ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর হাতে দমন করুন

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

কঠোর হাতে দমন করুন

মঙ্গলবার গভীর রাতে বাগেরহাটের চিতলমারীতে এক হিন্দু দম্পতিকে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারার জন্য দুষ্কৃতকারীরা যে অপচেষ্টা চালিয়েছে তাকে শতমুখে ধিক্কার জানাতে হবে। তাদের হত্যার জন্য বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে ঘরে আগুন দেয়া হয়। আগুনে বসত এবং রান্নাঘরসহ টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকাসহ সব মালামাল সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের ভেতর সান্ত¦¦না এটুকুই যে, ওই দম্পতি শেষ পর্যন্ত প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। তারা প্রতিবেশীর সহায়তায় দরজা ভেঙ্গে বাইরে বের হয়ে আসায় প্রাণ বাঁচতে সক্ষম হন। আগুনে পুড়ে তাদের মৃত্যু হতে পারত। বসতঘর পুড়ে যাওয়ায় এ পরিবারটি এখন খোলা আকাশের নিচেই বসবাস করছে। এ ধরনের বর্বর নৃশংস কাজ কোন মানুষের পক্ষে করা সম্ভব এটি বিশ্বাস হতে চায় না। কোন কোন মানুষের মাঝ থেকে মানবিকতা ও মূল্যবোধ কি হারিয়ে যেতে বসেছে! তারা চরম পথটাই বেছে নিচ্ছে, অর্থাৎ টার্গেট ব্যক্তিকে খুন করছে। সে খুনটাও করছে অত্যন্ত নৃশংস পদ্ধতিতে। গোটা সমাজের সবাই নিশ্চয়ই অসুস্থ হয়ে যাননি। তাই করণীয় রয়েছে বহুকিছু। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকেই উত্তরণের পথ সন্ধান করতে হবে। দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে তৎপর হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে ওই দম্পতির ওপর আক্রমণের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা জরুরী। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে নাকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করে কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সম্পদ-সম্পত্তি দখল করার মনোবাঞ্ছা থেকে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে সেটি সুষ্ঠুভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্ত দম্পতিকে নগদ অর্থসাহায্য করেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘর তৈরির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে চার বান্ডিল ঢেউটিন দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে এই অর্থ ও গৃহনির্মাণ উপকরণ সহায়তা ক্ষতিগ্রস্ত দম্পতির উপকারে আসবে বটে, কিন্তু তাদের মনে যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি হয়েছে সেটি আগে নিরসন করা জরুরী। সে কারণে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। কিছুদিন আগে রংপুরে পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। দেশে সাম্প্রতিককালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। সাম্প্রদায়িক হীন মানসিকতা থেকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর মতো অপরাধ নিঃসন্দেহে গুরুতর। এটি প্রতিরোধের জন্য বিশেষ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। একটি মহল নানাভাবে দেশে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের সার্বিক উন্নতি সাধিত হয়েছে। অপরাধ দমনে আশানুরূপ অগ্রগতিও হয়েছে। সামনে বেশ কয়েকটি নির্বাচন রয়েছে। এমন একটি সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? দেশের মানুষ এখন অনেক ভাল আছে, তাদের জীবনমান বেড়েছে। শ্রমজীবী মানুষের আর্থিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এখন একের পর এক অপরাধী কর্মকা- চালানো হলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে, মানুষের শান্তি বিনষ্ট হবেÑ এমনটাই আশঙ্কা। তাই অপরাধীচক্রকে কঠোর হাতে দমন করতেই হবে। চিতলমারির ঘটনা যাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভেতর কোন রকম ভুল বার্তা না দেয় সেটিও লক্ষ্য রাখা চাই।
×