ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিনিটের মধ্যে ক্যাপচা সমাধান করে রোবট

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

মিনিটের মধ্যে ক্যাপচা সমাধান করে রোবট

মাত্র কয়েক মিনিট সময়ের ব্যবধানে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারকারী যন্ত্র ক্যাপচা (captcha) নামক এলোমেলো অক্ষরের ক্রম শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ইন্টারনেটে ওয়েব ব্যবহারকারী মানুষ এবং স্প্যাম ছড়ানো রোবটদের পৃথক করতে ব্যবহৃত হয় এ ধরণের ক্যাপচা । captcha-এর পূর্ণরূপ হলো completely automated public turing test to tell computers and humans apart অর্থাৎ কম্পিউটার এবং মানুষদের আলাদা করার জন্য সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ট্যুরিং পরীক্ষা। এ পরীক্ষাগুলো মানুষের জন্য সহজ হয়ে থাকে কিন্তু যে কোন কম্পিউটারের এগুলো সমাধানে বেশ বেগ পেতে হয়। এই ক্যাপচা সমাধানকারী রোবট তৈরিকারী এ আই কোম্পানি ভিকারিয়াস জানায় যে তাদের পদ্ধতিটি আরও ব্যাপক এবং মানুষের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পথ নির্দেশ করে। ভিকারিয়াসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিলীপ জর্জ যন্ত্রের খুব সামান্য তথ্য থেকে শেখা এবং তা ব্যবহার করার ক্ষমতা প্রসঙ্গে লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই ছোট একটি পদক্ষেপ। কিন্তু আপনি যদি সর্বজনীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে যেতে চান, তাহলে এই জিনিসগুলো আপনাকে বিবেচনা করতে হবে।’ জর্জ বলেন, ‘টেক্সট-ভিত্তিক ক্যাপচা কার্যকর হয় কারণ এতে যে সকল বিকৃত ও আংশিক লুকানো অক্ষর থাকে সেগুলো শনাক্ত করা মানুষের তুলনায় কম্পিউটারের জন্য অনেক কঠিন। যদিও এমন অনেক যান্ত্রিক শিখন পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে এগুলো সমাধান করা সম্ভব, এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে লাখ লাখ ছবি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিতে হয়।’ অন্যদিকে, ভিকারিয়াস নির্মিত মেশিনটিকে কয়েক মিনিট সময়ের মধ্যে মাত্র কয়েক শত আক্ষরিক উদাহরণের সাহায্যে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। গবেষকদের মতে, এটি বিভিন্ন ধরনের ক্যাপচা নিয়ে কাজ করে এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে এটি হাতের লেখা, বাস্তব দৃশ্যপটের ছবিতে ছাপানো অক্ষর এবং বিভিন্ন ছবিতে অনাক্ষরিক বস্তুও শনাক্ত করতে সক্ষম। জর্জের এক বিবৃতি থেকে জানা যায় এর কারণ ভিকারিয়াস সিস্টেমটিকে এমনভাবে নকশা করেছে যাতে তা মানব মস্তিষ্কের অল্পসংখ্যক উদাহরণ দেখেই বস্তু শনাক্ত করা এবং অপরিচিত নতুন আঙ্গিকে তাদের প্রদর্শন করা হলেও সেগুলো চিনতে পারার প্রক্রিয়াকে অনুকরণ করতে পারে। লাইভ সায়েন্সকে তিনি বলেন, ‘লাখ লাখ বছরের বিবর্তন ধরে প্রকৃতি একটি বিন্যাস সৃষ্টি করেছে। আমরা স্নায়ুবিজ্ঞান থেকে জানতে পারি এই বিন্যাসটি কি এবং এর গঠনটি আমাদের মডেলের উপর প্রয়োগ করে দেখতে পারি যাতে তা মডেলটির জন্য দ্রুত শিখতে পারা সহজতর করে তোলে। ভিকারিয়াস ২০১৩ সালে একটি ক্যাপচা সমাধানকারী এআই ঘোষণা করে, কিন্তু কোন পত্রিকায় এর গবেষণা সম্বন্ধে কিছু প্রকাশ করে না। ফলাফলস্বরূপ সমালোচকরা তাদের দাবিকে স্বীকৃতি দেয়ার পূর্বে একটি সমীক্ষা ডাকায়। সম্প্রতি ভিকারিয়াস সায়েন্স পত্রিকায় তাদের তথাকথিত রিকার্সিভ কর্টিক্যাল নেটওয়ার্ক, সংক্ষেপে আরসিএন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা প্রকাশ করেছে। ইয়াহু ও পেপ্যালের মতো প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যবহৃত ক্যাপচার উপর কোম্পানি তাদের সিস্টেমটি পরীক্ষা করে। তারা নামকরা সংস্থা রিক্যাপচা