ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘লেদার প্রোডাক্ট শো’র উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রাম-রাজশাহীতে আরও দু’টি চামড়া শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রাম-রাজশাহীতে আরও দু’টি চামড়া শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চামড়াশিল্পের আরও বিকাশের জন্য চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে নতুন দুটি চামড়া শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, আমাদের আরও পরিকল্পনা আছে; মূলত রাজশাহী বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের দুটি জায়গায় নতুন দুটি চামড়া শিল্পাঞ্চল আমরা গড়ে তুলব। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। শুধু ঢাকায় করলে হবে না এটিকে সমগ্র বাংলাদেশেও ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী ‘লেদার প্রডাক্ট শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চামড়া খাতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আগামী ৫ বছর অব্যাহত রাখার বিষয়টি আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়ার এ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০১৭’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ‘থিংক এ্যাহেড, থিংক বাংলাদেশ’ শীর্ষক থিম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আইসিসিবির অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। এলএফএমইএবির সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম এবং বিশিষ্ট উদ্যোক্তা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে পূর্বে রেকর্ডকৃত শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এবং ভারপ্রাপ্ত এফবিসিসিআই সভাপতি ফজলে ফাহিমের বক্তব্যও প্রচার করা হয়। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট এ্যাডভাইজার সালমান এফ রহমান এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিকবৃন্দ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এবং চামড়া খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীবৃন্দ আইসিসিবির অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে অনুষ্ঠানে একটি অডিও ভিজুয়াল পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ ১৫ দেশের চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এই লেদার শোতে অংশগ্রহণ করছেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশে বিনিয়োগ ও রফতানিতে চামড়া প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে। এই খাতের উৎপাদনশীলতা এবং গুণগত উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে আরও সহায়ক হবে এই অনুষ্ঠানটি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বৈশ্বিক ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের রুলস অব অরিজিন সম্পর্কে আরও আকৃষ্ট করবে। ২০১৭ সালের জন্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে আমরা ‘বর্ষপণ্য ২০১৭’ হিসেবে ঘোষণা করেছি (প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ২০১৭)। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া খাত হতে ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, সম্প্রতি অধিকাংশ টেনারি আমরা হাজারীবাগ থেকে সাভারে নিয়ে গেছি। সাভারে পরিবেশসম্মতভাবে এই শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে এবং একে ঘিরে যেন আরও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নেব। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মান এবং স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার জন্য বেসরকারী খাত সহযোগে একটি টেস্টিং ও ক্যালিব্রেশন সেন্টার স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আয়কর রেয়াত ওয়েট ব্লু লেদার ব্যতীত চামড়া খাতে এফওবি রফতানি মূল্যের ওপর একশ’ ভাগ এক্সপোর্ট পারফর্মেন্স লাইসেন্স সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে যাতে রফতানিটা আরও সহজ করা যায়। সেই সঙ্গে ওয়েট ব্লু উৎপাদনকারী ট্যানারিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে ফিনিশ্ড চামড়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের ক্ষেত্রে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগও প্রদান করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প স্থানান্তরের প্রণোদনা হিসেবে সাভার ট্যানারি শিল্পাঞ্চল থেকে ফিনিশড