ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেদী উল্লাহ

আক্ষরিক

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

আক্ষরিক

কখনও কখনও কোন কোন মানুষ জীবনের শুরুতে যে অভ্যস্ততা দু’হাত পেতে নেয় বাকি জীবনেও আর তা থেকে পরিত্রাণ পায় না। মানুষটি হয়ত পরিত্রাণ পেতেও চায় না, অবচেতনেই পালন করে যায় সেই অভ্যস্ততা। বছরের পর বছর, জীবনের একটা অংশজুড়ে, এমনকি জীবনভর। অথবা চেতনেও যদি হয়ে থাকে, তবে রহস্য সে কাউকে জানতে দেয় না। প্রত্যক্ষ সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্তময় জীবনেও তা অপ্রকট। আপনার একান্ত ব্যক্তিগত হিসেবে তা এক প্রচ্ছন্ন মায়া। এই বিষয়ে তানিয়ার হাত দুটির কথাই আমার বেশি মনে পড়ে। সে ডান হাতে একটা টিফিন ক্যারিয়ার আর বাম হাতে একটা ছাতা নিয়ে স্কুলে আসত! তখন আমরা ক্লাস এইটে। একই স্কুলে পড়লেও আমাদের গ্রাম ছিল পাশাপাশি। ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা পার হয়ে আমরা স্কুলের রাস্তায় গিয়ে উঠতাম, ওটা ছিল বড় রাস্তা, অনেক প্রশাখা রাস্তা এসে মিলিত হয়েছে। এমন একটি রাস্তা, স্কুলে যাওয়া ছাড়া মেয়েরা আর সে রাস্তায় হাঁটত না। আর আমরা ছেলেরা স্কুল ছাড়াই রাস্তায় হাঁটতাম আর ভাবতাম, এই রাস্তা আপাতত আমাদের স্কুলে নিয়ে যায়। এছাড়াও রাস্তাটি চলে গেছে উপজেলার দিকে। একদিন নিশ্চয়ই উপজেলায় আমরা যাব। এই রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে অনেকে উপজেলায় যায়। আমি একদিন বড় হয়ে উপজেলায় যাব বলে সাইকেল চালানো শিখেছি এই রাস্তায়। কখনও এ রকম না করলেও ভেবে রেখেছিলাম, তানিয়াকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে একদিন উপজেলা যাব বাংলা ছবি দেখতে। কোনদিন যাওয়া হলো না। তানিয়া সে রাস্তায় রয়ে গেল, স্কুল থেকে আসা যাওয়ার পথে। আর সেই রাস্তা ধরে আমি চলে গেলাম সোজা উপজেলায়। ভর্তি হলাম ক্লাস নাইনে, ওখানকার সরকারী স্কুলে। এরপর তানিয়ার সঙ্গে আর কোনদিন দেখা হয়নি। আমার জগতে এমন একটা বোধ কে এনে দিল, নতুন স্কুলে যাওয়া মানে আগের স্কুলের সমস্ত স্মৃতির অবসান। দুই. ফেসবুকে হঠাৎ শায়লার রিকয়েস্ট আসা প্রসঙ্গে আবার আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেল তানিয়া। সেদিন চিঠিটা শায়লাকে দিয়েছিলাম। ওকে বললাম, ‘তানিয়াকে দিয়ো।’ শায়লাও আমাদের ক্লাসমেট ছিল। কিন্তু তার বোধ আমাদের চেয়ে উপরে। শায়লা জালাল, নিজের প্রেমের কথা নিজেই বলা ভাল। তার কথা শুনে লজ্জা পেয়েছিলাম। চিঠিটা আর দেয়া হয়নি তানিয়াকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শায়লার কাছে জানতে চাইলাম, তানিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আছে? ভেবেছিলাম সে আজও বলবে, নিজের প্রেমের খোঁজ নিজেই কর। কিন্তু আজ শায়লা সেদিনের শায়লা নয়। পাল্টে গেছে। জানি না কি ঘটেছে তার জীবনে। আজ সে দিনের মতো এমন উত্তর দিল না। বরং উৎসাহে বলল, ‘হা যোগাযোগ আছে তো। ফোন নম্বর লাগবে?’ বললাম, দাও। নম্বরটা নিয়ে রেখে দিলাম। সাহস হলো না। এর কিছুদিন পর শায়লাকে বললাম, ‘ঠিকানাটাই দাও।’ আজও সে কোন উপদেশ দিল না, প্রশ্ন করল না। ঠিকানা দিল। এই প্রথম এত এত বছর বাদে জানতে পারলাম, তানিয়া বিয়ে করেছিল। ঠিকানাটা তার শ্বশুরবাড়ির। শায়লার কাছে আরও জানতে পারলাম ও খুব সুখেই আছে। অবশ্য দুঃখে থাকলেও আমার কিছু করার নেই। এবং তাতেও আমি রওনা হয়ে যেতাম নিজের মনের সঙ্গে কথা না বাড়িয়ে। আরও জানতে চাইলাম, আমাকে নিয়ে তোমাদের মধ্যে কথা হয় না? শায়লা বলল, যখন যেদিন শহরের স্কুলে চলে গিয়েছিলে তারপর একদিন তোমার কথা উঠেছিল। এরপর আর কোন দিন নয়।’ তারপর কেটে গেছে বছরের পর বছর। দু’এক সপ্তার ব্যাপার নয়। শহরের স্কুল থেকে এসএসসি এবং স্কুলের পাশের কলেজ থেকে এইসএসসি শেষে ভর্তি হলাম অপরিচিত শহরের পরিচিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিচিত বলতে, আগেই সুনাম শুনেছি। কলেজে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সুনামের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। তারপর পছন্দের মানুষকে বিয়ে, সংসার। শায়লাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি যাচ্ছি, তুমি যাবে?’ শায়লা হাসতে হাসতে বলল, ‘এখনও একা সঙ্কোচ কর এতদিন বাদেও?’ শুনে আমিও হাসলাম। শায়লার স্বামী আছে, সংসার আছে, চাকরি আছে, সেও ব্যস্ত। সেদিন একাকী চিঠিটা দেয়ার সাহস হয়নি। আজ আর তেমন নয়। ভয় না পাবার মতো অনেক কিছুই ঘটেছে এ জীবনে। সঙ্কোচগুলো কেটে গেছে জীবনের প্রথম সাইকেল চালাতে শেখার সময়কার পড়ে পড়ে উঠে দাঁড়ানোর মতো। একাই চললাম তানিয়াকে দেখতে। ওর শ্বশুরবাড়ি যাব। এ যাত্রার নির্দিষ্ট কোন উপলক্ষ নেই, নেই কোন দায়, এমনি যাওয়ার জন্য যাওয়া। কয়েকটি কৌতূহল, এখন তানিয়া কেমন আছে, শ্বশুরবাড়িতে কি করে সময় কাটায় আর দেখতে কেমন হয়েছে ইত্যাদি। এটাও জানতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে, ওকে না বলে চলে যাওয়ার কারণে কি ওর কোন ধরনের খারাপ লেগেছিল অথবা আমাকে ও ঠিক কত দিন মনে রেখেছিল? সত্যি বলতে তানিয়ার মুখখানা এখন আর পরিষ্কার মনে করতে পারছি না। আলিজালি মনে আছে। ওর ফেসবুক এ্যাকাউন্ট আছে কিনা তাও জানি না। এখনকার তানিয়াকে লুকিয়ে ফেসবুকে দেখে ফেললেই তো সব শেষ। তাই ভাবলাম একবারে গিয়ে দেখব। হয়ত দেখে চিনতে পারব না এমন পাল্টে গেছে সে। ইচ্ছে করে শায়লার কাছে বেশি জানতে চাইনি। ওর জামাই কি করে, বাচ্চা-কাচ্চা আছে না নেই? সে কি আগের চেয়ে আরও বেশি লম্বা হয়েছে, যেমনটি ক্লাস এইটে পড়ার সময় আমার চেয়ে কিছু বেশি লম্বা ছিল। অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় এবারের যাত্রা। বাসে যাচ্ছি তানিয়ার শ্বশুরবাড়ি। পৌঁছার পর হয়ত সে অবাক হয়ে বলবে এত সাহস কোথায় পেলাম! এই আমার মধ্যে কি ছিল সুপ্ত সাহসগিরি! দেখা হওয়ার পরই কেবল জানতে পারব। তিন. বাস থেকে নেমে এলাকার সবচেয়ে বড় যে বাঁশের সাঁকোটি ব্রিজ হয়ে গেছে বন্যার পরে তার ওপর দিয়ে তানিয়ার শ্বশুরবাড়ি চললাম। ব্রিজের ওপর থেকে দূরে একটা ঘরের টিনের চালা টিনের চালায় দুপুরের সূর্যটাকে তেজ উগ্রে দিতে দেখে সেই ঘটনাটা মনে পড়ল। আমাদের বাড়ির সবচেয়ে উঁচু গাছটায় উঠে তাকিয়ে থাকতাম তানিয়াদের বাড়ির দিকে। শুক্রবার দুপুরের সূর্যের আলোয় চকচক করত তানিয়াদের টিনের চালা। নতুন টিনের ঘরটা দেখে চালার নিচে কোন একটা ঘরে তানিয়া নিশ্চয়ই আছে তার মতো করে। দূর থেকে নানা কিছু ভাবতাম আর কল্পনা করে করে আনন্দ পেতাম। ব্রিজ থেকে নেমেই চোখে পড়ল একটা বেত