ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ড. ফারাহ নওয়াজ

রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরী

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারাহ নওয়াজ দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ও তার বিষয়ভিত্তিক গবেষণার পরিধি বিস্তৃত করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিনডারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রীপ্রাপ্ত ফারাহ ইতোমধ্যে ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তার্কী, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার প্রবন্ধ উপস্থাপন করে খ্যাতি লাভ করেন। শুধু তাই নয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি জানালেও তার প্রবন্ধ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই কৃতী শিক্ষকের সঙ্গে আলাপচারিতায়-- নাজনীন বেগম ১৯৮২ সালে জন্ম নেয়া ফারাহ নওয়াজের শৈশব, কৈশোর এবং শিক্ষা জীবনের প্রয়োজনীয় সময়গুলো কাটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। পিতা এএস মোঃ নওয়াজ আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি অবসরে। ২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে ফারাহ কনিষ্ঠতম। মা ফরিদা বানু একজন সুগৃহিণী মমতাময়ী এবং স্নেহশীল মাতৃমহিমার সত্যিকারের প্রতিনিধি। নিজের সাফল্যের চাইতেও বেশি করে স্মরণ করেন মায়ের সর্বক্ষণিক ছায়া, স্নেহসিক্ত সাহচর্যের নিরন্তর ঝর্ণাধারা। শিক্ষক পিতার প্রতিভা আর মেধাও ফারাহকে প্রতিনিয়তই সম্মানজনক এই পেশার প্রতি প্রলুব্ধ করেছে। আর তাই জীবনের গতিময়তায় এই মহান কর্মযজ্ঞের প্রতি তার নিবেদন ছিল বরাবরই অকুণ্ঠ এবং অবিচলিত। শিক্ষকতাকে জীবনের লক্ষ্যে হিসেবে বিবেচনায় এনে সেভাবেই নিজেকে তৈরি করেছেন সময়ের সুনির্দিষ্ট মিছিলে। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষাকেই জীবনের প্রথম শুভযোগ হিসেবে ভাবনায় স্থান দেয়াটা ছিল শিক্ষা কার্যক্রমের সুপরিকল্পিত আদর্শিক চেতনা। তাই প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়েছেন একেবারে নিজের মতো করে। সেখানে ফলাফলের তোয়াক্কা না করে শুধু লক্ষ্যে স্থির থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। বাবা-মা শুধু বটবৃক্ষের মতো মাথার ওপরে ছিলেন, ব্যস এইটুকুই। নিজের শিক্ষা জীবনে মা তো বটেই শিক্ষক বাবাকেও ছুটি দিয়েছিলেন। তেজী, জেদী আর সাহসী ফারাহর নিজের ওপর ছিল অগাধ বিশ্বাস আর আস্থা। সেই অবিচলিত চিত্তে প্রথম আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের দুয়ারে পৌঁছেও গেলেন নির্দ্বিধায়, নির্বিঘ্নে। অর্থাৎ প্রথম বোর্ড পরীক্ষা এসএসসির ফলাফলে নিজে যেমন একইভাবে সবাইকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিলেন। সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১১তম এবং মেয়েদের মধ্যে চতুর্থ স্থান দখল করলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে। পরবর্তী পরীক্ষা এইচএসসিতেও কৃতিত্বের সঙ্গে শীর্ষ স্থানে চলে আসেন। সম্মিলিত তালিকায় ৭ম এবং মেয়েদের মধ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করে আপন বৈশিষ্ট্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়কে আরও মজবুত করলেন। আর পেছনে ফিরে তাকাবার অবকাশই পেলেন না। দীপ্ত মনো বলে, নিবেদিত পাঠকের ব্রত নিয়ে, নিরন্তর জ্ঞানচর্চাকে নিয়ামক হিসেবে বিবেচনায় এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্সে কৃতিত্বের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করলেন। চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে আরও বিস্ময় আর মুগ্ধতা। শুধুমাত্র বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম নয় পুরো সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম বিবেচিত হয়ে স্বর্ণপদক লাভের বিরল গৌরবও অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলও কৃতিত্বের ধারাবাহিকতার থেকে চ্যুত হলো না। এখানেও বিভাগীয় এবং অনুষদে সর্বোত্তমের মর্যাদায় অভিষিক্ত হলেন গোল্ড মেডেল নিয়ে। পরবর্তী সাফল্যের জন্য তাকে আরও ভাবতে হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবেও ইউজিসি তাকে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি দিয়ে সম্মানিত করেছে। এক সময় অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পূর্ণ আর্থিক সহায়তায় সেখানকার ফ্লিন্ডারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী পিএইচডি অর্জন করে নিজের অবস্থানকে নিরন্তর শক্ত করেছেন। সুদর্শনা এবং নিরহঙ্কারী ফারাহার সঙ্গে আলাপচালিতায় বোঝার উপায়ও থাকে না তার জ্ঞানের পরিধি কতখানি বিস্তৃত। একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিজের স্নেহ আর ছায়ায় বড় করার চেষ্টা করছেন। একজন সচেতন নারী হিসেবে নারী স্বাধীনতা, অধিকার, মর্যাদা আর ক্ষমতায়ন নিয়ে তার গবেষণার জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্যতা, লিঙ্গ সমতা এবং উন্নয়নকে গবেষণার আঙ্গিকে সম্পৃক্ত করতে গিয়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে স্পষ্ট করার প্রয়াস পান। এই লক্ষ্যে গত দশ বছর ধরে তিনি সামগ্রিক নারী জাতির উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এবং সমতাভিত্তিক অধিকারের জন্য শুধু প্রবন্ধ কিংবা তথ্য উপাত্তে নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। উপরন্তু অধিকার আদায়ের সমস্ত লড়াইয়েও নিজের অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছেন। মাত্র ৩২ বছর বয়সে পিএইচডি সম্মান অর্জন করা ফারাহ মনে করেন শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সাফল্যে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু রাজনৈতিক সচেতনতা কিংবা অধিকার আদায়ের প্রতি মেয়েদের বড় ধরনের একটা ঘাটতি কিংবা বিচ্যুতি রয়েছে যা তাদের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিনায় পা ফেলতে সাবধান এবং সতর্ক করছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে নারী প্রগতির পূর্ণাঙ্গ সূচকে কখনও পৌঁছানো যাবে না। নির্যাতন, সহিংসতা, মধ্যযুগীয় বর্বরতার থেকে রেহাই পেতে গেলে অধিকার, কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক পন্থায় আয়ত্তে আনার বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। এ ব্যাপারে সচেতনতা এবং জাগরণকে বিশেষভাবে কাজে লাগিয়ে নারীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরী।
×