চামড়া রফতানির ক্ষেত্রে শতকরা ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা রফতানির ক্ষেত্রে ১৫ ভাগ নগদ সহায়তা আমরা দিচ্ছি। চামড়া ক্ষেত্রে শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় মেশিনারি আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে স্বল্প সুদে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও রফতানি নীতি ২০১৫ থেকে ২০১৮ তে এই খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। লেদার খাত বিজনেস কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্রান্ড বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের কাজ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য সোর্সিং করা হচ্ছে। চামড়া খাতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আগামী ৫ বছর অব্যাহত রাখার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটা পাবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চামড়া খাতে অধিক সহায়তা প্রদানের পেছনে রয়েছে এর অমিত সম্ভাবনা। খাতটি একদিকে একটি অত্যন্ত শ্রমঘন শিল্প যা বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে সক্ষম; অন্যদিকে এর শতভাগ কাঁচামাল আমাদের দেশেই বিদ্যমান রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন নীতি ও আর্থিক সহায়তা কাজে লাগানোর ফলেই খাতটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয় অর্জনকারী খাত হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, যথাযথভাবে এই খাতকে কার্যকর করা হলে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে স্থিরকৃত ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এই খাত ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশে প্রতিনিয়ত যে সমস্ত পশু জবাই হয় তার চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার এবং এই শিল্পের দিকে আরও বিশেষভাবে নজর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান। ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে শান্তির বারতা দুই শতাধিক সাহিত্যিক ও শিল্পীর মিলনমেলা মনোয়ার হোসেন ॥ গোটা বিশ্ব যখন আক্রান্ত উগ্রপন্থায় তখন সাহিত্যের আলোয় জ্বলে উঠল শহর ঢাকা। গদ্য-পদ্যসহ সাহিত্যের নানা বিষয়ক অধিবেশনে সাজানো আলোচনায় উচ্চারিত হলো মানবতার বাণী। ধর্মান্ধতার ছোবলের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা ছড়াল সাহিত্য সম্মেলনে। মুক্তচিন্তার প্রকাশে যখন খুন হতে হয় লেখক বা ব্লগার তখন প্রতিবাদী চরিত্রে ধরা দিল ঢাকা লিট ফেস্ট। সেই সুরে সুর মিলিয়ে আরব বিশ্বের প্রভাবশালী সিরীয় কবি অ্যাডোনিস বললেন, ‘ধর্মের ভিত্তিতে নয়, সমাজ গড়ে উঠবে মানবিকতার আশ্রয়ে’। কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক, চিন্তক ও গবেষকের প্রাণবন্ত কথনে আলোড়িত হলো সাহিত্যের উদ্্যাপনের এ উৎসব। সাহিত্যের সঙ্গে শিল্পের মেলবন্ধনে সবুজ আঙিনায় আবৃত বাংলা একাডেমির নানা প্রান্তে উদ্ভাসিত হলো সুন্দরের প্রতিচ্ছবি। উৎসবের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য-বিজ্ঞান-রাজনীতিসহ নানা বিষয়কী ৩১টি অধিবেশন। চার লেখককে প্রদান করা হয়েছে জেমকন সাহিত্য পুরস্কার। আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশের ওপর চেপে মিয়ানমার ইস্যুতে। উচ্চারিত হয়েছে বলপূর্বক মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি। তিনদিনের উৎসবে সম্পৃক্ত হয়েছে বিশ্বের ২৪ দেশের দুই শতাধিক শিল্পী-সাহিত্যিক। দেশের সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে এবং বিশ্বসাহিত্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্তির প্রত্যাশায় বৃহস্পতিবার সূচনা হলো এ উৎসবের। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এ সাহিত্য উৎসব ছড়িয়েছে ভাষার সীমানা পেরুনো আন্তর্জাতিক আবহ। সপ্তমবারের মতো ২০১৭ সালের ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজক যাত্রিক। সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় সহযোগিতা করেছে বাংলা একাডেমি। পুরো উৎসব পরিচালনা করছেন কথাসাহিত্যিক কাজী আনিস আহমেদ, কবি সাদাফ সায্্ সিদ্দিকী ও কবি আহসান আকবার। এবারের উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউন, সহ-পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। দিনভর ঝিরিঝিরি বৃষ্টিকে উপেক্ষা সাহিত্য ও শিল্পরসিকরা সমাগত হয়েছেন উৎসবে। উৎসবের প্রথম দিনে তাঁবুতে তাঁবুতে চলছে সাহিত্যের আলোচনা। মঞ্চে হয়েছে সাহিত্যবিষয়ক বহুমাত্রিক আলাপ। উঠে এসেছে গল্প-উপন্যাস বিষয়ে দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের ভাবনা। সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত লনে ভেসে বেড়িয়েছে গানের সুর। কোন মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে আবার কোন মঞ্চে হয়েছে কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠ। