ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় তিন দিনব্যাপী রাধারমণ সঙ্গীত উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

শিল্পকলায় তিন দিনব্যাপী রাধারমণ সঙ্গীত উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব পেয়েও না পাওয়ার কষ্ট তাকে সাধকে পরিণত করেছে। দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইলসহ নানান ধরনের কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন। বাংলা লোকসঙ্গীতের পুরোধা এই ব্যক্তিত্ব রাধারমণ দত্ত। তিনি নিজের মেধা ও দর্শনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে মরমী এই শিল্পীর গান নিয়ে ‘রাধারমণ সঙ্গীত উৎসব’। এই বৈষ্ণব সাধকের এক শ’ দুইতম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সপ্তমবারের মতো তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে যৌথভাবে রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বিকেলে উৎসবের উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ লোকশিল্পী সুষমা দাশ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, পিএসসির সদস্য সমর পাল ও সাবেক সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের সভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুভ সূচনা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরাস উদ্দীন বলেন, নানান কারণে কখনও কখনও মানুষের মন বিক্ষিপ্ত হয়। ক্ষতবিক্ষত হয়। মানুষ বিমর্ষ হয়। সে সময় সাধক রাধারমণের গান শুনলে মনে এক ধরনের স্থিরতা আসে। তার গানের ভেতর প্রেমের পাশাপাশি মানুষ ও অসাম্প্রদায়িকতা উঠে এসেছে। তরুণ প্রজন্ম তার এসব গানের দর্শন থেকে শিক্ষা নিলে বাংলাদেশে একদিন অসাম্প্রদায়িকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে। অন্য বক্তারা বলেন, রাধারমণ দত্ত কিশোর বয়স থেকে সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সৃষ্টিকর্তার স্বরূপ অনুসন্ধানে মনোনিবেশ করেন। এজন্য তিনি বিভিন্ন সাধুসন্তের আদেশ-উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতেন। শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব মতবাদের ওপর ব্যাপক পড়াশোনা করেন। সবশেষে তিনি সহজিয়া মতে সাধন-ভজন করেন। তিনি কৃষ্ণভাবে বিভোর হয়ে রাধাকৃষ্ণ প্রেমলীলা নিয়ে লোকগান রচনা করেন। তিনি ভজন সঙ্গীতে বিভোর হয়ে গান রচনা করে নিজেই তা গাইতেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ভাবরসে বিভোর হয়ে গীত রচনা করতেন। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল রাধারমণের গান। এ পর্বের শুরুতে উদ্বোধক সুষমা দাশ গাইলেন ‘ও আমার শ্যাম বিনে প্রাণ বাঁচে না’সহ রাধারমণের কয়েকটি গান। শিল্পী দিল আফরোজ রেবা পরিবেশন করেন রাধারমণের গান ‘শ্যাম দাও আনিয়া বৃন্দে গো’ ও ‘কালায় প্রাণটি নিল বাঁশিটি’। আকরামুল ইসলাম পরিবেশন করেন ‘ও প্রাণ বিন্দে’। দিপ্তী রাজবংশী গেয়ে শোনান ‘বাঁশিরে পরানের বাঁশি’ ও ‘আমারে বন্ধুয়ার মনে নাই’। আবুবকর সিদ্দিকের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘কারে দেখাবো মনে দুঃখ’ ও ‘আমার বন্ধু দয়াময়’। বিশ্বজিৎ রায় গেয়ে শোনান ‘গৌর নামের চলছে গাড়ি’ ও ‘হরি গুণগুণ কৃষ্ণ গুণগুণ’। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে আরও সঙ্গীত পরিবেশন করেনÑ শিল্পী শাহনাজ বেলী, নওশিন লায়লা, খগেন সরকার, অনিমা মুক্তি গোমেজ, সন্দীপন, সুতপা রায়, চম্পা বণিক, খায়রুল ইসলাম, মানিক, মুগ্ধ সরকার, সালাম, শরীফা নাজনীন তৃপ্তি ও মুক্তা। দলীয় সঙ্গীতে অংশ নেয় রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র ও মন্দিরা শিল্পীগোষ্ঠী। প্রয়াত রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত ও সঙ্গীতজ্ঞ করুণাময় গোস্বামীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এ উৎসব প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। আজ শুক্রবার সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, স্বপ্না দেবনাথ, লিংকন দাস, শঙ্করী চন্দসহ অনেকে। উৎসবের শেষ দিন আগামীকাল শনিবার সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও হবিগঞ্জের শিল্পীরা। বেঙ্গল থিয়েটারের ‘জলপুত্র’ মঞ্চস্থ কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস ‘জলপুত্র’। উপন্যাসটিকে নাট্যরূপ দিয়েছেন রুমা মোদক। বেঙ্গল থিয়েটারের প্রযোজনা ‘জলপুত্র’ নাটকের চতুর্থ মঞ্চায়ন হয় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
×