ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলতলার পাঁপড় পল্লী

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

ফুলতলার পাঁপড় পল্লী

খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহিগ্রাম। এই গ্রামের শতাধিক মানুষের ব্যবসা হচ্ছে পাঁপড় বানিয়ে বিক্রি করা। অনেকে পৈত্রিক পেশা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামটির যে অংশে পাপড় তৈরি করা হয় সেই এলাকাটি ফুলতলার ‘পাঁপড় পল্লী’ হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখানকার পাঁপড় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পাঁচ শতাধিক মানুষ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং গৃহিণীরাও পাঁপড় তৈরির কাজে যুক্ত হয়ে পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছে। পাঁপড় মুখরোচক একটি খাবার। ফুলতলার এই পল্লীতে ডালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে কাঁচা পাঁপড় তৈরি করে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়। ফুলতলা ও দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ক্রেতারা এখানকার পাঁপড় কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রি করে থাকেন। খুচরা ক্রেতারা কিনে নিয়ে তা দোকানে, রাস্তার ধারে বা কোন অনুষ্ঠান স্থলের কাছে বসে তেলে ভেজে তা বিক্রি করেন। উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে নানা পর্যায়ে বহু মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অল্পপূঁজির এ ব্যবসাটি ফুলতলার পাঁপড় পল্লীতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন করতে না পারলেও যারা একবার এর সঙ্গে জড়িয়েছেন তারা ভিন্ন কোন চিন্তাও করছেন না। মোটামুটি খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা যায় এমন লক্ষ্য নিয়েই তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। যদিও কেউ কেউ বলছেন, সরকারী সহযোগিতা এবং স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা পেলে তারা এ ব্যবসাটিকে বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে নিতে পারতেন। স্বল্পপূঁজির এ ব্যবসাটির জন্য পৃথক জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়িতে বসেই এ ব্যবসা করা যায়। পাপড়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত না হলেও এটি যে কোন ক্ষতিকর খাবার নয় এমনটি বলছেন স্বাস্থ্যবিভাগ। দক্ষিণডিহি গ্রামের আনন্দ দত্ত বলেন, বাবার ব্যবসা থেকেই তিনি এ ব্যবসায় এসছেন। তার ঠাকুরদাদাও এই ব্যবসা করতেন। ডালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে লাভ কিছুটা কম হয়। বিকল্প কিছু করার সুযোগ না থাকায় এ ব্যবসায়ই পড়ে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পাপড়ের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আবার ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রতিযোগিতার মার্কেটে শুধুমাত্র এ ব্যবসায় টিকে থাকা অসম্ভব। গৃহিণী, স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়েরাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করছে। মনিরুল ইসলাম বলেন, পাঁপড় ব্যবসার মাধ্যমে অনেক নারী শ্রমিক অর্থ আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। তবে এ ব্যবসার অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে তিনি পুলিশী হয়রানিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভ্যানযোগে উৎপাদিত পাঁপড় বাজারে নেয়ার সময় পথে পথে পুলিশী হয়রানি হতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা মধুসূদন জানান, দীর্ঘ চার দশকেরও অধিক তিনি এখানকার পাঁপড় ব্যবসা দেখছেন। বছরের পুরো সময় জুড়ে ৫০ থেকে ৫৫ জন ব্যবসায়ী তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন। তবে মৌসুমে এই সংখ্যা শতাধিক হয়ে যায়। আর এর সঙ্গে বিভিন্নভাবে যুক্ত পাঁচ শতাধিক মানুষ অর্থ আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। কলেজ ছাত্রী ইয়াসমিন জানান, পড়া লেখার ফাঁকে ফঁকে তিনি পাঁপড় তৈরির কাজ করেন। এতে তার লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি বাবার সংসারের কিছুটা সহায়তার সুযোগ হয়। এমনিভাবে অনেকেই গৃহস্থালি বা পড়াশোনার পাশাপাশি পাঁপড় তৈরি করে বাড়তি অর্থ আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। -অমল সাহা, খুলনা থেকে
×