ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কু ঝু আর লোভী সাপ

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

কু ঝু আর লোভী সাপ

কু ও ঝু দু’ভাইবোন খেলছিল- বিশ্বাস বাড়ির স্তূপীকৃত পুরনো কাঠের মধ্যে থেকে একটু খালি জায়গা আছে, সেখানটায়। ওদের বাড়িও সেটা। মা-বাবা আর দুটো ছেলেমেয়ে নিয়ে ব্যাঙ পরিবারের বাস। মা-বাবা পোকা-মাকড় ধরে ওদের খেতে দেয়, ওরা মজা করে খায় আর কচুপাতার ওপরে লাফিয়ে লাফিয়ে গান গেয়ে নাচে। সুখী একটা পরিবার ওদের। এখন অঘ্রাণ মাস। কুঝুর মনখারাপের দিন, কারণ এ সময় বৃষ্টি হয় না। বৃষ্টি মানেই কু আর ঝুয়ের জন্য উৎসব। গত বর্ষাকালের কথা মনে করে ঝু বলে- তোর মনে আছে কু, বৃষ্টিকালে আমরা কত মজা করেছিলাম! বৃষ্টির কথা মনে পড়তেই আনন্দ ধরে না কু’র মনে। কু বলে- বৃষ্টির ফোঁটা আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে যখন বিশ্বাস-বাড়ির ঘোমটা টানা বউটার মতো হেঁটে যাচ্ছিল, তুই তখন সেই বউয়ের ওপরে পা ফেলে-ফেলে হাঁটতে চাইছিলি- বোকার হদ্দ একটা। তোর পা ফেলোর আগেই বৃষ্টির ফোঁটা মাটিজলে মিলিয়ে গেল- হিহি। আচ্ছা বাদ দে-না বৃষ্টিকালের কথা। চল আমরা মাঠে যাই। মা বলেছে এখন অঘ্রাণ মাস, এ সময় মাঠে হলুদ রঙের পাকা পাকা ধান থাকে। আমরা চল ধানগাছের মধ্যে খেলি গিয়ে। ঘর পেরিয়ে মাঠের মধ্যে অনেকটা দূর চলে যায় ওরা। মাঠজুড়ে সোনালি রঙের ধান। ওরা খুশি হয়। কু বলে, দেখ ঝু ধানের কি মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ। ওরা দেখে- বিশ্বাস বাড়ির মানুষ শিশুরাও মজা করছে পাকা ধানে হাত ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে। ঝু লাফ দিয়ে ধান গাছের ওপরে উঠতে চায়- তা দেখে ফিক করে হেসে ওঠে কু, বলে- তুই খুব বোকা ঝু, দেখছিস না ধানগাছের পাতা কেমন সরু সরু, এটা আমাদের বসার উপযোগী নয়। চল আমরা ধানক্ষেতের মধ্যে গিয়ে খেলি। ওরা ধানক্ষেতের আল দিয়ে খেলে বেড়ায়। মাটি মাখামাখি করে মানুষ শিশুদের দেখাদেখি। এবার কু বলে, চল পাশের বাড়ির পুকুরে যাই, ওখানটায় অনেক মজা! কু-ঝুকে এতক্ষণ নজরে নজরে রেখেছিল একটি ধোড়া সাপ। অনেকদিন ধরেই সে ওদের ধরার চেষ্টা করছিল, কিন্তু বাগে পাচ্ছিল না। আজ তোদের মজা দেখাবো- বলে মনে মনে খুশি হয় সে। ধীর গতিতে পুকুরধারের ঝোঁপের মধ্যে গিয়ে লুকোয়। কু-ঝু হেঁটে লাফিয়ে পুকুরে নেমে যায়। এখন এক ডুবে পুকুরের মাঝামাঝিতে চলে যেতে পারে ওরা। কু ডুব দেয় আর ঝু সাঁতার কাটে। কু হঠাৎ আতঙ্কিত কণ্ঠে বলে, দেখ ঝু পুকুরের কিনার দিয়ে হলুদ মতো কী যায় ওটা? ঝু চমকে তাকিয়ে দেখে বলে, এই....রে, এযে দেখি ধোড়া সাপ। আমাদের দিকেই এগিয়ে তেড়ে আসছে! এখন কী হবে! ওরা প্রাণপণে ছুটতে থাকে। ওদের দেখাদেখি টেংড়া, পুটি, খলিসা, দাঁড়কিনি ওরাও ছোটে। প্রাণ ভয়ে ওরা ডুব দিয়ে পুকুরের জলের তলায় গিয়ে লুকোয়। লুকানোর আগেই কু এর কাছাকাছি এসে পড়ে সাপটা, বলে- এবার পেয়েছি তোদের, আমি খুবই ক্ষুধার্থ এখনই তোদের খাব। কু-ঝু কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, আমরা তো তোমার কোন ক্ষতি করিনি, তাহলে আমাদের খাবে কেন? এটাই নিয়ম, বড়রা ছোটদের খাবে। তাই আমিও তোদের খাব বলে সাপটি হা করে জিহ্বা বের করে। তারপর আরও কিছুটা এগিয়ে কুুয়ের একটা পা ধরে ফেলে। ঝু বোনের দুর্দশা দেখে চিৎকার করে ওঠে। কু ভয়ে প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো হয়। ঝু এর চিৎকার শুনে কোথা থেকে যেন ছুটে আসে একটা শিঙ আর দুইটা কৈ মাছ। শিঙ তার বিষকাঁটা ধোড়াটার গায়ে ফুটিয়ে দেয়। আর কৈ ঝু’কে পিঠের ওপর তুলে নেয়। আরেকটা কৈ পাশে অপেক্ষা করে। কাঁটার খোঁচা খেয়ে ধোড়াটা নিজেকে বাঁচাতে কু এর পা ছেড়ে দিয়ে পালাতে চায়। তখন কৈ বলে, দেখেছিস তো দুষ্ট লোভী সাপ, গায়ের জোরই সবকিছু নয়, আকৃতি মানেই বড় হওয়া নয়। বুদ্ধিই হলো আসল। যা ভাগ, আবার আসলে এমন অবস্থা করব! সাপ লেজ নাড়তে নাড়তে দ্রুত পালিয়ে যায়। অপেক্ষা করা কৈ মাছটা কু’কে পিঠে তুলে পুকুরের কিনারে গিয়ে নামিয়ে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে ওরা ঘরে ফিরে মা-বাবাকে সবকথা খুলে বলে। বাবা বাগান থেকে গাঁদা ফুলের পাতা মুখ দিয়ে থেতো করে কু’য়ের পায়ে লাগিয়ে দেয়। মা বলে, মা-বাবার কথা শুনতে হয়। কোথাও গেলে মা-বাবাকে বলে যেতে হয়। ছোট শিশুদের একা একা কোথাও যেতে নেই। কথা না শুনলে দেখলে তো কী হয়! ঝু বলে, কলাগাছের ঝোঁপেও না? বাবা বলে, না ঠিক তা না, মাকে বলে গেলেই হয়- বলে মুচকি হাসে। আজ পূর্ণিমা। আকাশজুড়ে চাঁদের আলো ঝকমক করছে। মা ওদের বিশ্বাস বাড়ির ছাদে নিয়ে এসেছে চাঁদের আলো দেখাবে বলে। ব্যাঙ পরিবার শুয়ে শুয়ে চাঁদের আলো দেখে। কু-ঝু ছড়া কেটে বলে- চাঁদের আলোর বৃষ্টি নামে/কু-ঝুর মনে তুষ্টি আনে। অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
×