ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকাই ‘আরব বসন্ত’ সৃষ্টি করেছিল

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

আমেরিকাই ‘আরব বসন্ত’ সৃষ্টি করেছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিরীয় বংশোদ্ভূত আরবী ভাষার প্রতিনিধিত্বকারী কবি অ্যাডোনিস। বিংশ শতকে তার নেতৃত্বে সূচনা হয় আরবী সাহিত্যের আধুনিকতাবাদের আন্দোলন। তার কবিতা রাজনীতিনির্ভর ও মানুষে মানুষে সাম্যের ভাবনায় সমৃদ্ধ। মানবিক সমাজ বিনির্মাণের ভাবনাতাড়িত এই কবি নানা বিষয়ে কথা বললেন ঢাকা লিট ফেস্টের একটি অধিবেশনে। সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেয়া কবি আলোচনার পাশাপাশি এটিকে সমগ্র বাংলাদেশেও ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী ‘লেদার প্রডাক্ট শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চামড়া খাতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আগামী ৫ বছর অব্যাহত রাখার বিষয়টি আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়ার এ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০১৭’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ‘থিংক এ্যাহেড, থিংক বাংলাদেশ’ শীর্ষক থিম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আইসিসিবির অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। এলএফএমইএবির সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম এবং বিশিষ্ট উদ্যোক্তা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে পূর্বে রেকর্ডকৃত শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এবং ভারপ্রাপ্ত এফবিসিসিআই সভাপতি ফজলে ফাহিমের বক্তব্যও প্রচার করা হয়। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট এ্যাডভাইজার সালমান এফ রহমান এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিকবৃন্দ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এবং চামড়া খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীবৃন্দ আইসিসিবির অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে অনুষ্ঠানে একটি অডিও ভিজুয়াল পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ ১৫ দেশের চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এই লেদার শোতে অংশগ্রহণ করছেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশে বিনিয়োগ ও রফতানিতে চামড়া প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে। এই খাতের উৎপাদনশীলতা এবং গুণগত উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে আরও সহায়ক হবে এই অনুষ্ঠানটি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বৈশ্বিক ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের রুলস অব অরিজিন সম্পর্কে আরও আকৃষ্ট করবে। ২০১৭ সালের জন্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে আমরা ‘বর্ষপণ্য ২০১৭’ হিসেবে ঘোষণা করেছি (প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ২০১৭)। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া খাত হতে ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, সম্প্রতি অধিকাংশ টেনারি আমরা হাজারীবাগ থেকে সাভারে নিয়ে গেছি। সাভারে পরিবেশসম্মতভাবে এই শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে এবং একে ঘিরে যেন আরও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নেব। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মান এবং স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার জন্য বেসরকারী খাত সহযোগে একটি টেস্টিং ও ক্যালিব্রেশন সেন্টার স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আয়কর রেয়াত ওয়েট ব্লু লেদার ব্যতীত চামড়া খাতে এফওবি রফতানি মূল্যের ওপর একশ’ ভাগ এক্সপোর্ট পারফর্মেন্স লাইসেন্স সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে যাতে রফতানিটা আরও সহজ করা যায়। সেই সঙ্গে ওয়েট ব্লু উৎপাদনকারী ট্যানারিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে ফিনিশ্ড চামড়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের ক্ষেত্রে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগও প্রদান করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প স্থানান্তরের প্রণোদনা হিসেবে সাভার ট্যানারি শিল্পাঞ্চল থেকে ফিনিশড চামড়া রফতানির ক্ষেত্রে শতকরা ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা রফতানির ক্ষেত্রে ১৫ ভাগ নগদ সহায়তা আমরা দিচ্ছি। চামড়া ক্ষেত্রে শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় মেশিনারি আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে স্বল্প সুদে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও রফতানি নীতি ২০১৫ থেকে ২০১৮ তে এই খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। লেদার খাত বিজনেস কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্রান্ড বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের কাজ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য সোর্সিং করা হচ্ছে। চামড়া খাতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আগামী ৫ বছর অব্যাহত রাখার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটা পাবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চামড়া খাতে অধিক সহায়তা প্রদানের পেছনে রয়েছে এর অমিত সম্ভাবনা। খাতটি একদিকে একটি অত্যন্ত শ্রমঘন শিল্প যা বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে সক্ষম; অন্যদিকে এর শতভাগ কাঁচামাল আমাদের দেশেই বিদ্যমান রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন নীতি ও আর্থিক সহায়তা কাজে লাগানোর ফলেই খাতটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয় অর্জনকারী খাত হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, যথাযথভাবে এই খাতকে কার্যকর করা হলে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে স্থিরকৃত ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এই খাত ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশে প্রতিনিয়ত যে সমস্ত পশু জবাই হয় তার চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার এবং এই শিল্পের দিকে আরও বিশেষভাবে নজর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
×