ও বট ডিটেক্টের বিভিন্ন টেক্সটভিত্তিক ক্যাপচার উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখে শতকরা ৫৭ থেকে ৬৭ ভাগ পরিসরে সিস্টেমটি সঠিক উত্তর প্রদান করে, যা বট বা ওয়েব রোবট রোধের ক্ষেত্রে কার্যকারিতায় গবেষকদের নির্ধারিত ১ শতাংশ হতে অনেক বেশি। কোম্পানি জানায় সিস্টেমটিকে সংশোধন করে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যাপচার জন্য বিশেষায়িত করা হলে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। অনেক ওয়েবসায়েট টেক্সটভিত্তিক ক্যাপচার ব্যবহার থেকে সরে এসে বর্তমানে ইমেজভিত্তিক পরীক্ষা এবং মাউসের নাড়াচাড়া বা ব্রাউজ কুকির ডাটার সাহায্যে ব্যবহারকারী মানুষ নাকি কম্পিউটার তা বিশ্লেষণ করে থাকে। তবে গবেষকদের মতে এই ধাঁধাগুলো আরও মানসম্মত এআই পরীক্ষাকার্য পরিচালনার জন্য কার্যকরী প্রমাণিত হতে পারে। জর্জ জানান, ‘যেখানে যান্ত্রিক শিখন পদ্ধতিতে একটি যন্ত্র একটি সমগ্র ছবিকে কেবল বিশ্লেষণ করে এর নকশাটাকে পিক্সেলে সাজানোর চেষ্টা করে। এর মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি প্রক্রিয়া এমনভাবে কাজ করে যাতে করে একটি দৃশ্যের বস্তুগুলোর আরও সমৃদ্ধ মডেল কল্পনা করতে পারে। এমনটা করার একটি উপায় হলো বস্তুর পৃষ্ঠের অবয়ব থেকে বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা করে একটি আকারের পরিসীমা নির্ধারণ করে তাকে বর্ণিল করে তোলা। এ কারণে মানুষ খুব সহজেই একটা কলাকে স্ট্রবেরির বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হিসেবে কল্পনা করতে পারে, যদিও সে এটি আগে কখনও দেখেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানব মস্তিষ্কের এই কৌশলটি কেবল একটা বস্তু দেখতে কেমন হতে পারে তার একটি অধিকতর বোধগম্যতা প্রদান করে তাইই নয়, এর অর্থ নতুন পরিস্থিতিতে কোন বস্তুকে সুনিশ্চিতিভাবে চিহ্নিত করতে আপনার সম্ভাব্য সকল আকার ও গঠনবিন্যাসের সমন্বয় দেখার প্রয়োজন নেই।’ এই প্রক্রিয়াটি সিস্টেমের গঠনে স্থাপন করার মাধ্যমে গবেষকরা এমন একটি এআই তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যা কমসংখ্যক উদাহরণ থেকে শিখতে পারে এবং আরও ব্যাপক পরিসরের কাজে ভাল ফল এনে দেখাতে পারে। তারা মস্তিষ্ক অনুপ্রাণিত আরও কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন যা একটি বস্তুতে মনোযোগ স্থাপন এবং পারিপার্শ্বিক অন্য সবকিছু থেকে সেটিকে আলাদা করে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-অধ্যাপক ব্রেনডেন লেক, যিনি জ্ঞান ও তথ্য বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে থাকেন, বলেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখায় সম্প্রতি বেশ কিছু অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও মানুষের সমকক্ষতায় পৌঁছাতে যন্ত্রের এখনও দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। তিনি লাইভ সায়েন্সকে ই-মেইলে জানান, ‘মানুষ সর্বাধিক উন্নত যান্ত্রিক পদ্ধতি থেকেও অনেক অল্পসংখ্যক উদাহরণ হতেই নতুন ধারণা নিতে পারে এবং সেটিকে আরও ক্ষমতাসীন পর্যায়ে আয়ত্তে আনতে পারে। এই গবেষণাপত্রটি দেখায় জ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞানের নীতিগুলোকে কাজে লাগিয়ে আরও মানবসাদৃশ ও শক্তিশালী যান্ত্রিক পদ্ধতি তৈরি করা যেতে পারে।’ জর্জ বলেন, ‘মানুষের জ্ঞানের অনুরূপ পদ্ধতি যন্ত্রের সিস্টেমে স্থাপন করার ফলে মানবসুলভ কিছু অপূর্ণতাও এতে চলে আসে, কারণ তাতে করে মানুষের দৃষ্টি প্রক্রিয়ায় যে সকল কাজ অসাধ্য বলে মনে হয়, এই যন্ত্রগুলোরও সেগুলো সম্পাদন করতে বেগ পেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যন্ত্রগুলোকে কিউআর কোড বুঝতে শিখানো কঠিন হয়ে পরবে।’ সূত্র : রোবটিক সায়েন্স ও লাইভ সায়েন্স
×