেন। সেখান থেকে রাখাইন রাজ্য নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে তা কংগ্রেসে উপস্থাপন করবেন। অপরদিকে, আজ রবিবার বাংলাদেশে আসছেন জার্মানি ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক মন্ত্রী। তাদের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কর্মসূচী রয়েছে। শতাধিক রোহিঙ্গা যুবতী উদ্ধার ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যুবতীদের একটি অংশ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদের প্রলুব্ধ করছে সংঘবদ্ধ কিছু দালাল। শনিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিচালিত এক অভিযানে শতাধিক রোহিঙ্গা যুবতীকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করে দ- দেয়া হয়েছে ৫০ দালালকে। এছাড়া এইডসে আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শনিবার পর্যন্ত তা ৬৫ জনে উন্নীত হয়েছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা নর-নারী সে দেশ থেকেই এ রোগ বহন করে এনেছে। এদের একটি অংশকে চট্টগ্রামে জরুরী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকিদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে কক্সবাজারের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। কয়েকটি এনজিও থেকেও এদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
×