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন, কবি শামসুর রাহমান সেমিনার হল, লন, ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনী কক্ষ, কসমিক টেন্ট ও নজরুল মঞ্চজুড়ে সাজানো হয়েছে আয়োজন। এছাড়া উৎসবের চারপাশজুড়ে দেশ-বিদেশের রকমারি বইয়ের সম্ভারে সেজেছে বুক স্টল। বৃহস্পতিবার বর্ষণমুখর সকালে বাহাই সম্প্রদায়ের অনুসারীদের আধ্যাত্মিক গান আর কবিতার সুর মূর্ছনায় শুরু হয় আন্তর্জাতিক এ সাহিত্য সম্মেলন। এরপর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছিল মণিপুরী থিয়েটারের পরিবেশনায় ছিল ‘পুং চোলম’। এর পরেই শুরু হয় উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। উৎসবের উদ্বোধন করেন সিরিয়ান কবি অ্যাডোনিস। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং উৎসবের তিন পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্্ সিদ্দিকী ও আহসান আকবার। উদ্বোধনী মঞ্চেই উন্মোচিত হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’। লিট ফেস্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অ্যাডোনিস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। ‘মুজিব’ বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকা ট্রান্সলেশন সেন্টার। উদ্বোধনী বক্তব্যে কাজী আনিস বলেন, ভাষাভাষীর দিক থেকে বাংলা পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। এই সংস্কৃতি আমাদের এতই ঘিরে রাখে যে আমরা অন্য দেশের সংস্কৃতির দিকে তাকানোর সুযোগ পাই না। কাজী আনিস আরো বলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেয়ার কথা বলেছিলেন। আমরাও চাই, আমাদের ভাষা-সাহিত্যকে এগিয়ে নিতে, বিশ্বের সামনে আমাদের ভাষা-সাহিত্যকে তুলে ধরতে। লিট ফেস্টেও আমাদের মূল মনোযোগের জায়গাতে থাকে আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। সবার বক্তব্য শেষে ফরাসী, আরবী ও স্প্যানিশ ভাষায় লিট ফেস্টের উদ্বোধন ঘোষণা করেন কবি আদোনিস। লিট ফেস্ট উদ্বোধন শেষে ঢাকা ট্রান্সেলশন সেন্টারের উদ্যোগে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তৈরি গ্রাফিক নভেলার মোড়ক উন্মোচন করেন আদোনিস। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় অধিবেশনের পালা। শুরুতেই কায়সার হকের সঞ্চালনায় অ্যাডোনিস বলেন, ধর্মের ব্যবহারের কারণে রাজনীতি দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা নয়। এ দুটোকে এক করে ফেলা হয়। অথচ ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত চর্চার বিষয়। ধর্মকে অন্য কোন কিছুর সঙ্গে মেলানো ঠিক না। এর পর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘মুজিব : টেকিং হিস্টোরি টু দ্য নেক্সট জেনারেশন’ শীর্ষক অধিবেশনে আলোচনা করেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান সিদ্দিক মুজিব, গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’র শিল্পী সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়, যুক্তরাজ্যের ‘গ্রান্টা’র অনলাইন সম্পাদক লুক নাঈমা, আরজু ইসমাইল ও ভারতের সাহিত্যিক জেরি পিনটো। একই সময় কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘দ্য শর্ট অব আইটি’ শীর্ষক অধিবেশনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের সাহিত্যিক নাদিম জামানের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের সাহিত্যিক নাদিরা কবির বার্ব, পাকিস্তানের আমির হুসাইন ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক সালাউদ্দিন ইমাম। লনে কথাসাহিত্যিক আহমেদ মুস্তাফা কামালের সঞ্চালনায় নিজের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনীলয়ে ‘বিউটিফুল অ্যানিমেলস’ শীর্ষক অধিবেশনে ‘গ্রান্টা’র সম্পাদনা সহযোগী এলিনেয়র চান্ডালারের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক লরেন্স অসবর্ন। কসমিক টেন্টে ‘বাংলার নারী, দুর্জয় ঘাঁটি’ শীর্ষক অধিবেশনে টেলিভিশন উপস্থাপিকা মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সাংবাদিক নবনীতা চৌধুরী ও মাসুদা ভাট্টি। প্রথমদিনের উৎসবের দিন