ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলবিশ্বে আফসোস আর আহাজারি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

ফুটবলবিশ্বে আফসোস আর আহাজারি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রীতিমতো অবিশ্বাস্য। ইতালি বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলবে না তাই কি হয়! হয় না!! কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর বাস্তবতা, সেটাই হয়েছে। এবার ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাই থেকেই বাদ পড়েছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। যে কারণে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না বুফন, চিয়েল্লিনিদের। এটা কিছুতেই মানতে পারছেন না দেশটির ফুটবল পাগল জনতা। পুরো দেশের মানুষ এখন মাতম করছে। দেশটির মিডিয়াতেও চলছে শোকের মাতম। শুধু ইতালিতেই নয়, ইতালির কান্নায় কাঁদছে ফুটবলবিশ্বও। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দেশটির ভক্ত-সমর্থকরা শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন প্রিয় দেশটি বিশ্বকাপ মঞ্চের টিকেট না পাওয়ায়। ইতালির সংবাদ মাধ্যম নিদারুণ এই ব্যর্থতাকে মহাপ্রলয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশটির ক্রীড়া দৈনিক গাজেট্টা ডেল্লো স্পোর্ট শিরোনাম করেছে, ‘ইতালি, এটাই মহাপ্রলয়!’ এমন কেন হলো, সেটির কারণও ব্যাখ্যা করেছে তারা। বলেছে, ‘একের পর এক সুযোগ হারানো, দুর্ভাগ্য এসব তো ছিলই। তারপরও সুইডিশদের বিরুদ্ধে ১৮০ মিনিটেও একটা গোল করা গেল না!’ আরেক ক্রীড়া দৈনিক করিয়েরে ডেল্লো স্পোর্ট তুলে এনেছে ২০১৮ বিশ্বকাপ দেখাটা ইতালির মানুষের জন্য কতটা বেদনার হবে, সেটি। শেষ অংশে তারা লিখেছে, ‘এটা অসহনীয় ফুটবল-লজ্জা, একটা অমোচনীয় দাগ। সব শেষ। মহাপ্রলয়, দুঃখগাথা, বিপর্যয়!’ অনেকে আবার এটিকে পেছনে ফেলে সামনে তাকানোর ডাক দিচ্ছেন। ইতালির ফুটবলে এমন দিন যে আসবে তা হয়তো অনুমিতই ছিল। এখনও ইতালির বড় কোন তারকার নাম বলতে বললে বুফন-চিয়েল্লিনিদের নাম চলে আসে। এসব বুড়োদের নিয়ে আর কতদিন। তরুণদেরই তো হাল ধরতে হবে। জার্মানি, ব্রাজিলের যেমন তরুণ ফুটবলারের সমারোহ চলছে কিন্তু ইতালিয়ান ফুটবলে বর্তমানে তরুণদের আকাল! এটাই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ মনে করা হচ্ছে। যাও আবার কিছু তরুণ নিজেদের তুলে ধরেন তাদের খুব একটা ব্যবহার করেননি কোচ জিয়াম পিয়েরো ভেনটুরা। শুধু তাই নয়, ইতালির যুব প্রকল্প ঠিকঠাক চলছে না। ইতালির লীগটাও এখন আর ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি এমনকি ফ্রান্সের লীগের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। এখন সবার আগে জাতীয় দলে কোচ বদলের কথা উঠছে। যেটি হয়তো বুধবারই হয়ে গেছে। গতকালই বিশেষ সভা ডাকেন ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কার্লো টাভেচ্চিও। দলের ব্যর্থতার পর তিনি বলেন, এই ব্যর্থতা মুছতে সমন্বিত সিদ্ধান্ত দরকার। ভবিষ্যতে কি করতে হবে, সেসব বিশ্লেষণ করতেই সভা ডেকেছি। ইতালির ক্রীড়ামন্ত্রী লুকা লট্টির কথাতেও বুফনের সুর। তিনি বলেন, বুফনের কথাটা পরিষ্কার ছিল, ফুটবলের প্রতিটি দিকেই নতুন শুরু করতে হবে। গত দুটি বিশ্বকাপেও আমরা প্রথম রাউন্ড পেরোতে পারিনি। অনেক কিছুই করার আছে। আমার মনে হয়, এই নেতিবাচক পরিস্থিতিটা কাজে লাগিয়েই ইতালিয়ান ফুটবলকে আমাদের পুনর্গঠন করতে হবে। অন্য অনেকের মতো ইতালি বিশ্বকাপে খেলতে না পারায় কষ্ট পেয়েছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। নিজের ফেসবুক পেজে এ সম্পর্কে ম্যারাডোনা লিখেছেন, বিশ্বকাপে ইতালি যেতে না পারায় আমি সত্যিই দারুণ হতাশ। ইতালিয়ানরা সবসময়ই বিশ্বকাপে বাড়তি একটি আমেজ নিয়ে উপস্থিত হয়। আমি প্লে-অফের ম্যাচটি দেখেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে সুইডেন যেভাবে চাচ্ছে ইতালি ঠিক সেভাবেই খেলছে। বিশ্বকাপের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রতিবারই আরও কঠিন হচ্ছে। তবে যাই হোক রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া বিশ্বের অন্যতম সেরা দল ইতালির জন্য সত্যিই দুঃখজনক ঘটনা। শুধু আমি না, ফুটবল পাগল কেউই চাইবে না এমন দল বাদ পড়ুক। ওদের জন্য সমবেদনা।
×