পরমন
মাসুদ মুস্তাফিজ
একটু গুছিয়ে রাখো মায়া রেখাভাঙা অসুখ
তোমার একাকীত্বের তিল আলোমাখা মুখ
নির্দ্বিধার সময় পুড়িয়ে প্রথম উত্তাপে ভাঙাবুক
তুমি যদি ফুল দিতে চাও
আমি তোমার ফুলগাছ অবিমিশ্র সুখ..
আছে-অপেক্ষা আছে স্বপ্নরণ
তুমি প্রজাপতি তাড়নাপুষ্প পরমন..
** নিথর মানুষ
রুনু আঞ্জুমান
আবছা সফেদে মোড়া কুয়াশার ঢেউ
কাঁপছে বুকের হাড় বস্ত্রহীন কেউ
সূর্যের প্রতীক্ষা আর আগুনের ছোঁয়া
ওম নেই, নেই ওম গেছে বুঝি খোয়া
নিথর মানুষ আজ বোবা চোখে চেয়ে
বাতাস বেদনা সুরে গান যায় গেয়ে
একটি কম্বল যেন স্বর্গ মাঝে বাস
স্বল্পতা তৃপ্ততা আনে নিয়ে সুখ-শ্বাস
তবুও জোটে না ভাগ্যে সামান্য চাওয়া
ছাউনি বস্তির ঘরে জমেছে পাওয়া
ডাস্টবিনে পড়ে থাকা খাদ্য যত মেলে
অভাগা পেটের ক্ষুধা পায়ে পায়ে খেলে
বিশাল আকাশ শুধু ওপরেই থাকে
গরিব মুখেতে শাস্তি ছুড়ে দেয় যাকে।
** বোতাম খোলা গন্ধ
রাহমান ওয়াহিদ
ভেতর থেকে ধুলো স্বপ্নের মাঠ পেরিয়ে
নাই বা এলে। আমি সান্ধ্য বালিকা নই যে
বোতাম খুলে গন্ধ ছড়াবো।
সজারুর কাঁটা হলেও তো হতে পারো
তাহলেও অন্তত মালুম হতো-
রক্ত শিশির দু’পায়ে মাড়িয়ে হৃদপদ্মে
রাখতে জানো কুশলি হাত।
ঘাপটি মেরে বসে বসে
উলুখাগড়ায় শস্য বোনো ক্যানো।
আমি তো জল থৈ থৈ কিষানি নই যে
ভ্রমর সরিয়ে দিঘিনীল ভ্রণ ফলাবো।
মাছেরই কাঙাল যখন
ধ্যানী বরশিও তো হতে পারো।
তাহলেও অন্তত মালুম হতো-
অপেক্ষার সূতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে
ফুলেল সম্ভোগে কড়া নাড়তে শিখেছ।
** দৃশ্যসঞ্চয়
ফারহানা ইলিয়াস তুলি
কেমন কল্পচিত্র বুকে চাঁদ একা আকাশ দখল করে রাখে, তা আমার জানার
জন্য ঘন নীলের দিকে তাকাই। কতো শোক বহন করে এই রাজপথ নেমে
যায় মাঠ বরাবরে, তা জানার জন্য আমরা আশ্রয় নেই ভর দুপুরের। চাঁদ ও
দুপুর আমাদের প্রতিবেশী হয়ে জাগায় বিস্তার।
দৃশ্যের অদূরে যে দিগন্ত সঞ্চিত থেকে যায় , আমরা তারই অনুগত
হয়ে জন্ম পৃথিবীর জন্য পুষ্প সংগ্রহ করি। ফুল ও শস্যের বিন্দুবীজ জমিয়ে
আরেকটি প্রজন্মের জন্য করি অপেক্ষা। মানুষ আজন্ম থেকে যায় প্রতীক্ষায়....
ডিঙির বহরগুলো যেমন ধীরে বয়ে যায় ।
** হেমন্ত
রহমান মুজিব
হেমন্তের টুপটাপে ভিজে যায় গ্রাম
গ্রাম মানে আমার স্বরচিত মুখচ্ছবির হাজার বছর।
শ্লথ হলে বর্ষাকুমারীর যৌবন, ভেঙ্গে যায় জলের সংসার
ক্ষরণের শুকনো ঊষায় লাশ হয়ে থাকে মজাখাল
তার পাশে রাধিকা মাঠ, চিটাধানের আগুনে পোড়ে স্বপ্ন অনির্বাণ
এভাবে ভুলের মার্জিনে জমা হয় ভাঙ্গনের দ্রবণ
শীতবর্ণে চিঠি লিখে মাঘের সাইবেরিয়া, কাঁপনের ভরে ওঠে
রাতের ডাকবাক্স কখনোবা চোখ শিশিরের কাছে জমা রাখে
বিষাদের আবাদ। তখন অশ্রুর বাণীচিত্রে মজাখাল নদী হয়ে যায়
গোধূলির সিঁথিতে টানা হয় আগুনের সিঁদুর।
** মায়ার বন্ধন
আনোয়ার কামাল
এই ভূগোলের মায়াময় ধরণী তাকে বুকে তুলে নেয়
রোদ-ঝড়-বৃষ্টি তাকে ছুঁয়ে যায় ভালোবাসার আবেগে
প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম মেনে সেও প্রকৃত যোদ্ধা হয়
এই ভূগোলে তাকেও একদিন মায়ের ভূমিকা নিতে হয়।
** স্বপ্রণোদিত
জাহান জলেশ^রী
আমাকে হত্যা করার সে রাতটি মনে পড়ে,
বিড়াল কান্নার মতো সে রাত ছিলো এমনই আকাশ কান্নার সারথি।
তুমি এতো হেসেছিলে!
ঘটা করে শোনাচ্ছিলে নাগরিক রাস্তার পাশে
কত কবর ঘুমায় কোনো বিলাসিতা ছাড়া।
শোনাচ্ছিলে কমলা কৃষ্ণচূড়ার নিচে কাকে বিসর্জন দিয়েছিলে চতুর ছলনায়,
বরাবরের মতো নির্লিপ্ত আমার চোখের নায়াগ্রাও সেদিন ডুবেছিলো বুকের প্রাসাদে।
সে রাত ছিল আমার একার, আমার দৈনন্দিন জীবনের মতো।
সে রাত ছিল পুরুষ তালের গাছে বাবুই পাখির বাসাকে ফল ভাবা।
সে রাত ছিলো, শৈশবের ঘুমভাঙ্গা ভোরে পুকুর পাড়ের পাকা খেজুর কুড়িয়ে আনা
আমার বোবা খেলার সাথীর প্রসব বেদনার মৃত্যু চিৎকার,
তারপর ফজরের আজানে তার আত্মার শান্তিকামনা।
সে রাতে হত্যার আগে কিছুই মনে পড়েনি আমার,
আমি ভুলে থেকেছি আমার হুড়হুড়ে জন্ম, প্রশান্ত শৈশব, অনির্বাণ কৈশোর,
আমার সদ্য নুড়ি দেওয়া যৌবনগন্ধের মাটির উঠোন,
তোমার চোখের টাইমমেশিনে।
এত আয়োজনের এ পরিপাটি হত্যা
আমাকে এনে দিলো মেঘের গর্জনে নির্জন রাতের সমুদ্রবিলাস।
আমাকে হত্যার পর তুমি স্বীকৃতি পেলে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর,
আর আমি পেলাম অমরতার শাস্তি।
শীর্ষ সংবাদ: