ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মইনুদ্দীন খালেদ

শিল্পকলা ॥ সৈয়দ জাহাঙ্গীর ॥ অরূপের অনুরণন

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

শিল্পকলা ॥ সৈয়দ জাহাঙ্গীর ॥ অরূপের অনুরণন

জলের দেশে নদীরা সবচে বেশি কলরব করে দক্ষিণে। এ দেশের দক্ষিণে না গেলে কেউ বুঝবে না কেন আমরা বাংলাদেশকে চিনি নদীমাতৃক শব্দে। আশৈশব নদীর গান শুনেছেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর। জন্ম তার খুলনায়। জল আর কাদামাখা জীবনের ভাষ্য তিনি রচনা করেছেন শিল্পে। কখনও একান্ত কায়িক শ্রমের জীবনের রূপ তিনি এঁকেছেন, কখনওবা জগত-সংসার তাকে সম্বোহনী টান দিয়েছে অধরালোকের পানে যাওয়ার জন্য। তবে ইহজাগতিকতার চেনা রূপের চিত্রায়নে সন্তুষ্ট নয় জাহাঙ্গীরের চেতনা, তিনি আরেকটু বেশি খুঁড়ে দেখতে চান, চান নিসর্গ ও অন্য জীবনের অন্তর্লীন কোন স্তর আবিষ্কার করে শিল্পে মাহাত্ম্য যোজন করতে। সৃজনের অভিযানে সৈয়দ জাহাঙ্গীর বৈচিত্র অন্বেষী। জলের গানে মুখরিত নদীপ্রধান স্বদেশের নিসর্গের বিচিত্র লীলা এবং এ লীলায় সমর্পিত মানুষ ও আরও অনেক প্রাণের জীবন প্রথমত তার চেতনায় শিহরণ এনেছে। নিসর্গে নিমগ্ন হলে নশ্বর জীবন মরমী আকাশে উড্ডীন হয়, বিপুল স্পেসের ভাসমান জীবন থৈ খুঁজে পায় না, তাই আশ্রয় খোঁজে নিমূর্ত অবিনাশী শক্তির কাছে। তবে আধ্যাত্মিকতায় অষ্টপ্রহর যাপনও সম্ভব নয়, মানুষকে ফিরে আসতে হয় মাটিমাখা জীবনের পথে। মরমী ও এই চাক্ষুষ বাস্তব পৃথিবীলোকে;Ñ এই মেরুতেই ভ্রাম্যমাণ জাহাঙ্গীরের সৃজনীশক্তি। একজন শিল্পীর সৃষ্টি নিয়ে বিশদ বয়ানের আগে তার চেতনার পরিমাপ নেয়া জরুরী। শিল্পী কোন কালিক পটভূমে কোথায় কোথায় যাপন করেছেন জীবন তারও হিসাব নিতে হয়। কোন কোন শিক্ষা ও দীক্ষা তার সৃজনভূমে জুগিয়েছে নান্দনিকতার পলি তা জানা না থাকলেও শিল্পীর ছবির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুভব করা সম্ভব নয়। নিসর্গের পাঠশালায় শৈশব ও কৈশোর শেষ হলে আমরা নগরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করি। সতীর্থ অনেকের মতোই সৈয়দ জাহাঙ্গীরের জীবনে তাই ঘটেছে। পঞ্চাশের দশকের শুরুর বছরে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন তিনি। কৈশোরের ছবির খাতায় প্রমাণ ছিল ছবি আঁকায়, উদ্যোগে দেশের রাজধানী শহর ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এই শিল্পবিদ্যালয়ে প্রবেশ সহজতর হয়েছিল। পাঁচ বছরের শিক্ষা তার যথাসময়ে শেষ হয়। ১৯৫৫-তে তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। জাহাঙ্গীর যখন বিদ্যা লাভ করেন তখন আমাদের চিত্রাকাশে জয়নুল সূর্য মধ্যগগনে। যদিও ঢাকার ওই চারুকলা প্রতিষ্ঠান, বর্তমানে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ, তাতে পশ্চিমের একাডেমিক নিয়মই শেখানো হতো এবং যে বিদ্যা লাভ করার পর শিক্ষার্থীরা বাস্তুববাদী শৈলী অনুসরণ করে ছবি আঁকত, তবুও সেই রীতি এদেশে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল। কারণ, জয়নুলের দীক্ষা। জয়নুলে যে বাস্তবতাবাদ আমরা দেখতে পাই তাতে ব্রিটিশ বা ডাচ কোন নিয়মই অনুসৃত হয়নি। বরং রেখা ও রঙের এক অভূতপূর্ব রসায়নই উপচে এসেছে জয়নুলের এবং জয়নুল শিষ্যদের কাজে। বাস্তববাদ কেন এখানে ভিন্ন ভাষা পেল তা যদি বিশ্লেষণ করতে যাই তা হলে দেখতে পাব তা শুধু শিল্পাচার্য জয়নুল থেকে উৎসারিত হয়নি। এদেশের সরস-সজীব প্রকৃতি এবং এ প্রকৃতিতে লীন কৃষক-জেলে-মাঝি-মাল্লার জীবনের যে নাঙ্গা জীবন বহমান রয়েছে তাই এখানে বাস্তববাদের নতুন সংজ্ঞা জন্ম দিয়েছে। বস্তুত, প্রতিটি ভূগোলেই শিল্পের মতবাদ বদলে যায়, নতুন সংজ্ঞার্থ তৈরি করে। জাহাঙ্গীর যে শুধু নদীমেখলা এই স্বদেশ বাংলাদেশেই যাপন করেছেন জীবন তা নয়, ’৭১-এর পূর্বকালে (পশ্চিম) পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে থেকেছেন এবং অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন ভিন্ন ভূগোলে ভিন্ন জীবন থেকে। কাটিয়েছেন জীবন তিনি মার্কিন মুলুকে এবং দেখেছেন এশিয়ার ও পশ্চিমের অনেক দেশ। এশিয়াপ্রীতি তার জীবন-বৃত্তান্তে একটি উজ্জ্বল ঘটনা সংযুক্ত করেছে। এ শিল্পীর উদ্যোগেই এদেশের শিল্পকলার জগতে সবচে বড় সমারোহপূর্ণ আয়োজন এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন ও অন্যান্য কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে নিরলস শ্রমে ও শৈল্পিক দক্ষতায় সৈয়দ জাহাঙ্গীরকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আমরা দেখতে পাই। অবিন্তা আর্ট গ্যালারি আয়োজিত শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের একক প্রদর্শনী উপলক্ষে এসব কথা জানান দেয়া আমার কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। একই সঙ্গে শিল্পী ও সংগঠক এ যৌথায়ন আমরা শিল্পের ইতিহাসে খুব একটা দেখতে পাই না। শিল্পী যদি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্তা হন তবে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকা- শিল্পম-িত হয়। চারুশিল্পী জাহাঙ্গীর শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। এ দায়িত্ব পালনেও তিনি তার ছবির মতোই স্বদেশকে ভালবাসার অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন। পঞ্চাশের দশকেই আমাদের দেশে চারুকলা চর্চায় সবচে বড় পালাবদল ঘটেছে। এ দশকে কিবরিয়া, আমিনুল, বশীর, হামিদুর, কাইয়ুম, রশিদ, রাজ্জাক, দেবদাস, বাসেত প্রমুখের সঙ্গে প্রথম সারিতেই অবস্থান দাবি করেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর। জয়নুল, কামরুল থেকে শুরু করে উল্লেখিত সব শিল্পীই এ সময় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রমাণ রেখেছেন। এ সময়ই আমাদের চর্চায় মূর্ত ও বিমূর্তের বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তর্কে শেষ পর্যন্ত শিল্প জয়ী হয়। আমরা পেয়ে যাই লোকশিল্প, কিউবিজম, বিমূর্ত প্রকাশ্ববাদ, সুররিয়ালিজম ইত্যাদি মতবাদের দেশজ বৈশিষ্ট্যম-িত শিল্প। সতীর্থ অনেকের চেয়ে বেশি নিরীক্ষানিষ্ঠ সৈয়দ জাহাঙ্গীর। কোন অজানা কারণে তার কাজ আশানুরূপ মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। এ শিল্পী স্বদেশের প্রকৃতি থেকে প্রাণিত হয়েছেন ছবি আঁকায়। রেখা ও বর্ণছোপের ললিত মধুর বান্দেশে জলরঙে নিসর্গের