জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ খেতে বসবেন রেস্টুরেন্টে কিন্তু কোন ওয়েটার আসবে না। আসবে হিউম্যানয়েড রোবট! আপনার পছন্দসই খাবারের অর্ডার নিয়ে সে আপনার টেবিলে পৌঁছে দেবে খাবার। অবাক হওয়ার বিষয় হলেও সত্যিই। খাবার পরিবেশন করবে রোবট। জাপান, চীন, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এবার রোবোটিক রেস্টুরেন্ট চালু হলো রাজধানীতেও। ‘রোবট রেস্টুরেন্ট’ নামক এ রেস্তরাঁয় কোন মানুষ নয়, রোবটই ওয়েটার। বাংলাদেশে এটিই প্রথম রেস্টুরেন্ট যেখানে রোবটের মাধ্যমে কাস্টমারদের খাবার সরবরাহ করা হবে। রেস্টুরেন্টটি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করল। বাংলাদেশ ও চীন যৌথভাবে এ রেস্টুরেন্টটি পরিচালনা করবে। শিশুদের বিনোদন ও খাবারের বিষয়টি চিন্তা করেই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
বুধবার রাজধানীতে দেশের প্রথম রোবট রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু হলো। মিরপুর রোডে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন এবং আসাদ গেটের সন্নিকটে প্রধান সড়কের ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে রেস্টুরেন্টটির অবস্থান। বুধবার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অডিটরিয়ামে রেস্টুরেন্টটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ ও রোবট প্রস্তুতকারী সংস্থা এ যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে রেস্টুরেন্টটির পরিচালক রাহিন রাইয়ান নবী, এইচ জেড এক্স ইলেক্ট্রনিক টেকনোলজি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাক্স সোয়াজ, কাস্টমার রিলেশন ম্যানেজার তানভিরুল হক উপস্থিত ছিলেন।
রেস্তরাঁটির পরিচালক রাহিন রাইহান নবী বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় যে ওয়েটাররা কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সেই ক্লান্ত অবস্থাতেই বাধ্য হয়ে তারা কাস্টমারদের খাবার সরবরাহ করেন। কিন্তু রোবট কখনও ক্লান্ত হবে না। তাই রোবট যখন খাবার সরবরাহ করবে তখন এটি কাস্টমারকে আরও ভাল সেবা দিতে পারবে। রোবটের খাদ্য পরিবেশন বিষয়টি যে কোন বয়সী মানুষের জন্য অত্যন্ত রোমাঞ্চকর পরিবেশও তৈরি করবে। বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন ওয়েটারের পক্ষে সব সময় খাবারের গুণগতমান নিশ্চিত করা ও জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভব হয়না। তাই রোবটে সরবরাহকৃত অবশ্যই জীবাণুমুক্ত থাকবে। রেস্টুরেন্টটিতে প্রাথমিকভাবে তিনটি রোবট দিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। পরবর্তীতে রোবট সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিবর্গ রোবটের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। উপস্থিত প্রায় সবার জন্যই এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। তানজিকা ইসলাম নামে এক কাস্টমার তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘এই প্রথম কোন রোবট বাস্তবে দেখলাম। খুবই ভাল একটি উদ্যোগ। আমাদের দেশও বাইরের দেশ থেকে পিছিয়ে নেই। এই রেস্টুরেন্টটি তা প্রমাণ করল। সব বয়সী মানুষই এ রেস্টুরেন্টে এলে খাবারের পাশাপাশি ওয়েটার রোবট দেখে আনন্দিত হবে বলে আশা করি।’
এই ছোট্ট হিউম্যানয়েড রোবটগুলো খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী। অর্ডার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এরা আপনার টেবিলে খাবার পৌঁছে দেবে মুহূর্তেই। এদের সুবিধা হলো যে, এরা ক্লান্ত হয় না আর কাজ করতেও কোন ঝামেলা করে না। বরং ওরা শুধুই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে জানে। জানা গেছে, এসব রোবটকে আলাদাভাবে কন্ট্রোল করার প্রয়োজন হয় না। কারণ এদের দিয়ে যে কাজটি করানো হবে সে তথ্য তাদের শরীরের মধ্যে ইনপুট করা রয়েছে। সেসব তথ্যেরই আউটপুট হলো তাদের পরিশ্রম। একজন ওয়েটার হিসেবে তাদের যা করণীয় তারা সে সকল নির্দেশ সঠিকভাবে পালন করে। যে সকল শ্রমিক বিভিন্ন রেস্তরাঁয় ওয়েটার হিসেবে কাজ করতেন তাদের কষ্টও কমিয়ে দেবে এসব রোবট।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এইচ জেড এক্স ইলেক্ট্রনিক টেকনোলজি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাক্স সোয়াজ বাংলাদেশে রোবট ডিজিটাইজেশনের জন্য যে কোন সহযোগিতা করতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
এ রেস্টুরেন্টটি সর্বসাধারণের সুবিধার্থে প্রাথমিক অবস্থায় আগামী এক মাসের জন্য বাচ্চাদের কিডমিল এবং দেশীয় খাবারের সেট ফুড পরিবেশন করা হবে বলে জানান আয়োজকরা। যার মূল্য সর্বোচ্চ পাঁচ শ’ টাকা। এ বিষয়ে পরিচালক বলেন, ‘খাবারের দাম সাধ্যের মধ্যেই রাখা হবে যাতে সকল শ্রেণীর মানুষই বিরল এ অনুভূতি উপভোগ করতে পারেন। শিশুদের জন্য রোবট রেস্টুরেন্টে থাকছে বিশেষ খাবারের সম্ভার। আমরা খাবারের মান ও পারিবারিক পরিবেশ অবশ্যই বজায় রাখব। যাতে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে কেউ এখানে খেতে আসতে পারেন।’
‘রোবট রেস্টুরেন্ট’ চালুর উদ্যোগ প্রসঙ্গে পরিচালক জানান, ‘চীন সফরে গিয়ে আমি প্রথম রোবটিক রেস্টুরেন্ট দেখি। সেখানকার রেস্টুরেন্টে রোবটে খাবার সরবরাহ পদ্ধতি দেখে আমি আকৃষ্ট হই। তখন সংশ্লিষ্ট রোবট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাক্স সোয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এবং বাংলাদেশে রোবট রেস্টুরেন্ট চালুর বিষয়ে আলোচনা করি। পরবর্তীতে আমরা সফলভাবে এ রেস্টুরেন্টটির যাত্রা শুরু করলাম।’