ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংবিধান সংশোধনে আত্মবিশ্বাসী আবে

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

সংবিধান সংশোধনে আত্মবিশ্বাসী আবে

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে শুক্রবার বলেছেন, তিনি দেশটির শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। গত মাসে নির্বাচনে বিশাল জয় পাওয়ার পর আবে নতুন সরকারের নীতি নির্ধারণী বক্তৃতা দিতে গিয়ে একথা বলেন। এএফপি ও ওয়েবসাইট। গত মাসে জাপানে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আবের নেতৃত্বাধীন জোট ৪৬৫ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এর ফলে আবে এখন তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে গেছেন। নব গঠিত পার্লামেন্টে প্রথম ভাষণ দিতে গিয়ে আবে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে বিতর্ক শুরুর কাজ এখন যেকোন সময়ই করা যায়। সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে জাপানের জনমত মূলত দ্বিধা বিভক্ত। কবে এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে, শুক্রবারের নীতি নির্ধারণী বক্তৃতায় তিনি সে সম্পর্কে কিছু বলেননি। বিষয়টি নিয়ে তিনি ধীরে এগোতে চান বলে আগে বলেছিলেন। আবের মতো দেশটির জাতীয়তাবাদী ভাবধারার লোকজনের কাছে শান্তিবাদী সংবিধান একটি অবমাননাকর বিষয়। আগ্রাসী শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর জাপানের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। এতে জাপানকে একটি পূর্ণ সামরিক শক্তির অধিকারী হওয়ার সুযোগ খর্ব করা হয়েছিল। দেশটির সুসজ্জিত ও সুপ্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী মূলত আত্ম প্রতিরক্ষাবাহিনী হিসেবে পরিচিত। তারা নিজের থেকে কোন অভিযানে যেতে পারে না। সংবিধানের যে ধারা বলে জাপানের সশস্ত্র বাহিনীকে স্বেচ্ছায় সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রেখেছে তাতে পরিবর্তন আনতে চান আবে। তিনি চান তার দেশ প্রয়োজনে যুদ্ধ শুরু করার অধিকার ফিরে পাক। তবে দেশটির অধিকাংশ নাগরিক তাদের শান্তিবাদী সংবিধান নিয়ে সন্তুষ্ট এবং এতে আশু কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করে না। তবে উত্তর কোরিয়া সাম্প্রতিক সময়ে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে চলায় জাপানের অনেকেই এখন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। শান্তিবাদী সংবিধান পরিবর্তন আনা দেশটির যে কোন সরকার প্রধানের জন্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই নয় আঞ্চলিক রাজনীতির ওপরও এর প্রভাব পড়বে। দুই নিকট প্রতিবেশী চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। এই ঘটনা তাদের জাপানের অতীত আগ্রাসনের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। শুক্রবারের বক্তৃতায় আবে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান এখন সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। শান্তিবাদী সংবিধান পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি তিনি নির্বাচনের আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। উত্তর কোরিয়ার সৃষ্ট উত্তেজনাকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে তিনি নির্বাচন এগিয়ে আনেন এবং সফল হন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আবের বাড়তি জনপ্রিয়তার একটি কারণ বলে মনে করা হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প এশিয়ায় দীর্ঘ সফরে এসে প্রথমে জাপানে যান। সেখানে তিনি চীনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘জাপানীরা যোদ্ধা জাতি। উত্তর কোরিয়া ইস্যুটি ঠিকমতো সামাল দেয়া না হলে জাপান প্রয়োজনে নিজের থেকে ব্যবস্থা নিতে পারে।’ উত্তর কোরিয়া এ বছর জুলাইতে দুটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ- পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম বলে ধারণা করা হচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার দুটি পরীক্ষাধীন ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে। এদিকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু উত্তেজনা নিরসনের জন্য শুক্রবার সিউলে দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন আলোচকরা বৈঠক করেছেন। উভয় পক্ষই এ সঙ্কট শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক উপায়ে নিরসনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খবরটি দিয়েছে।
×