ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থায়নের জট খুলেছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

অর্থায়নের জট খুলেছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে

আনোয়ার রোজেন ॥ পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তির অনিশ্চয়তা কেটেছে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে অর্থায়নের বিষয়ে ‘গ্রীন সিগন্যাল’ দিয়েছে চীন। দীর্ঘদিন বিভিন্ন চিঠি চালাচালি এবং জটিলতার অবসান হওয়ায় আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে এ চুক্তি। এখনও তারিখ চূড়ান্ত না হলেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানিয়েছে, আর কোন জটিলতা নেই। চলতি নবেম্বরেই চুক্তি সইয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল ইআরডি। কিন্তু চীনের তরফে কিছুটা সময় চাওয়ায় চুক্তিটি হবে ডিসেম্বরে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসাবে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা দেয়ার কথা চীন সরকারের। বাকি ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। জানতে চাইলে ইআরডির চীন ডেস্কের উপ-সচিব একেএম মতিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, নবেম্বরের মধ্যেই চুক্তি করা সম্ভব ছিল। চুক্তির পেপারওয়ার্কসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজের জন্য চীন আরও কিছুটা সময় চেয়েছে। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি, ডিসেম্বরেই চুক্তিটি হয়ে যাবে। চলতি অর্থবছর যে ৮টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা চীনকে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে এ প্রকল্পটিও রয়েছে। তিনি জানান, সম্প্রতি চীনের এক্সিম ব্যাংকের বোর্ডসভায় এ প্রকল্পের জন্য ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময়ই প্রকল্পে অর্থায়নে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পরবর্তী সময়ে অর্থায়ন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এজন্য চুক্তির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে যায়। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে সুদ ও শর্তসংক্রান্ত জটিলতা কেটে গেছে বলে জানিয়েছে ইআরডি। আগের ২ শতাংশ সুদেই ঋণ দিতে রাজি হয়েছে চীন। ওই মতেই ফাইন্যান্সিয়াল এ্যাগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এর আগে এ প্রকল্পের ফাইন্যান্সিং এ্যাগ্রিমেন্টের বাণিজ্যিক চুক্তি মূল্যের ৮৫ শতাংশ প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সম্পন্ন হবে- এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদন দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যা পরে চীনা এক্সিম ব্যাংককে অবহিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে চীনা এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়, বাণিজ্যিক মূল্যের ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন এবং ৮৫ শতাংশ পিবিসি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে চীনা এস্টেট কাউন্সিলের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে অর্থায়ন প্রক্রিয়া করতে তিন থেকে ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন এবং ৮৫ শতাংশ পিবিসি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সুদের হার দুইয়ের পরিবর্তে আড়াই শতাংশ হবে। পিবিসি কোটার ক্ষেত্রে চীন সরকারকে ওপেন মার্কেট থেকে প্রদেয় ঋণের অর্থ সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু চীনের একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। পরে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আগের নিয়মানুযায়ী ২ শতাংশ সুদ এবং ৮৫ শতাংশ পিবিসি অর্থায়ন এবং ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চলতি বছর (২০১৭ সাল) প্রকল্পটিতে অর্থায়নের অনুরোধ জানানো হয় বাংলাদেশের তরফে। বাংলাদেশের এ প্রস্তাব গ্রহণ করেছে চীনা এক্সিম ব্যাংক। এবার চুক্তি সইয়ের অপেক্ষা। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে খুলনায় রেলপথের নতুন রুট তৈরি হবে। নতুন রেলপথ দিয়ে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ রেলপথ দিয়ে খুলনায় যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংযোগ প্রকল্পে চারটি সেকশনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ হবে। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আড়াই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করে ২০১৮ সালে পদ্ম সেতু প্রকল্পের দিন থেকে রেল চালুর পরিকল্পনা ছিল। নতুন রুটটি হবে ঢাকা থেকে গে-ারিয়া হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত।
×