ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুখিকচু আবাদে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

মুখিকচু আবাদে কৃষকের মুখে হাসি

শ্রম ও উৎপাদন খরচ যেখানে স্বল্প, সেখানে ফলন বেশি হওয়ায় কৃষি ও খাদ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল শেরপুরে এবার মুখিকচু নামে ‘সাদা সোনা’র আবাদ কৃষকের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে বা বেলে-দোআঁশ মাটিতে ওই সাদা সোনা বা মুখিকচু চাষ করে নকলা উপজেলার কৃষকরা এখন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। একদিকে যেমন খরচের তুলনায় ৩ গুণ লাভ পাওয়ায় এ জাতের এ সবজি চাষে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে, অন্যদিকে তেমনি স্থানীয়ভাবে মুখী কচুর আবাদও বাড়ছে দ্বিগুণ হারে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, অঞ্চলভেদে বিভিন্ন জাতের মধ্যে মুখী কচুর আবাদ হয়। ওইসব জাতের মধ্যে সাধারণত মৌখিক, লতিরাজ, মান ও জাতি কচু বেশি চাষ করা হলেও নকলায় মুখি কচুর প্রভাব লক্ষ্য করার মতো। প্রায় ৩ গুণ লাভের মুখী কচুর চাষ গেল বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। গেল বছর এ উপজেলায় চাষ হয়েছিল মাত্র ৭০ হেক্টর জমিতে। আর এ বছর তা বেড়ে প্রায় দেড় শ’ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। উপজেলার বানেশ্বরদী, টালকী, পাঠাকাাঁ, চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, নকলা ও গনপদ্দি ইউনিয়নসহ পৌরসভার ধুকুড়িয়া, লাভা, গড়েরগাঁও এলাকার জমি অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং মাটি দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ থাকায় ওইসব এলাকায় মুখি কচু বেশি চাষ করা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে ওইসব এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুখি কচু চাষ খুবই লাভজনক। সাধারণত চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মুখির বীজ লাগাতে হয়। প্রতি বিঘাতে ৮০ থেকে ১শ’ কেজি বীজ লাগে। বপনের মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই কচুর ফলন ঘরে তোলা যায়। কাঠা প্রতি (৫ শতাংশ) কচুর ফলন হয় ১২-১৩ মণ। এক কাঠা জমিতে কচু আবাদ করতে খরচ হয় মাত্র এক/ দেড় হাজার টাকা। আর প্রতিমণ কচু বিক্রি হয় ৭-৮শ’ টাকা। কচু চাষে কেবল লাভ আর লাভ। কৃষকরা বলেন, কচু বিক্রি করতেও তেমন কষ্ট হয় না। বাজারে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাইকাররা কচু কিনে। এ কচু চাষ করায় চরের জমিতেও এখন তারা ৩ টি ফসলের আবাদ করতে পারছেন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বর্ষাকালের সবজি হিসেবে মুখি কচু খুবই জনপ্রিয়। কচুতে পুষ্টির মাত্রাও অনেক। যে কারণে বাজারে এর চাহিদাও প্রচুর। এ সময় বাজারে অন্য জাতের তেমন সবজি থাকে না বলে মুখি কচু বিক্রি করতে তেমন বেগ পেতে হয় না। পূর্ব লাভা এলাকার শাহাদৎ হোসেন জানান, প্রতি বিঘাতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে ৫৫ থেকে ৬৫ মণ মুখি পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এতে বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। তার মতে, দুই-তিন বিঘা জমিতে মুখি কচু চাষ করে ৪ মাসেই লাখপতি হওয়া সম্ভব। বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী এলাকার কৃষক আমীর আলী জানান, মুখি কচুর চাষ প্রচুর লাভজনক। আমাদের এ অঞ্চলে যেদিকে তাকাবেন, সেদিকেই মুখী কচুর আবাদ দেখতে পাবেন। চন্দ্রকোণার মোক্তার আলী বলেন, ৭-৮ বছর ধইরা আমাদের এলাকায় এই কচুর আবাদ শুরু হয়েছে। মুখি কচু আবাদে খরচ কম, তেমন পরিশ্রমও নেই, লাভও বেশি। এ কারণে আমাদের এলাকায় মুখি কচুর আবাদ দিন দিন বাড়ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, মুখি কচুর আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষি অফিস থেকে স্থানীয় কৃষকদের নিয়মিত পরামশসহ কোন কোন ক্ষেত্রে সহায়তাও দেয়া হচ্ছে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে, বেলে-দোআঁশ মাটিতে বিশেষ করে পতিত জমিতে কচু মুখি চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে বাড়ছে আবাদও। এলাকার কৃষকের ভাগ্য পাল্টাতে মুখি কচু নতুন মাত্রা যোগ করায় এটিকে এখন অনেকেই ‘সাদা সোনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। -রফিকুল ইসলাম আধার শেরপুর থেকে
×