ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিবিকা দেব

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ সাহিত্য স্রোতের মতো চলমান

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ সাহিত্য স্রোতের মতো চলমান

শব্দের শৈল্পিক গাঁথুনি এক একটা সুন্দর নতুন বর্ণমালা । যার গাঁথুনিতে আছে শব্দের পরতে পরতে ভাষার মায়াময় ব্যবহার । তা কিন্তু একদিনে সৃষ্টি হয়নি । চর্চাপদ থেকে হেঁটে-হেঁটে শিল্প সাহিত্য আজ আধুনিক । ভবিষ্যতে আরও আধুনিক হয়ে দাঁড়াবে । সাহিত্য নদীর ¯্রােতের মতো চলমান । কেউ না কেউ অগ্রদূত হয়ে সামনে যাবে শব্দের ভেলা ভাসিয়ে । সাহিত্যজুড়ে যে বিশাল ভা-ার সৃষ্টি করেন তা হলো জ্ঞানের মননশীল সুচিন্তাধারা । প্রতিভা, সুন্দর মন এবং সুচিন্তা না থাকলে নতুন শব্দ সৃষ্টি করা অসম্ভব । তবে সাহিত্য রচনা করা খুবই সহজ ব্যাপার না ! যদি অতি সহজ হতো তাহলে পৃথিবীতে সবাই লেখালেখির খাতায় নাম লিপিকরণ হতো । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাহিত্যের প্রয়োজন হয় । ইনিয়ে বিনিয়ে কথাকে রসে টইটম্বুর করতে পারে একমাত্র সাহিত্য । প্রতিমার মতো অবয়ব হলে কী হবে ? যদি বুলিতে রস না থাকে ! সাহিত্য রসে আত্মার খোরাক । ভাব-বাস্তবতা কবিতার বড় শক্তি । ভাবের ঘুর যদি না থাকে কবিতা সৃষ্টি করা মুশকিল । তাই কবিতাকে ভাবের ফসলও বলা যায় । ভাবের সঙ্গে বাস্তবতার সন্ধিতে মানুষের জীবন যাপন,সমাজ, প্রকৃতি ঐতিহ্যর বিষয় ফোটে উঠে । শব্দরা কলমের মুখ হতে মানুষের মুখ ও হৃদয়ে উঠে আসে । ভাষা হয়ে ভ্রমণ করে এক ঠোঁট হতে অন্য ঠোঁটে । সাহিত্যিক থিওড়র বলেন ঞযবৎব ধৎব রহ ধপঃঁধষ ভধপঃ সধহ যিড় ঃধষশ ষরশব নড়ড়শং . ঐধঢ়ঢ়রষু যড়বিাবৎ ঃযবৎব ধৎব ধষংড় নড়ড়শং ঃধষশ ষরশব সধহ . অর্থাৎ; কিছু মানুষ আছে যারা বইয়ের মতো বলতে পারে । আনন্দের বিষয় হচ্ছে যে, কিছু বই আছে মানুষের মতো কথা বলে । কবির কলম মূলত মানুষ আর প্রকৃতির কথা বলে । শীতের অপূর্ব বিকেল তোমার জন্য একটি শীতের অপূর্ব বিকেল রোদ মেখে জমা রেখেছি সবুজের কাছে । দু’হাত ভরে এনেছি প্রভাতে ফোঁটা শিউলি আর কাঁঠালী চাঁপা ফুলের মিষ্টি গন্ধ । শর্ষে ফুলের গাঢ় হলুদ রঙ বাতাসের সংস্পর্শে প্রজাপতি মেখেছে ডানায় । মধু সঞ্চয়ে মৌমাছি নতুন বাসা গড়ে বাতাবী গাছের ডালে । সূর্যটা আদুরে ঘোমটা খুলে মিশেছে দিগন্তের অপরূপ সৌকর্যে । কলা পাতায় শিশিরের টুপটাপ শব্দ , ঘাসের লতানো শাড়ি সঙ্গে আরো এনেছি রাশি রাশি পদাবলির ফুলঝুড়ি । ** বাবার প্রেসক্রিপশন সাদা আর হলুদ রঙের মধ্যে বাবার প্রেসক্রিপশন । আদি গন্ধে মাখামাখি । ঘোরলাগা চোখে ভাসমান ওষুধে বিবরণ । পুষ্টিহীন নিঃশ্বাস বয়ে চলে প্রতিটি কোষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গে । নিবন্ধহীন চির মুক্তি, কণ্ঠক পথ পাতার শিরা-উপশিরা হেঁটেছে বহুকাল । গভীর ধুলাতে আবদ্ধ প্রেসক্রিপশন টাঙানো আছে । বেড়ার ফাঁক গলে সরু পথে । তারও আগে যে পথে হেঁটেছেন প্রপিতামহ । বইয়ের মলাটের কিছু অংশে, নতুন বাসা গড়েছে উঁইপোকা । বাবা যতœ করে রেখেছেন প্রেসক্রিপশন। ডিসপেনসারি ওষুধের গন্ধে টেস্টি হজমির লোলুপ ধ্যান মগ্ন । মরা ঘাস ঝরা পাতা কুড়িয়ে ক্লান্ত বাবা অশ্বথ বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম নেয় । দিনের আলো সন্ধ্যার মুখোমুখি হওয়ায়, পথের বাঁকে বাবার হাতছানি । সূদুর আকাশের চিলেকোটায় উড়ে বাবার প্রেসক্রিপশন । ** ভেজা জামা ঘামার্ত জবজবে জামা শরীরী উত্তাপে নিষ্কাশন শুদ্ধতার জল। ঝকঝকে সোনালি সূর্যের আলো স্পর্শের হাতছানি । বিনিময়ে নি¤œ আধুলি একাংশ সঙ্গে মার্জিতহীন বাক্য । ধুলো উড়ানো পথ পিঁপড়ে হয়ে হাঁটে । বাদামি রঙের মিহি ধুলো চুলে আলিঙনে আবদ্ধ । শীর্ণ পায়ের ছাপ পিচঢালা পথে এখানও লেগে আছে । অদূরে কালো রক্তের দাগ । কিছু কাল আগে রক্তের রঙ কৃষ্ণচূড়ার সমকামী । শোষিত শ্রমিকের মূল্যহীন জীবন ! জোঁকের দল শোষে নেয় নীরবে নিভৃতে । তেজস্বী থেকে তীব্র জঠরের ক্ষুধা । নিবুনিবু আলোয় ক্লান্ত অবসাদ দেহে নীড়ে ফেরা । শাটল ট্্েরনের শব্দে ঘুম চোখে জড়িয়ে কান পেতে শুনে ; গর-গর জোরালো মেশিনের প্রতিধ্বনি । গড়িয়ে পড়ে স্বেদনের বিন্দু। যেন প্রবাহিত নদীর জলে ¯œানরত শ্রমিক । ** সাম্যের শিলালিপি চার কোণার বাঁধানো ফ্রেমে বন্দী কালো চোখ । মণিকোটায় টলটলে বিহঙ্গ স্বপ্ন । নীলচে ডোরাকাটা কোটে বিষাদের বহির্প্রকাশ । ঠোঁটের চিলতে ম্লান হাসি । ডান পাশের কালো তিলে জমা অজ¯্র ভালবাসা । ধূমায়িত চুরুটে দগদগে আগুনে ধর্ষিতার আঁকা উল্কি । বলিরেখায় মানচিত্রের আজন্ম দহন । কুলো থেকে ধান উড়ানো পথে রেখেছে পদচিহ্ন । নির্জন দুপুরে শুনিয়েছে কোকিল মিথ ঐক্যর গান আর একতার নীড় । ইতিহাস জানে সেসব দিনের ইতিকথা । রেললাইনের ধুলোমাখা পথ শিশু , বৃদ্ধার মলিন আঁচলে ক্ষুধিত ধ্বজার আলপনা । ফেরি করে চলে সাম্য শিলালিপি । একশত পঞ্চাশ শব্দের সঞ্চালনায় দেশের প্রত্যেক দিগন্তের, মশাল হাতে দুর্গম রথের পথযাত্রী । সৌম্য যাজক হৃদ্যতা গড়ে স্বদেশের মানুষ আর মাটির মানসপটে । ** প্রকৃতির সমারোহ বসন্তের আগমনে কোকিল ডাকে জারুল বৃক্ষের মগডালে। দূর্বাঘাসের আসরে সমবেত শিশির অপেক্ষমাণ ভোরের আলোর । কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষের ফাঁকে সূর্যের সোনালি আলোর লুকোচুরি দেখে বিভোর হই । পূবালী হাওয়ার দোলনায় দোলে বৃক্ষের সবুজ পাতা ও দোলিত ফুলের পাপড়ি । অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ প্রান্তরে । বুকভরা জল তরঙ্গে যৌবনা নদী । দুধারে শাদা কাশবনের নয়নাভিরাম প্রকৃতির সমারোহ । বাতাসে বিশুদ্ধ নিশ্বাসে মিশে আছে প্রকৃতি ও মাটির গন্ধ । নদীর বাঁকে দাঁড়িয়ে আছে প্রবহমান অপেক্ষায় ... ! ** পাহাড়ের সৌম্য সৌন্দর্য প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্যের সন্ধান নিতে ছুটে যায় পাহাড় পুত্রের কাছে । রূপের মোহে মাতাল হয়েছি । হৃদয়ের অবিরাম শীতল বর্ষণে তপ্ত শরীর পেয়েছে ¯মুগ্ধ মধুরতা । প্রতি চুমুতে কচি পাতার ঘ্রাণ । সূর্যের ঝলমলে আলোয় বৃক্ষের সবুজ পাতারা চঞ্চল । প্রেমময় বাতাস যেন গোপন সন্ধি করে বর্ণিল প্রজাপতি ও রঙিন ফুলের সঙ্গে । পাহাড় পুত্রের সবুজ লোমকুপে উষ্ণতার আমেজ আর সবুজ চাদর জড়িয়ে রাখে অনাবৃত দেহ । বিধাতা নিজ হাতে গড়েছে কোমল বুকে তোমার সৌম্য সৌন্দর্য । যে দিকে তাকাই অবাধ্য আমি বারবার জড়াতে চাই তোমার প্রেমের নির্লিপ্ত আলিঙ্গনে ।
×