ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কথিত পীর স্ত্রীকে মারধর করে সন্তানদের রেখে বাড়িছাড়া করলেন

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

কথিত পীর স্ত্রীকে মারধর করে সন্তানদের রেখে বাড়িছাড়া করলেন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ এবার চার নম্বর স্ত্রী চার সন্তানের জননী আছমা বেগমকে (৩০) বেধড়ক লাঠিপেটা করেছে পাষন্ড স্বামী মোঃ আলতাপ হোসেন ওরফে মিন্টু হুজুর। বাড়ি থেকে মারতে মারতে পড়শি শহীদুলের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফের চুলের মুঠি ধরে ধানক্ষেতে ফেলে পেটানো হয়। কিল-ঘুষি-লাথির আঘাত ছিল নির্মম। এমনকি ঘরে এনে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। এ পর্যায়ে অর্ধচেতন অবস্থায় পড়ে থাকে। এ কদিন পরে অসহায় আছমাকে তার দরিদ্র বাবা স্বজনদের সহায়তায় উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। এসময় স্বামী আলতাপ চার সন্তানকেও সঙ্গে নিতে দেয়নি। কাকুতি-মিনতি করেছিল ছোট্ট একমাত্র মেয়ে চার বছরের ইনাকে দেয়ার তাও দেয়া হয়নি। এখন শ্রমজীবী বাবা ইসমাইল হোসেনের ঘাড়ে চিকিৎসাসহ সকল বোঝা চেপে বসেছে। আর অসহায় আছমা হাসপাতালের শয্যায় চোখের পানি ঝরাচ্ছে। বালিয়াতলী ইউনিয়নের দীঘর বালিয়ালী গ্রামের আলতাপ হোসেনের সঙ্গে চাকামইয়ার আছমার বিয়ে হয় অন্তত এক যুগ আগে। আছমা আরও জানান, এর আগেও আলতাপ হেসেন ওরফে মিন্টু হুজুর তিনটি বিয়ে করেছে। আছমা ছিল তার চতুর্থ স্ত্রী। একেক করে সবাইকে সন্তানসহ মারধর করে বাড়ি থেকে সংসার ছাড়া করেছে। এরপরও পঞ্চম স্ত্রী মরিয়মকেও এক ছেলেসহ মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এটি নাকি আলতাপ হোসেনের কৌশল। তিনি কোন স্ত্রীকে তালাকা দেন না। স্বেচ্ছায় স্ত্রীরা তালাক দিয়ে চলে যায়। অথবা বাড়িছাড়া। মোট নয় সন্তান আলতাপ হোসেনের। স্ত্রীর ভাষায়, ‘তার স্বামী পীর সাহেব। হাজার হাজার মুরিদান বানায়। যার মধ্যে মহিলাও রয়েছে। অনৈতিক কাজের অভিযোগ করেন আছমা। এসব কাজে বাধা দেয়া এবং যৌতুক বাবদ নগদ টাকা, গরু, জিনিস (স্বর্ণালঙ্কার) না দেয়ায় তার ওপর এমন নির্দয় নির্যাতন বহুবার হয়েছে। বাবা গরিব বিধায় যাওয়ার কোন স্থান নেই আছমার তাই আলতাপ হোসেনর সংসার জীবন চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে দীর্ঘসময় হয়েছে। তাও ছাড়ার শঙ্কায় পড়েছে। জানান আছমা, বিয়ের এক মাস পর থেকে ফি সপ্তাহে মারধর করত। বহুবার চেয়ারম্যানের কাছে সালিশ বৈঠক হয়েছে। ফের যেই-সেই। আছমা জানান, একবার মারধরে ডান হাতের কনুইয়ের চামড়া উঠে গেছে। পায়ের পাতা ভেঙ্গে দেয়া হয়। মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। তার স্বামী এলাকায় নিজেকে হুজুর হিসেবে জাহির করেন। পানি পড়া, তেল পড়া দেন। মুরিদ বানান। দেশের বিভিন্ন স্থান, বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে বহু লোক আসে। সমস্ত রোগের ফিকিড় দেন। চিকিৎসা করেন। আছমার লিখিত অভিযোগ, তার স্বামী বেদাইতি কায়দায় ধর্মকে বিক্রি করে নিজেকে পীর সাহেব সেজে মহিলা-পুরুষকে মুরিদ করেন। মহিলা মুরিদগণ তাকে রাতে আপত্তিকর কায়দায় খেদমত করে। এসব কাজে বাধা দেয়ায় শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালানো হয় আছমার ওপর। সবশেষ ১৪ নবেম্বর বেলা ১১টায় বেধড়ক মারধর করে বাড়িছাড়া করা হয়। শরীরের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে। এ ঘটনায় আছমা বেগম কলাপাড়া থানায় বৃহস্পতিবার রাতে একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেছেন। তিনি তার স্বামীর সকল কর্মকান্ডকে রহস্যময় উল্লেখ করেছেন। অভিযুক্ত আলতাপ হোসেন বলেন, ‘আমার বদ নসীব। রাগের মাথায় একটু মেরেছি, এটি সঠিক। কিন্তু যা বলা হয়েছে তা সম্পুর্ণ ঠিক নয়। চতুর্থ স্ত্রী আছমা বেগম এমন কিছু কাজ করেছে যা এক কথায় অকারেন্স। বাকি চার স্ত্রীগণও নিজেদের ভুলের কারণে চলে গেছেন। ভুলের সংশোধন তারা করতে পারেনি। আমি কাউকে অযথা হয়রাণি করিনি।’ এটি তার দূর্ভাগ্য বলেছেন তিনি। ই উপি চেয়ারম্যান এবিএম হুমায়ুন কবির জানান, একবার এই স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ পেয়ে তিনি ডেকে শাসিয়ে দিয়েছেন। কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ আলাউদ্দিন জানান, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাদিনীও সময় চেয়ে ফয়সালার কথা বলেছে।
×