ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

বেড়িয়ে আসুন পঞ্চনদী বেষ্টিত জেলা ফেনী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

বেড়িয়ে আসুন পঞ্চনদী বেষ্টিত জেলা ফেনী

পঞ্চ নদীর মুহুরী বাঁধ, ফেনী জেলার আশীর্বাদ’ নদী মাতৃক বাংলাদেশে রয়েছে শত নদী। বাহারী নামের এসব নদী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে বয়ে গেছে। প্রিয় পাঠক আজ আমরা আপনাদের ফেনী জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সম্পর্কে অবহিত করার চেষ্টা করব। ফেনী বৃহত্তর নোয়াখালীর জেলার একটি মহকুমা ছিল। পরবর্তীতে এটি জেলায় রূপান্তরিত হয়। ধারণা করা হয় ফেনী নদীর নাম অনুসারে ফেনী জেলার নামকরণ করা হয়েছিল। ফেনী জেলার উত্তরে রয়েছে কুমিল্লা ও ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে চট্টগ্রাম জেলা ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা এবং পশ্চিমে রয়েছে নোয়াখালী জেলা। শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ইতিহাস বিজড়িত জেলা ফেনী। নারী শিক্ষায় ও এ জেলার অগ্রগতি সত্যি প্রশংসার দাবিদার। ফেনীর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ফেনী নদী, মুহুরী নদীসহ কহুয়া, সিলোনিয়া নদী। ফেনী জেলা যেমন শিক্ষায় এগিয়ে তেমনি বিখ্যাত ব্যক্তিদের ও জন্মস্থান উক্ত জেলাটিতে। বরেণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলো, কবি নবীন চন্দ্র সেন, কবি হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী, ভাষাসৈনিক আব্দুস সালাম, ভাষা সৈনিক গাজিউল হক, শহীদ বুদ্ধিজীবী-সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সার, শহীদ বুদ্ধিজীবী-সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, নাট্যকার ও গবেষক সেলিম আলদীনসহ প্রমুখ গুণী ব্যক্তিরা। ফেনী জেলার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, হযরত শাহ সৈয়দ আমির উদ্দীন (রঃ) (পাগলা বাবার) মাজার/প্রাচীর সুড়ঙ্গ মঠ, ফুলগাজী/বিলোনিয়া সীমান্ত পোস্ট, পরশুরাম/শতবর্ষী চাঁদগাজী ভুঁঞা মসজিদ, ছাগলনাইয়া। রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান, বিশেষ করে মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকা/ফেনী সদর বিজয় সিংহ দীঘি এলাকা/ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর মৌজার পাহাড়ী এলাকা। এসব দর্শনীয় স্থান দেখতে প্রতিদিন মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। মুহুরী সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ‘মুহুরী সেচ প্রকল্প’। জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে মুহুরী সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং তা ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পাঠক, ফেনী নদী, মুহুরী নদী এবং কালিদাস পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে আড়ি বাঁধ নির্মাণের ফলে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদায়কার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করে ফেনী জেলা সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল মহুরী সেচ প্রকল্প। প্রিয় পাঠক, গত কয়েক বছর ধরেই ভ্রমণ প্রিয়সী মানুষের কাছে উক্ত স্থানটি নজর কাড়তে পেরেছে। শীত মৌসুমে অনেকেই ঘুরতে আসেন এখানে। মুহুরী সেচ প্রকল্প দেখতে সব বয়সী পর্যটকই ছুটে আসেন। কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কিচির-মিচির ডাকাডাকি ভ্রমণ প্রিয়সী পর্যটকদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। মুহুরীর জলরাশিতে নৌকা ভ্রমণের সময় বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস ও ৫০ এর মতো প্রজাতির পাখি দেখা যায়। বিজয় সিংহ দীঘি বাংলার বিখ্যাত সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ‘বিজয় সেন’। তাঁরই অমর কীর্তি ‘বিজয় সিংহ দীঘি’। দীঘিটি ফেনী শহর থেকে প্রায় ২ কিঃমিঃ পশ্চিমে ফেনী সার্কিট হাউসের সামনে অবস্থিত। মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা দীঘিটি খুবই দৃষ্টি নন্দনীয়। দীঘিটির চার পাড়েই বৃক্ষ দ্বারা বেষ্টিত। দীঘিটির সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা স্থানটিতে ভিড় জমান। লোকমুখে দীঘিটি ঘিরে রয়েছে নানা কল্প-কাহিনী। শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও জাদুঘর শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও জাদুঘর ফেনী জেলায় অবস্থিত। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনে রাজপথের লড়াকু সৈনিক ছিলেন আবদুস সালাম। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকার রাজপথে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে তিনি পুলিশের গুলিতে আহত হন। পরে প্রায় দেড় মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুর কাছে হার মানেন। তাঁর নামানুসারেই গ্রন্থাগার ও জাদুঘরের নামকরণ করা হয়। ১৯২৫ সালে ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার লক্ষণপুর গ্রাম (পরবর্তীতে তার নামানুসারে গ্রামের নামকরণ করা হয় সালাম নগর)। সালাম নগরেই ভাষা শহীদ আবদুস সালাম এর স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠা করা হয় তাছাড়া তাঁর নামানুসারে ফেনী স্টেডিয়াম এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, ‘ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়াম। বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী জাদুঘর দেখতে ভিড় জমান। এছাড়া ফেনী জেলায় আরও রয়েছে, দৃষ্টিনন্দন ফেনী সার্কিট হাউস, ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় রয়েছে প্রাচীন এক শীলা পাথর যা কি না শিলুয়ার শীল পাথর নামে আখ্যায়িত। আরও রয়েছে, শমসের গাজীর দীঘি, কৈয়ারা দীঘি, রাজাঝির দীঘি, সিলোনীয়া দীঘি। এছাাড়া ফেনীর নদীগুলোর প্রাকৃতিক দৃশ্য নজর কারে সেখানে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীদের। কিভাবে যাবেন ফেনীতে? ঢাকা থেকে স্থলপথে ফেনীতে আসার সুব্যবস্থা রয়েছে। গাড়িতে চেপে আসতে খরচা হবে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। সময়ের তারতম্য ও যাতায়াতের গাড়ি বিবেচনায় ভাড়ায় তারতম্য হতে পারে।
×