ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ধ্যা রানীর দারিদ্র্য জয়

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

সন্ধ্যা রানীর দারিদ্র্য জয়

হার না মানা এক জীবন সংগ্রামী নারী সন্ধ্যা রানী। একসময় দারিদ্র্যতার কশাঘাতে অর্ধাহারে অনাহারে বানারীপাড়া সদরের বাসিন্দা সন্ধা রানীর পরিবারে ২৪ ঘণ্টাই সন্ধ্যা নেমে থাকতো। পরবর্তীতে অদম্য ইচ্ছে শক্তি, নিরলস পরিশ্রম ও আত্মপ্রত্যয় সন্ধ্যা রানীর জীবনের দারিদ্র্য নামক অমানিশার ঘোর অন্ধকার কেটে আলোময় করে দিয়েছে। পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই শামুক কুড়িয়ে তা পুড়িয়ে খাবার চুন তৈরি করার কাজে নিয়োজিত হন সন্ধ্যা রানী। এভাবে চুন তৈরি করে তা বিক্রি করে কোনভাবে চলতো তাদের সংসার। ২০০০ সালে সন্ধ্যা রানী বানারীপাড়া পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের বিডিএস পরিচালিত ‘করবী’ মহিলা সমিতিতে ভর্তি হয়ে প্রথমে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চুন প্রস্তুতের পরিধি বৃদ্ধি করেন। এরপর আর সন্ধ্যা রানীকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিডিএস থেকে ধাপে ধাপে ঋণের সিলিং বৃদ্ধি করতে থাকেন। সেই সঙ্গে কারখানায়ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করেন। সন্ধ্যা রানী বিডিএস থেকে ১৬ দফায় ৭ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। বর্তমানের তার ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ চলমান রয়েছে। বর্তমানে সন্ধ্যা রানীর তিন পুত্র ও স্বামী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চার হাজার শামুকের বর্তমান বাজার মূল্য পাঁচশত টাকা যা পোড়ালে ৪০ কেজি গুঁড়া তৈরি হয়। ৪০ কেজি শামুক গুঁড়ার মূল্য ১২ শত টাকা। ৪০ কেজি গুঁড়া গুলিয়ে ২০০ কেজি খাবার উপযোগী চুন তৈরি করা যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫০০ টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০ কেজি শামুক গুঁড়া বিক্রি করে প্রায় আট শত টাকা লাভ থাকে। সন্ধ্যা রানী জানান, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মন খাবার উপযোগী চুন প্রস্তুত করা সম্ভব হয়। যা থেকে লাভ থাকে প্রায় তিন হাজার টাকা। সন্ধ্যা রানীর আর্থিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয়। ইতোমধ্যে তিনি পূর্বের জরাজীর্ণ বসত ঘর ভেঙ্গে একটি বড় ধরনের আধাপকা ভবন নির্মাণ করেছেন। কারখানার যন্ত্রপাতি ক্রয় ও শামুক পরিবহনের জন্য বড় ধরণের ট্রলার ক্রয় করেছেন। বিডিএসএ তিনি নিয়মিত সঞ্চয় জমা করছেন। ব্যাংকেও রয়েছে তার ডিপিএস। সন্ধ্যা রানী এলাকায় একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার কারখানায় পরিবারের পাঁচজন ছাড়াও খ-কালীন চার শ্রমিক কাজ করছেন। সন্ধ্যা রানীর এ সাফল্য সম্পর্কে বিডিএসএর বানারীপাড়ার সিনিয়র শাখা ব্যবস্থাপক এটিএম মোস্তফা সরদার বলেন, কঠোর পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দারিদ্র্য জয়ী সন্ধা রানীকে আজকের এ অবস্থানে এনেছে। -খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে
×