ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রায় ২ কোটি লোক কোন না কোন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে

প্রকাশিত: ০২:১০, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

প্রায় ২ কোটি লোক কোন না কোন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে প্রায় দু’কোটি লোক কোন না কোন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। আক্রান্তের শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে এ মরণব্যাধির অস্তিত্ব ধরতে পারেন না। কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, মাত্র শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ লোকের চিকিৎসা চালিয়ে যাবার সামর্থ্য আছে। দেশে প্রতি বছর ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে হঠাৎ করে অকেজো হয়ে যায়। প্রতি বছর কিডনিজনিত রোগে প্রায় ৪০ হাজার রোক মারা যায়। দেশে কিডনি বিকল রোগীদের জন্য কিডনিদাতার সংকট প্রকট হয়েছে উঠেছে। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমান মোট রোগীদের মাত্র শতকরা ২ ভাগ রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়। অন্যরা নিজেদের মত চেষ্টা করে রোগী নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। বাকিরা ডায়ালাইসিস দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে থাকেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে কিডনি রোগীকে পূর্ণাঙ্গ আরোগ্য লাভ করানো সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা করলে প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ রোগীর কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। শনিবার রাজধানীর মিরপুরস্থ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটের কনভেনশন হলে বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের তিন দিনব্যাপি ১৩ম জাতীয় সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার(অব) ডা. আব্দুল মালিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান ও যুক্তরাজ্যের রয়াল লন্ডন হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. স্ট্যানলি ফ্যান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মুহিবুর রহমান। তিনদিনের সম্মেলনে দেশ-বিদেশের প্রায় ২৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিডনি রোগ ও প্রতিরোধ, হেমোডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস, কিডনি সংযোজন প্রভৃতি বিষয়ক সেমিনারে আলোচনা করবেন। এতে দেশের তিন শতাধিক চিকিৎসক অংশ নিচ্ছেন। জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার(অব) ডা. আব্দুল মালিক বলেন, দেশে কিডনি বিকল রোগীদের জন্য কিডনিদাতার সংকট প্রকট হয়েছে উঠেছে। দেশে কিডনি রোগ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও খুব ব্যয়বহুল। দেশের সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন কারণে কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে কারো কারো কিডনি হঠাৎ করে অকেজো হয়ে যায়। বাংলাদেশে ডায়রিয়া, অতিরিক্ত বমি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, বিভিন্ন রকম ইনফেকশন, ম্যালেরিয়া, প্রসবকালী জটিলতা, সাংঘাতিক ধরনের নেফ্রাইটিস, বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও কিডনির পাথরের কারণে হঠাৎ করেও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। এ ধরনের কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার ভাল দিক হচ্ছে, এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করা যায়। সময় মতো সঠিক চিকিৎসা করলে অনেকের কিডনি পুনরায় স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, সঠিক চিকিৎসা করলে প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ রোগীর কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। হঠাৎ করে কিডনি অকেজো হওয়াকে প্রতিরোধ করতে হলে বিশুদ্ধ খাবার ও পানি পান করতে হবে। রক্ত ক্ষরণ হলে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত দিতে হবে। ইনফেকশন হলে তার সঠিক সময়ে চিকিৎসা করতে হবে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে কিডনি প্রতিস্থাপন খুবই ব্যয়বহুল। কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনির জটিলতায় ভুগছে। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে কিডনি রোগীর পরিবারের সদস্যরা ব্যয় বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। কিডনি চিকিত্সার ব্যয় কমাতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ৪০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষ যদি ন্যাফরাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভোগে, তাহলে তার কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সময় নষ্ট না করে তাদের কিডনি পরীক্ষা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু দেশে কিডনিদাতার সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। কিডনি দাতা ও গ্রহীতার ওষুধের মূল্যহ্রাস এবং মস্তিষ্কের মৃত্যুর (ব্রেইন ডেথ) পর তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অসুস্থ ব্যক্তির দেহে সংযোজন করার সুযোগ রেখে আইন তৈরি করা দরকার। টাকা দিয়েও কিডনী সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
×