ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর পদক্ষেপের ফলে কোচিং বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

কঠোর পদক্ষেপের ফলে কোচিং বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ সরকারের কঠোর পদক্ষেপের ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও কোচিং বাণিজ্য বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। কোর্চিং বাণিজ্য বন্ধে শীঘ্রই একটি আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষা কেন্দ্রে স্মার্ট মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব তথ্য জানান। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা কিছু শিক্ষকের নৈতিক স্খলনের অভিযোগ তুলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিজি প্রেস কিংবা প্রশাসনের ক্ষেত্রে ফাঁস হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আগে পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে অর্থাৎ সকালের দিকে কিছু শিক্ষকের হাতে প্রশ্ন দেয়ায় তা ফাঁস হয়ে যেতো। এটা এখন বন্ধ করা হয়েছে। এখন পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশের নিয়ম করা হয়েছে। শিক্ষকদেরও মোবাইল ফোন বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডাকসুসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র-সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টি দলীয় এমপি জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আমরা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেকগুলোকে উৎসাহ দিয়ে আসছি। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে উদ্যোগ নেন না। জোর করে সরকারের মন্ত্রণালয় গিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নির্বাচন করাতে পারে না। অনেক এমপি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে যদি তারাও উদ্যোগ নেন তাহলে ভালো হয়। বিশ্বদ্যিালয়গুলোও ছাত্র-সংসদ নির্বাচন করতে রাজী হন না। এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেয়া নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের কান ধরে বেঞ্চের ওপরে দাঁড় করানোর এখন অন্যায়। সেখানে কোন শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করেন তা সঠিক নয়। ওইসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুনির্র্দিষ্ট অভিয়োগ পাওয়া গেলে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়। এমপিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে যদি এ ধরণের কোন অভিযোগ থাকে তাহলে আমাকে জানান। সঙ্গে সঙ্গে ওইসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদেরকে কোন ধরণের ছাড় দেয়া হবে না। তিনি যেই হোক না কেন। এরকম ব্যবস্থা না নিতে পারলে মন্ত্রী হিসেবে আমার থাকার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সরকারি দলের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, পাবলিক পরীক্ষা আইনানুযায়ী প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের ৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড কিংবা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। এছাড়া যারা প্রশ্ন ফাঁসের অপপ্রচার চালায় তাদের বিরুদ্ধেও ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণেতা সংশ্লিষ্ট বোর্ডে উপস্থিত থেকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করছেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারীর ও পরিশোধনকারীর গোপণীয়তা রক্ষায় শপথ এবং এ বিষয়ে লিখিত অঙ্গীকারনামা নেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ বোর্ডের মডারেশন কক্ষে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এসএসসি ও সমমানের ফলের সূচক গত বছরের তুলনায় এ বছর ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমেছে। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণের হার হ্রাসের কারণ খুঁজে বের করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে সকল শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রাক-প্রাথমিক থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট পাঠ্যপুস্তকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বের গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন ঘটনা ও প্রামাণ্য সচিত্র বিষয়বস্তু অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম-১০ম শ্রেণীর বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকে এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর আবশ্যিক বাংলা ও ইংরেজি প্রভৃতি পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন শিরোনামে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এরই আলোকে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষকদের অবসর গ্রহণের ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেতে আর্থীক সমস্যার কথা স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আর্থীক সমস্যার কারণে ব্যাংক থেকে অনেকটাই ভিক্ষা নিয়ে এসব ভাতা প্রদান করতে হচ্ছে। বর্তমানে এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে অবসর সুবিধার বিপরীতে মূল বেতনের শতকরা ৪ ভাগ হারে মাসিক ৩৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়। অবসর সুবিধা প্রাপ্তির জন্য মাসিক জমাকৃত আবেদন নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ফলে প্রতিমাসে ৩৫ কোটি টাকা ঘাটতি হিসেবে বার্ষিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪২০ কোটি টাকা। বিদ্যমান আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে তুলতে অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য সীড মানি হিসেবে ৫শ’ কোটি টাকা এবং থোক বরাদ্দ হিসেবে একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
×