রাজন ভট্টাচার্য ॥ গাজীপুরের কালিয়াকৈর ডিগ্রী কলেজের পাশে সওজের একটি সেতুর ওপর কাগজে লেমিনেটিং করা সাইনবোর্ড বাঁশ দিয়ে ঝোলানো। এতে লেখা আছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু’, ‘ভারি যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হইল।’ ‘আদেশক্রমে গাজীপুর সড়ক বিভাগ।’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই সাইনবোর্ড ঝুলছে বছরের পর বছর। পরিবহন চালকরা নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছেন না। সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে সেতুর ওপর দিয়ে। তাই যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
সরকারী হিসাবে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে সড়ক ও জনপথের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংখ্যা প্রায় ৬০০। যদিও জাপানের একটি সংস্থার গত বছরের জরিপে বলা হয়েছে, প্রায় ৬৫ ভাগ সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সেতু মেরামত করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে। বাকি সেতুগুলোর মেরামত কাজ কবে শেষ হবে ঠিক নেই। যদিও সেতু মেরামতের জন্য একটি পৃথক প্রকল্প নেয়া হয়েছিল ২০১৫ সালেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় সেতুগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া মেরামতের গতিও মন্থর।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে জরুরী ভিত্তিতে সেতুগুলো মেরামত জরুরী। অন্যথায় যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। জানতে চাইলে নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, আমরা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে সড়ক নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামতের দাবি জানান তিনি।
সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে সেতু মেরামতের পরামর্শ দিয়ে সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সড়ক নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকেও বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কাজের গতি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। আশা করি মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করবে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কাশিরাম দাশ সেতু, পার্বত্য জেলার কুমারী সেতু, বগুড়ার করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতু, শাহবাজপুর সেতু, কাঞ্চন সেতু, মেঘনা-গোমতী সেতু, মহাস্থান সেতু ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি সেতু সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া কিছু সেতু পুরোপুরি নতুন করে নির্মাণ করা ছাড়া বিকল্প নেই। তাই নতুন সেতু নির্মাণে অর্থবরাদ্দ একটা বড় বিষয়। এ কারণে অনেক এলাকায় নতুন সেতু নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে।
আট সেতু ঝুঁকিপূর্ণ ॥ টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গা-ভূঞাপুর সড়কের ৮ ব্রিজ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘদিন। জানমালের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও শীঘ্রই সমাধান হচ্ছে না। টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নক্সা তৈরি না হওয়ায় পুনরায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) দিতে পারছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সামনে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ও পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প পাঠিয়েই দায়িত্ব এড়িয়ে যান। কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর উপজেলা শহর পর্যন্ত ১২ ব্রিজের মধ্যে ৮টিই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ব্রিজগুলো হলোÑ রাজাবাড়ী, শ্যামপুর, ফুলতলা, সয়া, নারান্দিয়া, সিংগুরিয়া, কাগমারীপাড়া ও শিয়ালকোল। এর মধ্যে সিংগুরিয়া সেতুর অর্ধেক অংশে বেইলি ব্রিজ স্থাপন করা হয়েছে। ফুলতলা, শ্যামপুর, নারান্দিয়া এবং লুৎফর রহমান মতিন কলেজসংলগ্ন রাজাবাড়ী ব্রিজ একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফুলতলা ব্রিজের দুই পাশের রেলিং ভাঙ্গা, শ্যামপুর ব্রিজের কয়েকটি স্টিলের পাটাতন উঠে গেছে, নারান্দিয়া এবং রাজাবাড়ী ব্রিজের মধ্যে গর্ত হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম নূর-ই-আলম সাংবাদিকদের বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের অধিকাংশ ব্রিজই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ১০ ব্রিজ, ১ কালভার্ট পুনরায় নির্মাণ এবং ২২ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য ১১৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কয়েকবার পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। কিন্তু সর্বশেষে প্রকল্পের যথার্থতা যাচাই এবং ব্রিজের নক্সা তৈরি করার জন্য ডিপিপি ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের যথার্থতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ব্রিজের নক্সা তৈরির জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। নক্সা প্রস্তুত হলেই আমরা আবার উন্নয়ন প্রস্তাব পাঠাতে পারব।
এদিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে মেঘনা সেতু। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর মাঝ বরাবর ছয়টি পিলারের (ভারবাহী স্তম্ভ) আশপাশে ৫২ থেকে ৬৫ ফুট পর্যন্ত জায়গার মাটি সরে গেছে। এছাড়া সেতুর অনেক সম্প্রসারণশীল সংযোগ ও বিয়ারিং অকেজো হয়ে পড়েছে।
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু শাখা) সাইদুল হক বলেন, দুই-তিন বছর ধরে মাটি সরে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা এটি মেরামতের পদ্ধতি জানিয়ে দিয়ে গেছেন। শীঘ্রই মেরামত শুরু হবে। এভাবে মাটি সরে যাওয়া সেতুটির জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিপজ্জনক ॥ সেতুর মুখে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাইনবোর্ড, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু। ভারি যানবাহন চলাচল নিষেধ।’ কিন্তু এসব কিছুই মানছেন না চালকরা। প্রতিনিয়তই কাঠ ও মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। এই হাল ফটিকছড়ির রামগড়-করেরহাট সড়কের বাগান বাজার উচ্চবিদ্যালয় এলাকার সেতুটির। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, শীঘ্রই পুরনো সেতু ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা হবে। সেতুর দুই পাশে গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে। সেখানে লোহার পাটাতন দিয়ে সেতুর সঙ্গে সড়কের সংযোগ রক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বরদল এলাকায় কালিয়াকৈর ডিগ্রী কলেজের পাশের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভারি যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ।
নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ সড়কের ওপর শতবর্ষী একটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি নির্মাণের দাবি জানালেও সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুটির গুরুত্বের কথা স্বীকার করে সেটি নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।
মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে পড়ায় মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী শমশেরনগর-চাতলা স্থল শুল্ক স্টেশন সড়কে মনু সেতুটি মারাত্মক হুমুকির মুখে পড়েছে। সেতুর উত্তরদিকে মূল খুঁটির সন্নিকটে এসে ঠেকছে বাঁধের ভাঙ্গন। সেতু ভেঙ্গে গেলে ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে আমদানি-রফতানি এবং শরীফপুর ইউনিয়নবাসীর সরাসরি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।
৫৬৬ অতি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ॥ দেশের অতি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংখ্যা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সড়ক ও জনপথের আওতাধীন মহাসড়কে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৫৬৬টি সেতু রয়েছে।’ অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ১১৮টি সেতু পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের প্রশ্ন-উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান।
তিন টনের বেশি চলাচল নয় ॥ সেতুর মুখে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাইনবোর্ড, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ৩ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ।’ কিন্তু এসব কিছুই না মেনে চলছে ২২টনের অধিক ভারি তামাক, পাথর ও কাঠবাহী ট্রাকগুলো। লামা-চকরিয়া সড়কের ইয়াংছা বাজার ও কুমারী এলাকায় অবস্থিত বেইলি সেতু ২টি যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম কষ্টে পড়তে পারে লামা আলীকদম উপজেলার ৩ লাখ মানুষ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের বান্দরবানের জেলা প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম খান জানান, বেইলি সেতু ২টি অনেক পুরনো এবং ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ৩ টন। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তামাক, পাথর ও কাঠের ১৮ থেকে ২২ টন ওজনের গাড়িগুলো চলছে।
মাতামুহুরী নদীর সেতু সংস্কার হচ্ছে না ॥ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর সেতুটি। মাঝখানে দেবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সেতু দেবে যাওয়া ঠেকাতে বালুভর্তি বস্তা দেয়াসহ নানামুখী উদ্যোগ নিলেও তা কতটুকু ফলপ্রসূূ হচ্ছে তা নিয়ে সন্দিহান মানুষ। এই অবস্থায় বেশি আতঙ্কে আছেন এই সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পর্যটকরা।
ঝুঁকিপূর্ণ সেরনিয়াবাত সেতু ॥ ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের কীর্তনখোলা নদীর ওপর নির্মিত শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় এক বছর আগে মালবোঝাই কার্গোর ধাক্কায় সেতুর মূল পিলারের সেভ গার্ড ভেঙ্গে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কোন নৌযান ফের ওই স্থানে আঘাত হানলে সেতুর মূল পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পুরো সেতুটিই বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একটি সেতুর অপেক্ষা...॥ গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের বাদিয়াখালি এলাকায় আলাই নদীর ওপর নির্মিত ইস্পাতের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে হাজারো যানবাহন। সাত বছর আগে বন্যায় সেতুর একাংশ ধসে যায়। কিন্তু এরপর সেতুটি মেরামত না করে তার ওপর স্থাপন করা হয় ইস্পাতের বেইলি সেতু। এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে পারাপারের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে গাইবান্ধা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম খান বলেন, ভূমি অধিগ্রহণসহ সেতু নির্মাণের জন্য ১১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প সড়ক অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।
