ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সম্প্রসারিত হয়নি শিল্প ॥ সঙ্কটে রাজশাহী বিসিক

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

সম্প্রসারিত হয়নি শিল্প ॥ সঙ্কটে রাজশাহী বিসিক

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী বিসিক এখনও সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে। পর্যাপ্ত গ্যাস সঙ্কটের কারণে এখনও সম্প্রসারিত হতে পারেনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন এবং বিকাশ। সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সঙ্কট কাটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিসিকে স্লিøপ প্লট রয়েছে ৪২৫টি। এতে গড়ে উঠেছে ২০৪ শিল্প ইউনিট। এর মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র ১৯৭ ইউনিট। এছাড়া তিনটি রুগ্ণ, দুটি বাতিল এবং দুটি শিল্প ইউনিট নির্মাণাধীন। এখানে রয়েছে খাদ্যজাত শিল্প ৬৪টি, বস্ত্রজাত শিল্প ৬০টি, ভেষজ ও রসায়ন শিল্প ২৮টি, প্রকৌশল শিল্প ৩৬টি, বনজ শিল্প ৩টি, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং শিল্প একটি এবং বিবিধ শিল্প ৫টি। বিসিকে রফতানিমুখী শিল্প রয়েছে তিনটি। সবমিলিয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এতে কর্মরত চার হাজার ৫১৮ পুরুষ এবং ৩ হাজার ৭৯২ নারী কর্মী। তবে এখন পর্যন্ত গ্যাস সংযোগের কারণে পিছিয়ে রাজশাহী বিসিক। এ পর্যন্ত সংযোগ পেয়েছে এখানকার মেসার্স তাসকিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স, রুচিতা এগ্রো এ্যান্ড ডেইরি ফুড, মেসার্স পলাশ মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেসার্স রিজেন্ট এ্যালুমিনিয়াম, মেসার্স বিশাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ও রাজশাহী মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যান্ড রিপিয়ারিং ওয়ার্কশপ। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির সূত্র জানায়, সংযোগের অপেক্ষায় রয়েছে রাজশাহী বিসিক শিল্প এলাকার মডার্ন প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এমএইচ ফুড এ্যান্ড বেভারেজ, জাহিদ এ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাণ এগ্রো লিমিটেড, এ্যারোমা ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, সাকোয়া টেক্স লিমিটেড। শীঘ্রই এসব শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন পিজিসিএল রাজশাহী আঞ্চলিক অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আফম আজাদ কামাল। তিনি বলেন, গ্যাসের জন্য নতুন আবেদন করা ১২ শিল্প প্রতিষ্ঠানের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট কমিটি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। তবে সঙ্কট সত্ত্বেও জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে রাজশাহী বিসিক। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রাজশাহী বিসিকে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হয়েছে ২৮৭ কোটি ৮২ লাখ টাকার। সেবার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ৭ দশমিক ৭ কোটি ৩৭ লাখ। স্বাধীনতার আগে ১৯৬১ সালে ৯৬ দশমিক ৩৩ একর এলাকায় রাজশাহী বিসিক প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি এখনও। শিল্প এলাকার অধিকাংশ রাস্তা এখনও ভাঙ্গাচোরা। আবার একটি এলাকায় রাস্তাই নেই । যত্রতত্র ময়লার স্তূপ, ড্রেনেজ ব্যবস্থারও বেহাল দশা। শিল্প প্লটের প্রবেশ পথের অবস্থাও করুণ। অভিযোগ রয়েছে, বিধি অমান্য করে শিল্প প্লটে গড়ে উঠছে বসতি। নজরদারিতে নেই পর্যাপ্ত জনবল। প্রায় অর্ধশত প্লটে আবাসিক ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছে লোকজন। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের উচ্ছেদে নীরব কর্তৃপক্ষ। বিসিক সূত্র জানায়, এখনও তথ্য কর্মকর্তা ও স্টেট কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে লোকবল নেই। ১৯৯০ সালের পর থেকেই সব ধরণের নিয়োগ বন্ধ। প্রয়োজনের তুলনায় নেই বরাদ্দ। বিষয়টি স্বীকার করেন বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, আইনী জটিলতায় আবাসিক হিসেবে শিল্প প্লট ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ আটকে আছে। এছাড়া জনবল সঙ্কট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে নজরদারি। তিনি আরও বলেন, দেশের অন্যান্য বিসিক শিল্প এলাকার চেয়ে রাজশাহীর অবস্থা অনেক ভাল। জনবলসহ বেশকিছু সঙ্কট এখনও রয়ে গেছে। তবে এ বছর সড়ক সম্প্রসারণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে, এরই মধ্যে রাজশাহী বিসিক শিল্প নগরী-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ৫০ একর জমির ওপর ১২৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর কেচুয়াতৈল, উজিরপুর ও ললিতাহার মৌজায় গড়ে উঠছে এ শিল্প নগরী। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবার কথা এ কাজ। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী আজাহারুল ইসলাম বলেন, নতুন এ শিল্প এলাকায় ২৯৬টি প্লট থাকবে। এর মধ্যে এসএমই স্থাপিত হবে আড়াই শ’টি। এতে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫ হাজার লোকের। প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে অনেকদূর বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। রাজশাহী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে কম মূল্যের জমি ও সুলভ শ্রমিক রয়েছে। তা সত্ত্বেও এতদিন বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্তরায় ছিল শিল্পে গ্যাস সংযোগ। এখন সেই সঙ্কট কেটেছে। তবে এখনও প্রকট হয়ে রয়েছে যোগাযোগ সমস্যা। পণ্য আনা-নেয়ার জন্য রেল, নৌ এবং আকাশপথের যোগাযোগও সৃষ্টি করতে হবে। উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের এসব দাবি দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষিত। এ অঞ্চলের শিল্প বিকাশে বিসিক কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
×