ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতাবিরোধীদের কথায় কোন গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০১:২৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

স্বাধীনতাবিরোধীদের কথায় কোন গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়ার ব্যর্থতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, যিনি (খালেদা জিয়া) সব কাজেই ব্যর্থ, তিনি তো অন্যর সব কাজে ব্যর্থতাই দেখবেন। বহু ব্যর্থতার ইতিহাস তাঁর আছে। ব্যর্থতা ছাড়া সফলতা দেখার মতো মানষিকতা তো তাঁর নেই। যার চক্ষু থাকতেও অন্ধ তাকে দেখাবে কে? এরা সবকিছুতেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে ব্যস্ত, মানবিক কোন গুণাবলী তাঁদের (খালেদা জিয়া) মধ্যেই নেই- এটাই হলো বাস্তবতা। কাজেই তাঁর (খালেদা জিয়া) বক্তব্যে আমি ধর্তব্যে নেই না। যারা স্বাধীনতাবিরোধী, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে- তাদের কথায় কোন গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। আমরা আমাদের কাজ করে যাব। রোহিঙ্গা সমস্যা দেখতে বিশাল বহর নিয়ে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার যাত্রা ও কিছু অযাচিত মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের গ্রামে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে- ’পাগলে কিনা কয়, ছাগলে কি না বলে’। যিনি (খালেদা জিয়া) দেখেও দেখে না, তাঁকে দেখাবার কিছু নেই। উনার সব কাজেই তো ব্যর্থতা। নির্বাচন ঠেকানোর নামে মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন, কিন্তু জনগণ সেটা ঠেকিয়ে দিয়েছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল, থাকতে পারেন নাই। দেড় মাসের পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করে বিতারিত করেছিল। ক্যান্টনমেন্টের দখলকৃত বাড়ি রক্ষায় আদালতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন। বাড়ি হারিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদলেন, বাড়ি আর রাখতে পারলেন না। এমন বহু ব্যর্থতার ইতিহাস বিএনপি নেত্রীর আছে। আসলে মানবিক কোন গুণাবলীই বিএনপি নেত্রীর মধ্যে নেই। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশ বাংলাদেশের এমন মানবিক অবস্থানের প্রশংসা করেছে। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা যাতে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য বিশ্ববাসী জোরালোভাবে তৎপর রয়েছে। দুর্গত মানুষকে দেখতে নাকি বরযাত্রী গেলেন? ॥ দুর্গত রোহিঙ্গাদের দেখার নামে খালেদা জিয়ার বিশাল বহর নিয়ে কক্সবাজার সফরের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানবিক কারণে অসহায়-নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। এটা হচ্ছে একটা অনুভূতির ব্যাপার, এটা হচ্ছে একটা বোধের ব্যাপার। কিন্তু বিএনপির সেই বোধটা আছে কি না, সেটাই প্রশ্ন। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী সেখানে গেলেন যেভাবে সাজসজ্জা নিয়ে ঢোল-বাদ্য, হাতি-ঘোড়া সবই নিয়ে উনি কক্সবাজার গেলেন। এটা দেখে সবার প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, বিএনপি নেত্রী কী কোন দুর্গত মানুষকে দেখতে গিয়েছিলেন, নাকি সেখানে বরযাত্রী হিসেবে গেলেন? কী করতে সেখানে গিয়েছিলেন? সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য না। সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি নেত্রীর দুর্গত মানুষকে দেখা নয়, মনে হয়েছে একটা শোডাউন করা এবং গাড়ী টারি সব কিছু দেখানোর ওপরই বেশি দৃষ্টি ছিল তাঁদের। কারণ এটাতো বাস্তবতা যে, মানবিক কারণে এদের সহযোগিতা করা বা পদক্ষেপ নেওয়া- এই অভ্যাস তো তাদের (খালেদা জিয়া) নেই। আওয়ামী লীগ সব সময় একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এটাই আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আমরা এই আদর্শ নিয়েই রাজনীতি করি। বিএনপি নেত্রীর কক্সবাজার যাত্রা যতটা লোক দেখানো জন্য ছিল, সেখানে আন্তরিকতা ততটা ছিল না এটা সবাই জানে, বুঝে। রোহিঙ্গা সমস্যা জিয়াউর রহমানেরই সৃষ্টি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা তাদেরই সৃষ্টি, তাঁর (খালেদা জিয়া) স্বামী এই সমস্যা সৃষ্টি করে গেছেন। সব কিছুতেই সমস্যা সৃষ্টি হোক সব সময় তারা চায়। বিএনপি- জামায়াতের লক্ষ্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা। ঘোলা পানিতে কিভাবে মৎস্য শিকার করবে তাতেই ব্যস্ত, মানবিক কোন গুণাবলী তাদের মাঝে নেই- এটাই হলো বাস্তবতা। কাজেই বিএনপি নেত্রীর বক্তব্যে আমি ধর্তব্যে নেই না। আমাদের নীতি আদর্শই হলো আমরা মানবিক দিক থেকে সবকিছু বিবেচনা করি। উস্কানী বা সংঘাতে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে জামায়াতসহ পাকিস্তান সেখানে উস্কানী ও সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে- তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর এমন সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে কড়া হুঁশিয়ারী উচ্চারণকরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে কেউ দেশে অশান্তি, উস্কানী কিংবা সংঘাত সৃষ্টির করলে জড়িত এবং উস্কানীদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে সরকার সম্পূর্ণ সজাগ ও সতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলতে চায়। তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বলেছি, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে কাউকে কোন উস্কানীমূলক তৎপরতা কিংবা সংঘাত সৃষ্টির তৎপরতা চালাতে দেব না। এটা আমরা কোনভাবেই বরদাস্ত করতে করবো না। কেউ এসবের সঙ্গে জড়িত থাকলে, কেউ মদদ বা উস্কানী দিলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, এই রোহিঙ্গা সমস্যা তো ১৯৭৮ সালে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের আমলেই সৃষ্টি। ওই সময়ই পার্বত্য চট্টগ্রামকেও অশান্ত করা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও অনেকেই সেখানে পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে জড়িতদের অবশ্যই আমরা খুঁজে বের করবো। আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্টসহ আইডি কার্ড করে দিচ্ছি, নিবন্ধন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব রোহিঙ্গারা যাতে ছড়িয়ে না পড়তে পারে এবং কোন অন্যায়কাজে জড়িত হতে না পারে সেজন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কক্সাবাজারের স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদেরও পুনর্বাসন ॥ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর আশ্রয় নেওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এটা ঠিক, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার ফলে বন ও পাহাড়ি অনেক গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলমূলের চাষাবাদ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন- তারা সে সুযোগ পাচ্ছেন না। এতগুলো মানুষ (রোহিঙ্গা) এদেশে এসেছে। এতে করে বিশেষ করে এদেশের গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই মানুষগুলোর খাদ্য ও জীবীকা নির্বাহের ব্যবস্থাও সরকার করে দেবে। দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। সেখানে মাত্র ১৫ হাজার মানুষকে সহযোগিতা করতে পারবো না- এতোটা দৈন্যতায় সরকার পড়েনি। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, এদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারো কারো শরীরে এইচআইভি জীবাণু পাওয়া গেছে। নানা শারীরিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। তাদের আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মাধ্যমে সারাদেশে যেন রোগজীবাণু ছড়াতে না পারে- সে বিষয়েও সরকার সচেতন রয়েছেন। শরণার্থীদের পুনর্বাসন এলাকায় একাধিক মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা টিম কর্মরত রয়েছে বলেও জানান তিনি। সারাবিশ্ব এখন বাংলাদেশের পাশে ॥ স্বতন্ত্র দলীয় সংসদ সদস্য আবদুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে মিয়ানমারের অসহায় নাগরিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মানবিক কারণে আমরা এদের আশ্রয় দিলেও এ বিপুল জনগোষ্ঠিকে দীর্ঘকাল বাংলাদেশে রাখা সম্ভব হবে না। লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি। মনে রাখা প্রয়োজন রোহিঙ্গা সমস্যার মূল উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও সে দেশকেই করতে হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সামরিক অভিযান ও সহিংসতার প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। দুই মাস সময়ের মধ্যে ছয় লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পূর্বে আগমনকারী চার লাখসহ বর্তমানে ১০ লাখের অধিক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। এ সকল আশ্রয়প্রার্থীর বেশিরভাগই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ। মিয়ানমার থেকে এখনো প্রতিদিন রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদেও আগমনের ফলে তাদের নিরাপত্তা বিধান ও মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষও সচেষ্ট রয়েছে। আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সফল বাংলাদেশ ॥ অপর এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের জোর সমর্থন আদায়ে সফল হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া থেকে শুরু করে মানবিক সহায়তা প্রদান এবং তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ বিশেষভাবে প্রসংশিত হয়েছে। বাংলাদেশের সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও কর্মতৎপরতায় মিয়ানমারে জাতিগত নিধন বন্ধের দাবিটি আজ সার্বজনীন দাবিতে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা দাবি করেন, আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যে জনমত সৃষ্টি হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টারই ফলাফল। আমরা কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমারের নাগরিকদের স্বদেশে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিকভাবে সকলের প্রত্যাশার অংশ। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে আশ্রয় দেয়া ছিলো আমাদের একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এ কারণে বাংলাদেশের নাম আজ বিশ^ নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় প্রায় এক কোটি মানুষ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলো। এ সময় তাঁর শরণার্থী জীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমার পরিবারের সকলকে হত্যা করার পর প্রায় ছয় বছর আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা শরনার্থী জীবন-যাপন করেছি। যে কারণে রোহিঙ্গাদের দু:খ-দুর্দশা আমি গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সেই অনুভূতি আমাদের মধ্যে কাজ করেছে। আমার দৃঢ় বিশ^াস আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ সমস্যা সমাধানে সফল হবো। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রোহিঙ্গা সমস্যাটি অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এনিয়ে এখন অবধি তারা মোট ছয়টি সভা করেছে। জাতিসংঘে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা ॥ সরকার দলীয় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যার উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছি। এবারের অধিবেশন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা প্রতিদিন প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ বিতর্ক পর্বের ভাষণে রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে আমার পাঁচ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছি। এই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বিশ^ মহল অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশে^র সকলেই এ সমস্যা নিয়ে চিন্তিত। জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারসহ বরেণ্য বিশ^নেতাগণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর চালানো নির্যাতনের নিন্দা জানিয়েছেন এবং রোহিঙ্গা সমস্যার আশু সমাধানে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহ-এর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গাদের দু:খ-দুর্দশা লাঘবে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি জানান, মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা’ নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে। যার চলতি হিসাব নম্বর : ৩৩০২৪৬২৫, সোনালী ব্যাংক, কক্সবাজার শাখা, কক্সবাজার। এই হিসাবে গত ৬ অক্টোবর পর্যন্ত জমাকৃত মোট অর্থের পরিমাণ তিন কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৬ টাকা। আরেক সংসদ সদস্য সেলিনা বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিগত ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদসহ বিগত আট বছরে তিনি ২৭টি পুরস্কার ও ১৩টি সনদ পেয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া আর কোনো সরকারের আমলে কোনো সরকার প্রধানই এতগুলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি।
×