শেষের আকর্ষণ ছিল শেরিফ আল সায়ারের সঞ্চালনায় রোহিঙ্গা ও মানবতা শীর্ষক আলোচনা। এতে অংশ নেন বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, সম্পদ বড়ুয়া হারুন উর রশীদ, তপোধীর ভট্টাচার্য। বক্তাদের আলোচনায় রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অভূতপূর্ব উদ্যোগ, বাংলাদেশী মানুষের প্রচেষ্টার কথা বার বার উঠে আসে। পাশাপাশি এই সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর ভূমিকার কথাও উঠে আসে। বক্তারা আশা করেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন। মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে এবং চাপমুক্ত হবে বাংলাদেশ। এদিনের অধিবেশনের মধ্যে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘স্টেজিং স্টোরিজ’ অধিবেশনে অংশ নেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও যুক্তরাজ্যে নাট্যকার-চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেভিড হেয়ার। এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন টেলিভিশন অভিনেতা ইরেশ যাকের। কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘ফেক্্ নিউজ’ শীর্ষক অধিবেশনে সাংবাদিক প্রভাষ আমিনের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক গর্গ চট্টোপাধ্যায়, ব্লগার আরিফ জেবতিক, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও বাংলা ট্রিবিউন সম্পাদক জুলফিকার রাসেল। লনে ‘ওয়ার্ডস্্ অফ কনসিয়েন্স : পোয়েট্রি এ্যান্ড এ্যাক্টিভিজম’ শীর্ষক অধিবেশনে লুক্সেমবার্গ রিভিউয়ের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ শেহজার দো’জার সঞ্চালনায় আলোচনা করেন নওশিন ইউসুফ, কায়সার হক ও সোফিয়া ওয়াকার। ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনীলয়ে ‘দ্য বেঙ্গলিস্্ : এ রেস ডিভাইডেড’ শীর্ষক অধিবেশনে পেঙ্গুইন ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড ডেভিডদারের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন ভারতীয় সাহিত্যিক সুদীপ চক্রবর্তী, কুশনভা চৌধুরী, ইসতিয়াক আহমেদ ও অনন্যা কবির। কসমিক টেন্টে ‘গল্পকার : সীমান যখন কেন্দ্র’ শীর্ষক অধিবেশনে গল্পকার সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন সৈয়দ আজাদ, কানু বসু মিশ্রা, মেরিনা নাসরিন ও মাসুদুল হক। নজরুল মঞ্চে ছিল ‘কবিতা : কিশোর মান্নান ও আবৃত্তি’ শীর্ষক পরিবেশনা। সোয়া চারটায় একসঙ্গে শুরু হয় ছয়টি অধিবেশন। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘ম্যাজিকাল টেলস’ অধিবেশনে নিজের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন নাইজিরিয়ার কথাসাহিত্যিক বেন ওকরি। তার এ অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক অশোক ফেরারি। কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘সাহিত্যের স্বদেশ বিদেশ’ শীর্ষক অধিবেশনে জাহিদ সোহাগের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন নাজমুন নেসা, আলীম আজিজ, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী ও মোজাফ্্ফর হোসেন। লনে ছিল ‘কস্টিক ওয়ার্কপ্লেস্্ এ্যান্ড কমিউটস্্’ শীর্ষক অধিবেশনে হংকংয়ের এশিয়ান লিটারি এ্যাজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা কেলি ফাকনারের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন কানাডার ঔপনাসিক ডেভিড স্যাজলি। ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনীলয়ে ‘আমেরিকা : এশিয়াস সেটিং সান’ শীর্ষক অধিবেশনে ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহানের সঞ্চালনায় অর্থনীতিবিষয়ক প্রাবন্ধিক ডোমিনিক জিগলার, ফিন্যান্সসিয়াল টাইমসের এশিয়াবিষয়ক সম্পাদক ভিক্টর ম্যালেট, যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক লরেন্স অসবর্ন ও জাপানের টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ কিংসটন। কসমিক টেন্টে ‘মিসরুল ব্রিটানিয়া’ শিরোনামে একক বক্তৃত্তা দেন প্রাবন্ধিক রড্রিক ম্যাথুয়েজ। নজরুল মঞ্চে ‘এমপারসেন্ড’ শীর্ষক অধিবেশনে তরুণ কবিরা কবিতা আবৃত্তি করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে প্রদান করা হয় ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’। এ বছর এ পুরস্কার পেয়েছেন কবি মোহাম্মদ রফিক, তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন আশরাফ জুয়েল ও মামুন অর রশীদ এবং তরুণ কবি হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন নুসরাত তুসিন। মোহাম্মদ রফিককে তার ‘দুটি গাথাকাব্য’ কাব্যগ্রন্থের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন ৮ লাখ টাকা, উত্তরীয়, বই, ক্রেস্ট এবং সম্মাননাপত্র। তরুণ কথাসাহিত্যিক আশরাফ জুয়েল এবং মামুন অর রশিদ যৌথভাবে পেয়েছেন জেমকন তরুণ সাহিত্য পুরস্কার। তাদের প্রত্যেকেই পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকার চেক, উত্তরীয়, বই, ক্রেস্ট এবং সম্মাননাপত্র। জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার পেয়েছেন নুসরাত নুসিন। তার কাব্যগ্রন্থ ‘দীর্ঘ স্বরের অনুপ্রাস’র পা-ুলিপির জন্য পাচ্ছেন এক লাখ টাকা। এটি ছিল দ্বাদশ জেমকন সাহিত্য পুরস্কার। