ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিলমিল প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষও ॥ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ‘সকলের জন্য আবাসন’ বাস্তবায়ন হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

ঝিলমিল প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষও ॥ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ‘সকলের জন্য আবাসন’ বাস্তবায়ন হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঝিলমিল প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম আইবিএস (ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড বিল্ডিং সিস্টেম) চালু হতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৮৫টি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হবে। যেগুলোর মধ্যে ৬০টি হবে বিশতলা ও ২৫টি হবে পঁচিশতলা ভবন। মোট এ্যাপার্টমেন্ট হবে ১৩ হাজার ৯২০টি। ১৬০ একর জায়গার ওপর এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। কাজ পুরোপুরি শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ‘সকলের জন্য আবাসন’ বাস্তবায়নের কাজ একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ডেভলপমেন্ট অব ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটির ত্রিদেশীয় কনসোর্টিয়ামের সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে মালয়েশিয়ার বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস এসডিএন বিএইচডি, চীনের জিয়াংশি কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (গ্রুপ) কোং লি: এবং বাংলাদেশের মাল্টিপেক্স হোল্ডিং লি:। প্রকল্পটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), পাবলিক-প্রাইভেট কর্তৃপক্ষ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এ এইচ এম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ইদহাম জুহরি মোহাম্মদ ইউনুস। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবদুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল লতিফ হিলালি, বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিং এসডিএন বিএইচডির সিইও ড. সাবরিনা এবং পিপিপি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ-এর সিইও সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন, মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস লি: চেয়ারম্যান রিক হক সিকদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার প্রমুখ। গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেন, ঝিলমিল প্রকল্পের মধ্য দিয়ে আমরা এ দেশে সর্বপ্রথম ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালাইজড বিল্ডিং সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছি। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘সকলের জন্য আবাসন’ বাস্তবায়নের স্বপ্ন একধাপ এগিয়ে যাবে। খুব সহনীয় মূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়া যাবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবর্গ ফুটে মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা মূল্য ধরা হয়েছে। এছাড়াও ৫ মাসের মধ্যে পূর্বাচলে ৭০ হাজার এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের টেন্ডার ডাকা হবে বলে জানান মন্ত্রী। ঢাকায় জনসংখ্যার তুলনায় আবাসনের ব্যবস্থা খুব একটা ভাল নয়। আবাসন মানুষের জন্মগত অধিকার। যাদের ঢাকায় কোন নিজস্ব জমি নেই কেবল তারাই এখানে ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। এখানে ফ্ল্যাটের দাম বেশ সহনীয় রাখা হয়েছে, যাতে সবাই সহজেই ফ্ল্যাট কিনতে পারে। ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বলে জানান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মন্ত্রী বলেন, ঝিলমিল প্রকল্পের রূপ এবং বিশেষত্ব নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয় তখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আনন্দিত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওইদিক (কেরানিগঞ্জ) দিয়েই যেহেতেু গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে যাই সেহেতু আমিও ঝিলমিল পার্কে একটি ফ্ল্যাট কিনতে চাই। প্রধানমন্ত্রী এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করার পর নিজেও ঝিলমিল প্রকল্পে একটি ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছা পোষণ করেন বলে জানান গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, এই প্রকল্পে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম রাখা হয়েছে মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা। এছাড়াও ঝিলমিল প্রকল্পের আওতায় ৮৫টি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৬০টি হবে ২০ তলা ও ২৫টি ২৫ তলা। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হতে যাওয়া এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এছাড়াও আগামী বছর মার্চের মধ্যে পূর্বাচলে ৭০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য টেন্ডার ডাকা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। নসরুল হামিদ বলেন, এই ধরনের ফ্ল্যাট ব্যবস্থা মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বেশ জনপ্রিয়। আর এটি আমার এলাকা কেরানীগঞ্জে হওয়ায় আমার মতো খুশি আর কেউ হতে পারেনি। তবে এই এ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হওয়ার পরও ফ্ল্যাটে গ্যাস সংযোগ থাকবে না বলে জানান তিনি। নসরুল হামিদ বলেন, স্বল্পমূল্যে এবং সহজশর্তে এই প্রকল্পে ফ্ল্যাট কিনে অনেকেই লাভবান হবেন। সরকারের যে জ্বালানি নীতি তা এখানে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রকল্পে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ করার ববস্থা রাখা হয়নি। নতুন করে আর কোন বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেবে না সরকার। জানা গেছে, রাজউক এ বছরের জানুয়ারিতে ‘ডেভেলপমেন্ট অব ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক’ নামের পিপিপি প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব আহ্বান করে। গত ২২ মার্চ প্রস্তাব জমা দেয়া হয়। সরকারের অনুমোদনের পর গত ১৪ অক্টোবর ত্রিদেশীয় কনসোর্টিয়ামকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় ১৬০ একর (কমবেশি) জমিতে ডিবিএফটিএম মডেলে কনসোর্টিয়াম ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সুবিধাসহ নিজস্ব ডিজাইনে এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। রাজউক নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকদের কাছে এ্যাপার্টমেন্টসমূহ সহজ কিস্তিতে বিক্রি করবে। ‘ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক’ এ ২ কোটি ৭০ লাখ বর্গফুটেরও বেশি ভৌত সুবিধা নির্মিত হবে। এতে ২ ধরনের এ্যাপার্টমেন্ট থাকবে। এছাড়া ৯,২২২টি কার পার্কিং, মসজিদ, হেলথ ক্লাব, ২টি রেস্তরাঁ, কমিউনিটি সেন্টারসহ সব ধরনের আধুনিক সুবিধা থাকবে। ৪ বছরের মধ্যে ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক নির্মিত হবে। এতে ২ ধরনের এ্যাপার্টমেন্ট থাকবে। ১,৬০০ বর্গফুটের এ্যাপার্টমেন্টের জন্য ২০তলা ১৪টি এবং ২৫তলা ১৪টিসহ মোট ২৮টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনে মোট এ্যাপার্টমেন্ট সংখ্যা হবে ৪,৬৩৪টি। ১,৪০০ বর্গফুট এ্যাপার্টমেন্টের জন্য ২০তলা ৬৩টি ভবনে এ্যাপার্টমেন্ট সংখ্যা হবে ৯,১৯৮টি। মোট ৯১টি বহুতল ভবনে ২ ধরনের মোট এ্যাপার্টমেন্ট সংখ্যা হবে ১৩,৮৩২টি। এছাড়া ৯,২২২টি কারপার্কিং, মসজিদ, হেলথ ক্লাব, ২টি রেস্তরাঁ, কমিউনিটি সেন্টারসহ সব ধরনের আধুনিক সুবিধা থাকবে। ৪ বছরের মধ্যে ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক নির্মিত হবে।
×