ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহকর বাড়ানোয় সংসদে মন্ত্রী-এমপিদের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০২:৩৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

গৃহকর বাড়ানোয় সংসদে মন্ত্রী-এমপিদের ক্ষোভ

সংসদ রিপোর্টার ॥ হঠাৎ করেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গৃহকর (হোল্ডিং) ট্যাক্স কয়েকগুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের মন্ত্রী-এমপিরা। নির্বাচনের আগে এমনভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকার সম্পর্কে ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে তাঁরা সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার দাবী জানান। বৃহস্পতিবার ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে মাগরিবের নামাজের বিরতীর পর সংসদ অধিবেশন শুরু হলে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা। তাঁর অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। সভাপতির আসনে থাকা ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়াও আলোচনার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে এ ব্যাপারে নোটিশ দিয়ে আলোচনার জন্য সংসদ সদস্যদের পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ ফ্লোর নিয়ে বলেন, হঠাৎ করেই কয়েকগুণ হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক। নিজে টিভিতে দেখেছি বেশ কিছু লোক এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলেন, ট্যাক্স বাড়বে এটা অস্বাভাবিক কিছু না, সব কিছুই দিন দিন বাড়ে। সম্ভবত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরে ট্যাক্স বাড়ান না। কিন্তু সেইটা যদি এক সঙ্গে বাড়ানো হয় সেটা মানুষ গ্রহণ করবে না। তিনি আরো বলেন, আমরা জনপ্রতিনিধি, আমরা জনগণের কথা বলি। জনগণের সুখ-দু:খের ভাগি আমরা। হঠাৎ যার ট্যাক্স ছিল ৮ হাজা টাকার তার যদি এখন ৭২ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হয়, তবে অবধারিতভাবেই এব্যাপারে মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হবেই। তাই আমার মনে হয়, এি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। এসময় তোফায়েল আহমেদ প্রশ্ন উত্থাপনকারী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার উদ্দেশ্যে বলেন, ’আপনি নোটিশ দিলে তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। আমরা রাজনীতি করি, রাজনীতিতে কতগুলো সময় থাকে। যে জিনিসটি (ট্যাক্স বৃদ্ধি) আপনি ৩-৪ বছর আগে করতে পারতেন, সেই জিনিসটি একটা সরকারের শেষ সময়ে এসে করলে তার একটা প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। এটা নিয়ে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাই এর সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টির সূত্রপাত করে ঢাকা মহানগরী থেকে নির্বাচিত সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা ফ্লোর নিয়ে বলেন, ঢাকা শহরে হোল্ডিং ট্যাক্সের ব্যাপারে দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ অত্যন্ত অসহায়ের মধ্যে আছে। জলবদ্ধতার কারণে এমনিতেই আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ দিশেহারা, তার মধ্যে এই হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো যৌক্তিক নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও মেয়ররা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ান, কিন্তু ভোটারদের কাছে জবাব দিতে হয় এমপি- কাউন্সিলরদের। নির্বাচনের বাকী আর মাত্র একটি বছর। বাস্তবে আর আছেই ৬-৭ মাস। নির্বাচনের আগে এভাবে ট্যাক্স বাড়ানো হলে সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হবে। অনতিবিলম্বে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এটা যদি এক বছর আগে করত, দুই বছর আগে করত তবে সমস্যা ছিল না। এখন তো নির্বাচনের সময় সন্নিকটে। তাই এটা এখন কেন? নির্বাচনের পরে করেন। তবে কত শতাংশ ট্যাক্স বাড়িয়েছে সেটা বলতে না পারলেও তিনি বলেন, কোন অবস্থাতেই মধ্যবিত্ত মানুষ এই ট্যাক্স দিতে পারবেন না। হোল্ডিং ট্যাক্স হঠাৎ করেই অনেকগুণ বাড়ানো হয়েছে। আমার জানা মতে তা অনেক গুণ। চার ডাবল, ছয় ডাবল বৃদ্ধি করেছে। ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপির সাদেক হোসেন খোকারও কিন্তু এতো ট্যাক্স বাড়াননি। চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনেও একইভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এটা সরকারের জন্য ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে। তাই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান করছি। এরআগে জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদও বিষয়টি উত্থাপন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
×