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ পুরস্কার ঘোষণা করেন জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি জানান, বিচারকম-লীর সদস্যদের মতামত নিয়ে প্রথমবারের মতো তরুণ শাখায় কবিতায় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এই পুরস্কার আগামী দিনেও প্রচলন থাকবে। জেমকন সাহিত্য পুরস্কারের বিচারক ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, নন্দনতাত্ত্বিক তপোধীর ভট্টাচার্য, কথশিল্পী কিন্নর রায় এবং কথাশিল্পী মইনুল আহসান সাবের। জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কারের বিচারক ছিলেন কবি জহর সেন মজুমদার, কথাশিল্পী আকতার হোসেন, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, কথাশিল্পী জাকির তালুকদার ও কথাশিল্পী বল্লরী ঘোষ। জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কারের বিচারক ছিলেন কবি আসাদ মান্নান, কবি খালেদ হোসাইন, কবি কুমার চক্রবর্তী, কবি বিভাস রায় চৌধুরী এবং কবি সেবন্তি ঘোষ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পুরস্কার পর্ষদের সদস্য সচিব কবি শামিম রেজা। উৎসবের প্রথম দিনে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘গোস্টস অব দ্য সুনামি’ শীর্ষক অধিবেশনে পেঙ্গুইন ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড ডেভিডদারের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন দ্য টাইমস অব লন্ডনের এশিয়ার সম্পাদক রিচার্ড লয়েড পেরি। লনে ছিল ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ শিরোনামে আলোচনা। সুমন রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক সাজ্জাদ শরীফ, জাকির তালুকদার, সামিয়া হক ও সৈয়দ শফিউদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারি। কসমিক টেন্টে ‘ফ্রম পেজ টু স্ক্রিন’ শীর্ষক অধিবেশনে ইশতিয়াক আহমেদর সঞ্চালনায় আলোচনা করেন জনপ্রিয় মার্কিন টেলিভিশন সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’র সহলেখক শর্বরি আহমেদ। নজরুল মঞ্চে নওশিন ইউসুফের সঞ্চালনায় ছিল ‘আই ওয়ান্ট পোয়েম’। যাতে অংশ নেন মৌসুমী ব্যানার্জি, বিয়োগা চউল ও জেরি পিন্টো। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় ছিল দিনের শেষ অধিবেশনগুলো। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছিল নুহাশ হুমায়ূনের পরিচালনায় নির্মিত ‘পেপারফ্রগস্্’ চলচ্চিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘এ পাস্ট ডিভাইডেড’ শীর্ষক অধিবেশনে সারাহ সেহাউদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন অনন্যা কবির, আলী রিয়াজ, পারওয়ান হাসান ও তৌফিকুর রহমান খান। লনে ছিল ‘বাংলার মুখ-১’ শীর্ষক কবিতা পাঠের আয়োজন। যাতে কবিতা পাঠ করেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী, আসাদ মান্নান, মুহম্মদ সামাদ প্রমুখ। ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনীলয়ে ‘রোহিঙ্গা : বিপন্ন মানবতা’ শীর্ষক অধিবেশনে সেরিফ আল-শায়ারের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন সম্পদ বড়ুয়া, বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, তপোধীর ভট্টাচার্য ও সাংবাদিক হারুন-অর-রশীদ। কসমিক টেন্টে ছিল ‘রিলিজিয়ন ইন পলিটিক্স : এ্যাবসুলিউটিজম অব ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক অধিবেশনে সম্রাট চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা করেন আজিম ইব্রাহীম, চার্লস গ্লাস, জেফ কিংসটন ও জাফর সোবহান। আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হবে ৩৮টি অধিবেশন। সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত। এবারের উৎসবের প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে আছে এনার্জিস, গোল্ড স্পন্সর মীনা বাজার, প্রিমিয়ার পার্টনার ইন্ডিয়ান হাইকমিশন, স্ট্রাটেজিক পার্টনার ব্রিটিশ কাউন্সিল।
×