জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে রোহিঙ্গা ইস্যুত চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে। রেজ্যুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৩৫ ও বিপক্ষে ভোট দিয়েছে চীন ও রাশিয়াসহ ১০ দেশ। তবে ভারতসহ ২৬ দেশ কোন পক্ষেই ভোট দেয়নি। অনুপস্থিত ছিল ২২ দেশ। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সময় সকালে ভোটাভুটির পর এই রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়। খবর ওয়েবসাইটের।
রেজ্যুলেশনে মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন পুনর্বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর যারা অত্যাচার করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্যও দেশটির সরকারকে বলা হয়েছে।
৩১ অক্টোবর থার্ড কমিটিতে ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শিরোনামে মিসর একটি খসড়া রেজ্যুলেশনটি জমা দেয়। এর কো-স্পনসর ছিল ৯৭ দেশ। এই রেজ্যুলেশনে শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে।
রেজ্যুলেশনে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ‘মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত’ নিয়োগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ যেন মিয়ানমারকে সহায়তার প্রস্তাব করে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ সব ধরনের সঙ্কট সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ যা চায়, তার প্রতিফলন এই রেজ্যুলেশনে আছে উল্লেখ করে সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন, নাগরিকত্ব দেয়া, কোফি আনান কমিশন রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়ন, রোহিঙ্গাদের নিজগৃহে প্রত্যাবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় এই রেজ্যুলেশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রুত যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে, বিষয়টিও এই রেজ্যুলেশনে উল্লেখ আছে।
সরকারের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আনান কমিশন রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা বাংলাদেশ সবসময় বলে আসছে এবং বিষয়টি উল্লেখযোগ্যভাবে রেজ্যুলেশনে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা ও অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে অস্থিতিশীল ও নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও এই রেজ্যুলেশনে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
যারা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, যেসব সামরিক, সরকারী ও বেসরকারী ব্যক্তি রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণ, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে এই রেজ্যুলেশনে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, যারা দোষ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে ২০১৫ সালে আউং সান সু চি সরকার গঠনের আগে একই শিরোনাম ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়। সেখানে মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। সেই রেজ্যুলেশনে ১৯টি অনুচ্ছেদের মধ্যে রোহিঙ্গা বিষয়ে শুধু একটি অনুচ্ছেদ ছিল।
বর্তমান রেজ্যুলেশনে বলা হয়, রাখাইনে সামরিক অভিযানের কারণে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এই অভিযান বন্ধ করাসহ রোহিঙ্গা নিধনের জন্য দোষীদের বিচারের আওতায় আনতেও মিয়ানমার সরকারকে বলা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরত যেতে পারে, রাখাইনে যেন জাতিসংঘসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থা কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে রেজ্যুলেশনে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, এ বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হলে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।