ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

’১৮ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হবে

দ্রুত বাড়ছে ইন্টারনেট গ্রাহক, ইতোমধ্যে ৮ কোটি ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

দ্রুত বাড়ছে ইন্টারনেট গ্রাহক, ইতোমধ্যে ৮ কোটি ছাড়িয়েছে

ফিরোজ মান্না ॥ দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আর মোবাইল গ্রাহক (চারটি মোবাইল অপারেটর) মিলে মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৪ কোটি ৭ লাখ ১৩ হাজার। মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়ছে। এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট মিলে দেশে ৭ কোটি ৯২ লাখ ২৭ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ৭ কোটি ৩৮ লাখ ১৭ হাজার। ওয়াইম্যাক্স ৯০ হাজার এবং বাকি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। গত বছর দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল প্রায় ৫ কোটি। এক বছরের ব্যবধানে ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে প্রায় তিন কোটি। ২০১৮ সালের মধ্যে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। বিটিআরসি সূত্র জানায়, দেশে মোবাইল গ্রাহক যেমন বাড়ছে তেমনি ইন্টারনেট গ্রাহকও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মোবাইল গ্রাহকের তুলনায় ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি। ওয়্যারলেস বা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অপারেটরদের দেয়া ৯০ দিন সক্রিয় থাকা গ্রাহকদের তথ্য নিয়ে পরিসংখ্যান তৈরি করেছে বিটিআরসি। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ৭ কোটি ৩৮ লাখ ১৭ হাজার, ওয়াইম্যাক্স ৯০ হাজার এবং আইএসপি ও পিএসটিএন ৫৩ লাখ ২১ হাজার। মোবাইল গ্রাহক সংখ্যার পরিসংখ্যানে বিটিআরসি বলেছে, মোবাইল অপারেটর হিসাবে সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোন। এই অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৩৮ লাখ। রবি’র সঙ্গে এয়ারটেল মিলে রবি’র গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ১২ লাখ ১১ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ২৩ লাখ ৭৯ হাজার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৪১ হাজার। এদিকে, ২০১৮ সালে মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্বিগুণ হবে। এতে ব্যান্ডউইথ (ইন্টারনেট একক) ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়বে আড়াইগুণ। পরিমাণের দিক থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার হবে এক টেরাবাইট। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির (বিএসসিসিএল) এমডি মশিউর রহমান জানান, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশন। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযুক্ত হওয়ায় দেশে অতিরিক্ত ১ হাজার ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে এই কেবলের মাধ্যমে আরও ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ৪শ’ জিবিপিএসের বেশি। এই ৪শ’ জিবিপিএসের মধ্যে ১২০ জিবিপিএস বিএসসিসিএলের প্রথম সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আসছে। বাকি ২৮০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আইটিসির মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বিএসসিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে কুয়াকাটা-ঢাকা ব্যাকহোল লিংক স্থাপন হয়েছে। তবে ব্যাকহোল লিংক স্থাপনের কাজে নানান প্রশ্ন রয়েছে। ব্যাকহোলের কেবল মাটির নিচ দিয়ে না নিয়ে অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে আনা হয়েছে। এতে ওই কেবল মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এরপরও বিএসসিসিএল ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ টেস্টিং কাজ শেষ করেছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশনের ট্রান্সমিশন লিংক স্থাপনের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা তিনি বলতে পারেননি। তবে কাজ যাতে দ্রুত শেষ করা যায় সেই চেষ্টায় করা হচ্ছে। ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি) জানিয়েছে, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় দেশ ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। একটি কেবল কোন কারণে বিকল হলে অন্য কেবলটি ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করবে। দেশে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা থাকবে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজকর্মে গতি বাড়বে। দেশে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে বলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোপাইডররা (আইএসপি) মনে করছেন। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল দেশের মানুষের কাছে একটি বড় সুখবর। এই কেবল দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগের একটি সাবমেরিন কেবলে থাকায় কোন কারণে কাটা পড়লে ইন্টারনেট সেবায় বিঘœ ঘটত। তখন ভারত থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হতো। দ্বিতীয় সাবমেরিনে যুক্ত হওয়ার ফলে এখন একটা ব্যাকআপ তৈরি হলো। প্রতিটি সাবমেরিন কেবলের লাইফ টাইম ১০ থেকে ১৫ বছর। এখনই উচিত তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের চিন্তা করা। ভারত অন্তত ২০ সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিশিয়া, আলজিরিয়া ও ফ্রান্স। সি-মি-উই-৫ কনসোর্টিয়াম সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিয়ে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মালিকও দ্বিতীয় কনসোর্টিয়ামের সদস্য দেশগুলো। উল্লেখ্য বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের পরিমাণ প্রায় ৪২১ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড)। এর মধ্যে সরকারী পর্যায়ের ১৬০ ও বেসরকারী পর্যায়ের ২৬০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ স্থাপন হওয়ায় ইন্টারনেট বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। এখান থেকে বিদেশেও ব্যান্ডউইথ রফতানি করা যাবে। গত বছর থেকে ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানি হচ্ছে।
×