ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ নবেম্বর থেকে কলেজে শিক্ষক ধর্মঘটের হুমকি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

২৫ নবেম্বর থেকে কলেজে শিক্ষক ধর্মঘটের হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী থেকে সরকারী হওয়া কলেজশিক্ষকদের ‘বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে’ অন্তর্ভুক্তির ঘটনা নিয়ে শেষ পর্যন্ত অস্থিরতার দিকেই যাচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। ওই শিক্ষকদের নন-ক্যাডার করা ও তাদের চাকরি স্ব-স্ব কলেজে সীমাবদ্ধ রাখার দাবিতে শুক্রবার রাজধানীতে আয়োজিত শিক্ষক মহাসমাবেশ থেকে বৃহত্তর কর্মসূচীর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সরকারী কলেজশিক্ষকরা। ধারাবাহিক কর্মসূচীর পর আল্টিমেটামের শেষ দিনে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) আয়োজিত মহাসমাবেশে শিক্ষকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যৌক্তিক এ দাবি পূরণ না হলে দেশের সব সরকারী কলেজে আগামী ২৫ নবেম্বর থেকে তালা ঝুলতে পারে। লাগাতার ক্লাস বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃবৃন্দ। এদিকে দেশের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষা বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মহলের দাবির পরও যোগ্যতার বিচারের প্রশ্নবিদ্ধ বেসরকারী শিক্ষকদের ‘বিসিএস ক্যাডার’ করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশের সরকারী কলেজ অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে। দ্রুত এ সঙ্কটের সমাধান না করা হলে কলেজগুলোতে পাঠদান বিঘিœত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে ঢাকা বিভাগীয় মহসমাবেশ করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা। সমাবেশে শিক্ষক নেতারা বলেন, আমরা কলেজ জাতীয়করণের বিপক্ষে নই। কিন্তু জাতীয়করণ করা কলেজশিক্ষকদের বিসিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীণ না হলে তাদের ক্যাডারভুক্ত করা যাবে না। শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী কলেজ জাতীয়করণের পর নিয়োগ করা শিক্ষকদের জন্য নতুন বিধিমালা করতে হবে। জাতীয়করণের এই সমস্যার ফলে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে, শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা চাই নতুন নিয়োগকৃত শিক্ষকদের জন্য নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। জাতীয়করণ করা কলেজের নন-ক্যাডার শিক্ষকদের নিজ নিজ কলেজ থেকে অন্যত্র বদলি না করার আহ্বানও জানান নেতারা। তারা আরও বলেন, বিসিএস ছাড়া ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করলে শুধু শিক্ষা ক্যাডারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ গোটা দেশের জন্যই হবে এটা ভয়ানক ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত। ‘নো বিসিএস, নো ক্যাডার’ সেøাগানে আয়োজিত এ সমাবেশে সংগঠনের তৃণমূল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দেন তারা। শিক্ষক নেতারা বলেন, বিসিএস ছাড়া ক্যাডার সার্ভিস নয়। জাতীয়করণ, ১০ শতাংশ কোটা, প্রকল্প, প্রদর্শক থেকে বা অন্য কোন উপায়ে শিক্ষা ক্যাডারে কোন ধরনের পার্শ্ব প্রবেশ চলবে না। বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮১-এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোন ব্যক্তিকে ক্যাডারভুক্ত করা যাবে না। আগামী ২৪ নবেম্বর জাতীয় শহীদ মিনারে একই দাবিতে মহাসমাবেশ করবে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। সেখান থেকেই কঠোর কর্মসূচী আসতে পারে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি আইকে সেলিম উল্ল্যাহ খন্দকারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ সংগঠনটির মহাসচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী, সহ-সভাপতি অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আজমতগীর, মনিরা বেগম, ড. মীর মাহফুজুল হক, যুগ্ম-মহাসচিব জীবন কৃষ্ণ মোদক, মাসুদা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ খান রফিকুল ইসলামসহ সংগঠনটির বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা নেতারা। এর আগে জাতীয়করণকৃত কলেজশিক্ষকদের শিক্ষা ক্যাডারে আত্মীকরণের প্রতিবাদে ১৩ অক্টোবর কর্মসূচী ঘোষণা করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা। কর্মসূচী অনুযায়ী সকল বিভাগে সমাবেশ করেন। ১৬ নবেম্বরের মধ্যে জাতীয়করণকৃত কলেজশিক্ষকদের নন-ক্যাডার ঘোষণার আল্টিমেটামও দিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ের মধে দাবি আদায় না হলে পরদিন ঢাকায় মহাসমাবেশ করে লাগাতার কঠোর কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আইকে সেলিমুল্লাহ খন্দকার বলেন, জাতীয়করণ করা কলেজশিক্ষকদের কাডারে অন্তর্ভুক্তি করা হলে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ হাজার শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমাদের ক্ষতি করে কিছুতেই তাদের ক্যাডারভুক্ত করার সিদ্ধান্ত মেনে নেব না। সরকার আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে। আমরা ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করব। ২৪ নবেম্বর সভা করে পরবর্তী কর্মসূচী নির্ধারণ করব। বিসিএস শিক্ষা সমিতির একাধিক নেতা বলেন, জাতীয়করণের ঘোষণা করার সময়েই প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, শিক্ষকরা বদলি হতে পারবেন না। কারণ বদলি না হতে পারা হচ্ছে নন-ক্যাডার কর্মকর্তার বৈশিষ্ট্য। ক্যাডার কর্মকর্তারা বদলি হতে পারেন। তবু বিষয়টিকে জটিল করে তুলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষকরা বলছেন, প্রাধনমন্ত্রীর অনুশাসন, সরকারী চাকরি বিধি-বিধান ও শিক্ষানীতির আলোকে জাতীয়করণ করা শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা না করে আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে গেছে। আমলতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে শিক্ষকরা ক্লাসবিমুখ হয়ে আন্দোলন করছেন। বিষয়টি মীমাংসা করতে সরকার যত বিলম্ব করবে, শিক্ষা তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাল্টাপাল্টি মামলা হবে।
×