কবিতা চিত্রায়িত করেছেন জীবনের প্রথম পর্ব। নদীপারের স্বদেশ, পাহাড়ী স্বদেশ, পশ্চিম পাকিস্তানের নানা অঞ্চল ছিল এ সময় তার ভূদৃশ্য আঁকার প্রেরণা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে অবরুদ্ধ জীবন কাটিয়েছেন। এ অভিজ্ঞতা নিয়েও তিনি ছবি এঁকেছিলেন; কিন্তু তা আর তার পক্ষে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। জাহাঙ্গীর গুরু জয়নুলের ভক্ত হলেও তার কাজে গুরুর প্রভাব তেমন দেখা যায় না। একই স্পেসে বেড়ে উঠলেও তার কাজ সতীর্থ কাইয়ুম বা রশিদের মতো নয়। শৈলী অনুশীলনের ক্ষেত্রে তিনি লোককলা বা কিউবিজমের ব্যাকরণ রপ্ত না করে বরং জল, তেল ও অ্যাক্রিলিকে ভূদৃশ্যে প্রথাগত ব্যাকরণটা নিজের নিয়মে ভেঙ্গেছেন। তার ভূদৃশ্যে রেখা পুরু, বর্ণছোপ ও পুষ্ট। তার প্রজন্মের অন্য প্রথার শিল্পীদের মতো তিনিও ফিগারেটিভ বা অবয়ব নির্ভর যাত্রা শুরু করে নিরাবয়ব বা বিমূর্ত সায়রে গিয়ে আত্মবিসর্জনের সুখ পেতে চেয়েছেন। বিমূর্ত বলে কিছু নেই, নিরাবয়ব বলেও কোন কিছু দৃষ্টিগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়, তবে অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট বলতে কি বোঝানো হচ্ছে। এ প্রশ্নের উত্তর আমরা একদিন জেনে গেছি। মাধ্যমের মৌল উপাদান অর্থাৎ কবিতার ক্ষেত্রে শব্দ, সঙ্গীতের জন্য সুর আর ছবির জন্য রং; এ উপাদানে মানবসত্তা জারিত হয়ে এক অভূতপূর্ব ভাষা তৈরি করেÑ মনের স্পন্দন ও অনুভূতির গতির বৈচিত্র্য বর্ণরেখায় পরিমাপের মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় শিল্প। প্রতিটি মনই আলাদা, প্রতিটি মানুষের কররেখা যেমন ভিন্ন, তার চেয়েও বেশি ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারক মানুষের মন। সব শিল্পই মানুষের মনের মুদ্রা। প্রকৃতি ও জগতসংসার উপলব্ধির বিশেষ প্রতিক্রিয়া। এই মনো মুদ্রাই আসল কথা। মোনালিসায় দা ভিঞ্চি আছেন অদৃশ্যভাবে বা বিমূর্ত ইশারায়, কান্দিনিস্কির বিমূর্তন তারই মন, তেমনই মনের বেগের মানচিত্র রচনা করেন একজন জ্যাকসন পোলক অথবা একজন মার্ক রথকো। সৈয়দ জাহাঙ্গীর তার সমকালের শিল্পীদের চেয়ে একটা মর্মকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। তিনি কর্মের বা রূপের মর্মকে জ্যামিতিক হিসেবে উপস্থাপন দিতে চেয়েছেন, পূর্ণভাবে বর্ণে বিলীন হতে চাননি। কিন্তু তার কাজে যেসব কর্ম ভেসে ওঠে তা পত্র-পত্রালির শীর্ষে পুষ্পায়নের মতো এবং চেনা গড়নের পাশে বর্ণের বাতাস তাড়িত উদগীরণ উপস্থাপন করে জাহাঙ্গীর একই সঙ্গে মূর্ত ও বিমূর্তের সমীকরণ রচনা করেছেন। তার বিখ্যাত ‘আত্মার উজ্জীবন’ শীর্ষক কাজ দেখলে বোঝা যায় প্রকৃতির বিকাশমান অবস্থাটা তিনি নানা রঙের লহরিতে সুরেলা করে প্রকাশ দিতে চাচ্ছেন। কর্ম, লাইন এবং বর্ণের স্বাধীন বিচরণ এ শিল্পীর কাজে অর্কেস্টা রচনা করে যেন। তবে নদীর দেশের মানুষ বলেই বোধ হয় জাহাঙ্গীর যখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর প্রকৃতি আঁকেন তখন মরুর ধূসরতার চেয়ে তার কাজে শূন্যতায় রেখা ও রঙের মাধুর্য প্রকাশ পায়। প্রকৃতিপ্রেম ও গভীরতর জীবন উপলব্ধি জাহাঙ্গীর মরমী ভাবনার আকাশে ভ্রাম্যমাণ করেছেন। তিনি বুঝেছেন এ প্রকৃতির কোন আদি অন্ত নেই; অসীমতার নীলে লাল বিদ্যুতরেখায় চমকিত স্পেসকে শিল্পী নাম দিয়েছেন ‘অজানার অন্বেষায়’। গড়নপ্রধান শিল্পী জাহাঙ্গীর ধীরে ধীরে আসেন স্পষ্ট রূপের আমন্ত্রণে। এ প্রত্যাবর্তনে তার শুরু হয় দশক দুই আগে। তিনি ফিরে আসেন তার নদী, নৌকার দেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শ্রমনিষ্ঠ মানুষের জীবনের চিত্রকর হয়ে। শিল্পীর এ পর্বের কাজের এক শোধিত রূপ আমরা দেখতে পাব অবিন্তা গ্যালারির এ প্রদর্শনীতে। আট দশকের বেশি সময় ধরে যাপিত শিল্পী জীবনে এক বিশেষ পরিপক্কতা লাভ করেছে। এ প্রদর্শনীতে অভিজ্ঞ ও পোক্ত জাহাঙ্গীরের শিল্পীমনের স্বাক্ষর রয়েছে। নীল প্রশান্তির মধ্যে সোনালি বা উজ্জ্বল হলুদে ইমেজ পরিস্ফুট করে প্রকৃতির অপরিমেয়তা জানান দিয়ে জাহাঙ্গীর বাংলার প্রকৃতি, মানুষ ও জীবনযাত্রার ছবি এঁকেছেন। এই কালার স্কিম বা বর্ণজোট শিল্পীর মরমী ভাবনালোকের স্মারক। নীলের এই অন্তহীন বিস্তার মনকে বস্তু-পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে; আবার সোনালি বা হলুদও রূপ থেকে অরূপের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। কখনওবা সোনালি হলুদের বিপরীত মানুষগুলোই নীলে রূপায়িত হয়। ফলে প্রতীকবাদ বা সিম্বলিজমের আদর্শে বর্ণের ধর্ম বিবেচনা অনিবার্য হয়ে পড়ে। এখানেও মরমী নির্দেশ আছে বলে মনে হয়। মানুষ বা প্রকৃতির অনুষঙ্গ চোখচেনা বর্ণের পরিবর্তে যখন অন্য বর্ণে বর্ণিত হয় তখন সত্তার রহস্যময় কোন দিক উন্মোচিত হয়ে পড়ে। এই রং যোজনের ফলে নতুন বর্ণমালার (ঠড়পধনড়ষধৎু) আমরা উদ্ভিজ প্রকৃতি ও মনুষ্য প্রকৃতির অন্তর্লীন রহস্যকে পাঠ করতে পারি। ‘বাবুই পাখির বাসা, জলের ধারে অনেক নৌকা, দলবদ্ধভাবে শ্রমজীবী মানুষের যাত্রা, এসব বিষয়ে রূপায়নেও বোঝা যায় চিত্রায়ন প্রক্রিয়া বৈচিত্র নয়, শিল্পী বিষয়ের অভিনবত্বও তালাশ করেছেন। শ্রমজীবী মানুষের কোন কষ্টদায়ক অভিব্যক্তি আঁকার চেয়ে সংঘবদ্ধ মানুষের শক্তিটার দিকেই ইঙ্গিত করতে চান শিল্পী। অবশ্য বাস্তুভিটা থেকে বিতাড়িত রাখাইনদের সমবেত যাত্রায় পরিব্যস্ত রয়েছে মানুষের দুঃখসহ কষ্ট। প্রতিবেশী দেশ থেকে আত্মীয় পরিজনদের নিহত হওয়ার দুর্বহ স্মৃতি নিয়ে আঁকা সৈয়দ জাহাঙ্গীরের ছবি ইতিহাসের শৈল্পিক দলিল হয়ে রইল। ঐক্যবদ্ধ মানুষের সুখ ও দুঃখ দুই-ই চিত্ররূপ পেয়েছে এই শিল্পীর তুলিতে। করণকৌশলের দিক থেকে এ অভিনব প্রক্রিয়া আয়ত্ত করেছেন জাহাঙ্গীর। তুলি-কলমের পাশে এবার স্প্যাচুলা হয়েছে তার অবলম্বন। স্প্যাচুলায় রং লাগিয়ে তিনি কর্মে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। ছোট ছোট কৌণিক গড়ন তার কাজকে বিশেষ ছন্দের দোলা দিয়েছে। ছবি যে পরিমাণে কর্মের চলমানতায় প্রাণের ছন্দকে নির্দেশ করে তা এ শিল্পীর স্প্যাচুলায় রং লাগানোর পদ্ধতিতে বিশেষ স্পষ্টভাবে বোঝা গেল। বর্ণের মেঘময় সঞ্চারণ আর রেখার ললিত বিস্তারের সঙ্গে এবার সৈয়দ জাহাঙ্গীরের কাজে যুক্ত হলো স্প্যাচুলা থেকে জন্ম নেয়া কর্মের ঝর্ণা। এভাবে বিচিত্র পথে রূপের মধ্য থেকে অরূপের অনুরণন শোনাতে চান পঞ্চাশের দশকের এই প্রধান শিল্পী।
×