ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে সিদ্দিক মুন্সীকে হত্যা করা হয়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে সিদ্দিক মুন্সীকে হত্যা করা হয়

গাফফার খান চৌধুরী ॥ আর্থিক লেনদেনের সূত্রধরে ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে বনানীতে ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনাটি ঘটে বলে সার্বিক পর্যালোচনায় অনেকটাই নিশ্চিত তদন্তকারীরা। পারিবারিক বিরোধের জেরে হত্যাকা-ের যোগসূত্র থাকার তেমন কোন তথ্য মেলেনি। নিহত ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিরোধ থাকা ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। হত্যাকা-টি পরিকল্পিতভাবে পেশাদার খুনীদের দিয়ে কোন গোষ্ঠী বা ব্যক্তি ঘটিয়েছে বলেও তদন্তকারীরা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আশা করছে তদন্তকারীরা। গত ১৪ নবেম্বর রাতে ঢাকার বনানী বি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর বাসার নিচতলায় এমএস মুন্সী ওভারসিসে ঢুকে চার মুখোশধারী সন্ত্রাসী গুলি চালিয়ে এজেন্সির মালিক মোঃ সিদ্দিক হোসেন মুন্সীকে (৫৫) হত্যা করে। ঘটনার সময় গুলিবিদ্ধ হন মির্জা পারভেজ (৩০), মোখলেছুর রহমান (৩৫) ও মোস্তাফিজুর রহমান (৩৯) নামে তিন কর্মচারী। আহতদের কাছ থেকে জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে নিহত ব্যবসায়ীর পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে তদন্তকারীরা। এ ঘটনায় ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী বায়েজিদ বাজি ও অফিস স্টাফ আলী হোসেনকে বনানী থানা হেফাজতে রেখে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, হত্যাকা-ে সরাসরি চার জনের অংশ নেয়ার বিষয়টি সিসি ক্যামেরা ছাড়াও অন্যান্য মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া হত্যাকারীদের কে কে কিভাবে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে সহায়তা করেছে তা জানার চেষ্টা চলছে। হত্যাকা-ে জড়িত চার মুখোশধারীর পরিচয় জানার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হত্যার পর অবলীলায় হেঁটে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে খুনীদের। হত্যাকারীরা যে পেশাদার, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর্থিক লেনদেনের সূত্রধরে ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবসায়িক বিরোধ কাদের সঙ্গে ছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে। সার্বিক পর্যালোচনায় হত্যাকারীরা ওভারসিসের মালিককে হত্যা করতে ঢুকেছিল বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যরা ঘটনাচক্রে আহত হয়েছেন। তাদের আহত বা হত্যার কোন টার্গেট ছিল বলে মনে হয় না। হত্যার মোটিভ ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে ঘটনার পর ড্রয়ার খুলে টাকা নিয়ে যেতে পারে হত্যাকারীরা। স্বল্প সময়ের মধ্যেই হত্যা রহস্যের কিনারা হবে বলে আশা করছি। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যবসায়ী কাদের সঙ্গে ব্যবসা করতেন, তাদের সঙ্গে কত দিনের ব্যবসা ছিল, কত টাকার লেনদেন ছিল, কি পরিমাণ টাকা কার কাছে কার বকেয়া বা পাওনা ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। এজন্য অফিসের নানা ফাইলপত্র ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। হত্যাকা-ের ঘটনায় নিহত ব্যবসায়ী সিদ্দিকের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে বনানী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহত ব্যবসায়ীর স্ত্রী আর দুই মেয়ে সাবরিনা সুলতানা ও সাবিহা সিদ্দিক এবং ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কের একটি বাসায় বসবাস করছিলেন। বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানা এলাকায়। ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আব্দুল আহাদ জনকণ্ঠকে জানান, আর্থিক লেনদেনের বিষয়াদির জেরধরে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে হত্যাকা-টি ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হত্যাকারীদের চেহারা অস্পষ্ট থাকায়, তাদের শনাক্ত করতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। সিআইডিসহ অন্যান্যদের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। হত্যাকারীরা নিহত ব্যবসায়ীর পূর্ব পরিচিত হওয়াটা বিচিত্র নয়। যে বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে, সেই বাড়ির দুইটি সিসি ক্যামেরা বন্ধের যৌক্তিক কারণ জানারও চেষ্টা চলছে। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্যের কিনারা হবে।
×