বন। দেব স্যারের কথা খুব মনে পড়ল। জালি বেতের বাড়ি। অপরাধ পিথাগোরাসের উপপাদ্য না শিখে আসা। সেদিন খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। ভাবছিলাম, তানিয়া যে কী ভাবল! তখন মনে হয়েছিল এই ক্লাসে না থাকলেই ভাল হতো। প্রেমিকার কাছে প্রেমিকের সর্বদা বীরত্ব আনন্দের। বীর তলোয়ারের আঘাতেও টলে না, আর এই প্রেমিক সহ্য করল জালি বেতের বাড়ি। তানিয়ার শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি যেতেই সঙ্কোচ ভর করতে লাগল যেন। কিন্তু এই বয়সে লজ্জা পেলে চলবে? তাই আবারও চলতে থাকলাম। খোঁজ নিয়ে জানলাম কাছে বাড়ি, ব্রিজ থেকে পনোর মিনিটের পায়ে হাঁটার পথ। চার. একটা পুকুরের পাড় ঘেঁষে তার বাড়িতে ঢুকতে হয়। চোখ মাটিতে রেখে ভেতর বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম পুকুরের ঘাটে কেউ একজন এক মধ্যবয়সী নারী। চোখে চোখ পরতেই চোখ সরিয়ে নিলাম। কিন্তু শেষ হলো না। পলকহীন তাকিয়ে থাকল। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার পর হাতে থাকা কলসিটা ছেড়ে দিল সে। পানিতে পড়ল ওটা। মনে হলো কলসি পড়ার শব্দ নয়, এত বছর বাদে আমাকে দেখে তার হৃদয়ের গভীরে ঝুপ করে একটা শব্দ হল। সে কোন কথা বলল না, আমিও না। কলসিটাকে তলিয়ে যেতে দেখে কিনা কি ভেবে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার অভিযানে নামলাম। সে বাধা দিল না। কোন ইশারা করল না, কোন কথা বলল না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। ততক্ষণে কলসিটা তলিয়ে যেতে থাকল। ওটাকে তুলে আনতে গেলে নামতেই হবে। শেষমেশ কলসির দেখা পেলাম। ততক্ষণে পুকুরটায় গোসল হয়ে গেছে। কয়েকটি ডুব দিলাম। এরপর উঠে কলসিটা তানিয়ার হাতে দিলাম। তখনও সে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে এসব। আমি একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। হৃদয়ের গভীর থেকে বেদনা তুলে আনলাম; ভরা কলসি গড়াতে গড়াতে পুকুরের এতটাই গভীরে চলে গিয়েছিল। বিনা বাক্য ব্যয়ে কলসিটা নিয়ে ভেতর বাড়ি চলে গেল তানিয়া। খানিক বাদে ফিরল একটা গামছা নিয়ে। ততক্ষণে আমি ঘাটের উপর পা ছড়িয়ে বসেছি। গামছাটা হাতে ধরে আমার ব্যাগটা নিয়ে আবার ভেতর বাড়ি চলে গেল তানিয়া। মাথা মুছতে মুছতে আমিও তার পিছু নিলাম। এই প্রথম কোন কিছু ইশারা করল সে। ঘরের একটা কক্ষে ঢুকতে বলল। সে কক্ষে আমার ব্যাগটা রেখে দিল। তারপর প্রস্থান। এর অর্থ আমাকে ভেজা কাপড় বদলে নিতে হবে। ব্যাগ থেকে শুকনো কাপড় বের করে পরে নিলাম। একটু পর তানিয়া এসে ভেজা কাপড় নিয়ে গেল। আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ দিল না। সোজা চলে গেল পুকুর ঘাটে। তারপর আমার ভেজা কাপড়গুলো ধুতে শুরু করে দিল। আমি ডিএসএলার নিয়ে এসেছি। বাধা দিলাম না। কাপড় ধোয়া অবস্থায় তানিয়ার কয়েকটা ছবি নিলাম। ছবি তুললাম পুকুরটারও। কাপড়গুলো ধোয়া শেষে তানিয়া উঠে উঠানের এককোনে বাঁশেবাঁধা রশিতে নেড়ে দিতে থাকল। এ দৃশ্য অতুলনীয়, আরও কয়েকটা ছবি নিলাম। তানিয়া আমাকে প্রথম দেখায় চিনে নিয়েছিল। আমি কি চেনেছিলাম? আচ্ছা সে কি চুপই থাকবে। কোন কথা হবে না আমাদের? আমি কি বেড়াব শ্বশুরবাড়ি? এর মধ্যে হঠাৎ খেয়াল করলাম তানিয়ার বৃদ্ধ শাশুড়ি শুয়ে আছে ভেতরের একটা কক্ষে। বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত, বৃদ্ধা অপেক্ষায়। তার সেবার কোন কমতি থাকে না তাকে নিয়ে। এর মধ্যে আরও জানলাম এবং বুঝলাম তানিয়া নিঃসন্তান। এ বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করা যায়? পাঁচ. স্কুলে দুপুরে টিফিনের সময় তানিয়াকে টিফিন বাটি থেকে মুরগির সালুন ভাতে ঢালতে দেখে প্রায়ই বলতাম, ‘তোমাদের বাড়িতে গলাছিলা মুরগি রান্না হয় না। যেইদিন আনবা বইল, খাব।’ গলাছিলা মুরগিও তাদের ছিল না, রান্নাও হয়নি, খাওয়াও আর হলো না। তানিয়ার ছাতাটা নিয়ে প্রায়ই আমি দুষ্টুমি করতাম। তার মধ্যে সবচেয়ে কমনটা ছিল, ছাতা মেলে উল্টো করে মাটিতে রেখে দেয়া। যেন এন্টেনা! আটানব্বইয়ের বন্যার পর তানিয়াকে ক্লাস নাইনে রেখে আমি শহরের স্কুলে চলে গেলাম। এরপর আর কখনও তানিয়ার সঙ্গে কথা হয়নি। দেখাও না। নিকটস্থ এই গ্রামেই তার বিবাহ হয়েছে। তার বাড়ি ভরা অসংখ্য গলাছিলা মুরগি। সে কেন পালে আমি জানি না। হতে পারে আমি খেতে চাইছি বলেই! হয়ত আমার প্রত্যাশার সালুনটা খাওয়ানোর জন্যই তার এ প্রস্তুতি। আর ছাতা বিষয়ে হয়ত বকুলের কোন প্রস্তুতি নেই। অন্য একজন উল্টানো ছাতার জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে। তাহার স্বামী ডিশের ব্যবসা করে! কখনও কখনও কোন কোন মানুষ জীবনের শুরুতে যে অভ্যস্ততা দু’হাত পেতে নেয় বাকি জীবনেও আর তা থেকে পরিত্রাণ পায় না। মানুষটি হয়ত পরিত্রাণ পেতেও চায় না, অবচেতনেই পালন করে যায় সেই অভ্যস্ততা। বছরের পর বছর, জীবনের একটা অংশজুড়ে, এমনকি জীবনভর। অথবা চেতনেও যদি হয়ে থাকে, তবে রহস্য সে কাউকে জানতে দেয় না। প্রত্যক্ষ সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্তময় জীবনেও তা অপ্রকট। আপনার একান্ত ব্যক্তিগত হিসেবে তা এক প্রচ্ছন্ন মায়া। এই বিষয়ে তানিয়ার হাত দুটির কথাই আমার বেশি মনে পড়ে। সে ডান হাতে একটা টিফিন ক্যারিয়ার আর বাম হাতে একটা ছাতা নিয়ে স্কুলে আসত! তখন আমরা ক্লাস এইটে। একই স্কুলে পড়লেও আমাদের গ্রাম ছিল পাশাপাশি। ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা পার হয়ে আমরা স্কুলের রাস্তায় গিয়ে উঠতাম, ওটা ছিল বড় রাস্তা, অনেক প্রশাখা রাস্তা এ শাখা রাস্তা এসে মিলিত হয়েছে। এমন একটি রাস্তা, স্কুলে যাওয়া ছাড়া মেয়েরা আর সে রাস্তায় হাঁটত না। আর আমরা ছেলেরা স্কুল ছাড়াই রাস্তায় হাঁটতাম আর ভাবতাম, এই রাস্তা আপাতত আমাদের স্কুলে নিয়ে যায়। এছাড়াও রাস্তাটি চলে গেছে উপজেলার দিকে। একদিন নিশ্চয়ই উপজেলায় আমরা যাব। এই রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে অনেকে উপজেলায় যায়। আমি একদিন বড় হয়ে উপজেলায় যাব বলে সাইকেল চালানো শিখেছি এই রাস্তায়। কখনও এ রকম না করলেও ভেবে রেখেছিলাম, তানিয়াকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে একদিন উপজেলা যাব বাংলা ছবি দেখতে। কোনদিন যাওয়া হলো না। তানিয়া সে রাস্তায় রয়ে গেল, স্কুল থেকে আসা যাওয়ার পথে। আর সেই রাস্তা ধরে আমি চলে গেলাম সোজা উপজেলায়। ভর্তি হলাম ক্লাস নাইনে, ওখানকার সরকারী স্কুলে। এরপর তানিয়ার সঙ্গে আর কোন দিন দেখা হয়নি। আমার জগতে এমন একটা বোধ কে এনে দিল, নতুন স্কুলে যাওয়া মানে আগের স্কুলের সমস্ত স্মৃতির অবসান।
×