রাজধানীর পাশে কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার-কলাতিয়া সড়কের তিনটি সেতুর সবই ঝুঁকিপূর্ণ। ‘সামনে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ভারি যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ’ সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এই সতর্কবাণী দিলেও সেতুগুলো মেরামত বা পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। প্রথম সেতুটি পশ্চিম জয়নগর এলাকায়, দ্বিতীয়টি আঁটি ভাওয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে ও তৃতীয়টি দ্বিতীয় ব্রিজ থেকে দুই শ’ ফুট দূরে, এটিও ভাওয়াল এলাকায় পড়েছে। তিনটি সেতুই ভাঙ্গাচোরা। একাধিকবার সেতুতে ফাটল ধরায় ও ইট-বালু খসে পড়ার পর সিমেন্ট ও লোহার পাত দিয়ে জোড়াতালি দেয়া হয়েছে। সেতু তিনটি এত সরু যে দুটি বড় গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে না। প্রতিটি সেতুরই রেলিং ভাঙ্গা।
সেতু মেরামতে উদ্যোগ ॥ যান চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু মেরামতে উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। পাশাপাশি নতুন করে ছোট-বড় ৬১টি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওয়েস্টার্ন ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
জানা গেছে, ১ হাজার ৫০০ মিটার বা ততোধিক দৈর্ঘ্যরে সেতুর দায়িত্ব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতায়। এর চেয়ে কম দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে সওজ। সংস্থাটির অধীনে ৪ চার হাজার ৫০৭ সেতু রয়েছে। এর মধ্যে ছোট-বড় অন্তত দেড় হাজার সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে ইবিবিআইপির আওতায় ১১৮ সেতু নির্মাণ করা হয়েছেÑ ৬৩টি জাইকার অর্থায়নে এবং ৬৫টি সরকারী অর্থায়নে।
সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, সওজের আওতায় ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪৫০৭টি ছোট-বড় সেতু রয়েছে। এ ছাড়া কালভার্ট রয়েছে ১৩ হাজার ৭৫১টি। বর্তমানে সারাদেশে ৬১ সেতু থেকে টোল আদায় করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। সওজের আওতাধীন সবচেয়ে বড় সেতুটি হচ্ছে লালনশাহ (পাকশী) ব্রিজটি। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৮৬ মিটার। ১৫০০ মিটারের বেশি হওয়ায় এ সেতুটির কর্তৃত্ব চায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। এরপর সওজের সবচেয়ে বড় সেতু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪০৮ মিটার।
৬৫ ভাগ সেতু ক্ষতিগ্রস্ত ॥ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অধীনস্থ সেতুর ওপর জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল বলছে, সওজের মোট সেতুর ৬৫ দশমিক ২ শতাংশই কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়া ১ হাজার ৪৫৩ সেতু এখনই মেরামত প্রয়োজন। তা না হলে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। জাইকার জরিপে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মাত্রা বোঝাতে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি চারটি শ্রেণীতে সেতুগুলোকে বিভাজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেতুকে রাখা হয়েছে ডি ক্যাটাগরিতে। এ রকম সেতুর সংখ্যা ৪৫৮। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৪৫টির অবস্থানই জেলা সড়কগুলোয়। বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত এসব সেতুর ৬৮টি রয়েছে আঞ্চলিক ও ৪৫টি জাতীয় মহাসড়কে।
এসব সেতু হয় দ্রুত মেরামত, না হয় নতুনভাবে নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এর পরে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুকে সি ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। এ ধরনের সেতু রয়েছে ৯৯৫টি। অতিবৃষ্টি ও বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সওজের অধীন ক্ষতির মাত্রা বিবেচনায় এগুলোকে ফেলা হয়েছে ‘সি’ শ্রেণীতে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সেতুর ৬২৫টিই রয়েছে জেলা সড়কগুলোয়। এছাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে রয়েছে ২৩০টি ও জাতীয় মহাসড়কে ১৪০টি। এছাড়া এ এবং বি ক্যাটাগরির সেতু নিয়ে আশঙ্কার কথা জানায়নি জাইকার জরিপে। তবে বি ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৬০ এবং এ ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৩৩৯টি সেতুর কথা বলা হয়েছে। গত বছর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এই জরিপ করা হয়েছিল।