ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাটে বিলুপ্ত ছিটমহল বাসীদের খতিয়ান বিতরণ

প্রকাশিত: ০১:০০, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

লালমনিরহাটে বিলুপ্ত ছিটমহল বাসীদের খতিয়ান বিতরণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও জেলা সদরের অভ্যন্তরে থাকা বিলুপ্ত ৫৫টি ছিটমহলের নতুন বাংলাদেশিদের মাঝে জমির চুড়ান্ত খতিয়ান বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন থেকে আর বিলুপ্ত ছিটমহলাসীদের জমি ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো বাধা রইলো না। গত ১২ নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ বিতরন কার্যক্রম আগামী ২১ নবেম্বর পর্যন্ত চলবে। সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিলুপ্ত ছিটমহল বাঁশপচাই পরিবর্তন হয়ে ধাইরখাতা মৌজার অধীনে ২৬৯টি খতিয়ান সংযুক্ত ও বোয়ালমারী বাঁশপচাই পরিবর্তন হয়ে বনগ্রাম মৌজার অধীনে ৪৭৯টি খতিয়ান সংযুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ ৬৭ বছর পর ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় হলে সরকার বিলুপ্ত ছিটমহলে বসবাসরত লোকজনের ভূমি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এতোদিন এসব অধিবাসীর জমির মালিকানা ছিল না। ভারত-বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলের বসবাসকারী অধিবাসীদের নিজস্ব কোনো পরিচয় ছিল না, যে তারা কোন দেশের নাগরিক। তবে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ছিটমহল বিনিময় হলে এসব ভূ-খন্ডে বসবাসকারী অধিবাসীরা নিজের পরিচয় পান। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহল গুলির নাগরিক ভারতীয় পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশের অব্যন্তরে থাকা নাগরিকরা বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় বহন করে। এরপর তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। জাতীয় পরিচয়পত্র বুঝে পাওয়ার পর ভোটাধিকারও প্রয়োগের সুযোগ পান। এবার পেলেন জমির মালিকানাও। সদর উপজেলার বিলুপ্ত বাঁশপচাই ছিটমহলের বাসিন্দা হারুন অর রশীদ জানান, জমির খতিয়ান হাতে পেয়ে আমরা খুব খুশি। এতোদিন জমি আমাদের থাকলেও জমির কাগজ ছিল না। তাই ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি নাই। ছিটমহল বিনিময় হওয়ায় আমরাও যেমন দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছি। এবার পেলাম জমির কাগজ। আর উন্নয়ন তো হচ্ছেই। হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের অভ্যন্তরের বিলুপ্ত উত্তর গোতামারী ১৩৫ ও উত্তর গোতামারী ১৩৬ নম্বর ছিটমহল দুইটির জমি উত্তর গোতামারী মৌজার অধীনে মোট ২৮৯টি মূল খতিয়ান সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব খতিয়ান ইতোমধ্যে বিতরণ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। এদিকে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর কুতুবুল আলম বলেন, উপজেলার দহগ্রাম ও পাটগ্রাম পৌরসভা ব্যতীত ৭টি ইউনিয়নের মোট ২১টি মৌজার অধীনে ৪ হাজার ২৭৬টি মূল খতিয়ান সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব বিলুপ্ত ছিলমহলের অধিবাসীরা জমি ভোগ দখল করলেও ক্রয়-বিক্রয় করতে পারতেন না। কারণ তাদের জমির নিজস্ব মালিকানা আগে না থাকায় ক্রয়-বিক্রয় বা রেজিষ্ট্রি কোথাও হতো না। এসব বাংলাদেশি লোকজনের নামে জমির মালিকানা স্বরুপ মুল খতিয়ান দেওয়া হচ্ছে। এখন তাদের জায়গা-জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে আর কোনো বাঁধা নেই। এমন কি ব্যাংক ঋণ পেতেও কোনো সমস্যা হবে না।’ লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আহসান হাবীব বলেন, ‘১২ নভেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিলুপ্ত ছিটমহলের নতুন বাংলাদেশিদের মধ্যে জমির মূল খতিয়ান ও নকশা বিতরণ অব্যাহত থাকবে। জেলার সদর উপজেলায় ৭৪৮টি, হাতীবান্ধায় ২৮৯টি ও পাটগ্রামে ৪ হাজার ২৭৬টি খতিয়ান বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, এইসব খতিয়ানে যদি কোনো ত্র“টি থেকে থাকে তা সংশোধন করে তা সরকারিভাবে চুড়ান্ত ভলিয়ম বই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। গেজেট প্রকাশের দিন থেকে দুই বছরের মধ্যে কারো কোনো সমস্যা বা আপত্তি থাকলে তা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে নালিশ করে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি স্বত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
×