ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরিষাবাড়ীতে স্বামীর হাতে গৃহবধূ নির্যাতন

প্রকাশিত: ০১:২৪, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

সরিষাবাড়ীতে স্বামীর হাতে গৃহবধূ নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় যৌতুকের জন্য সৈয়দা আফরিন আক্তার খুশি (২৬) নামের এক গৃহবধূর উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে তার যৌতুকলোভী স্বামী। লাঠিপেটায় তার দুই হাত, দুই পা, কোমর, বাম হাতের একটি আঙুল ভেঙে দেওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়েছে। জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌরসভার শিমলা বাজারে ওই গৃহবধূর স্বামীর ভাড়া বাসায় মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। তাকে মুর্মূষু জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে গৃহবধূ সৈয়দা আফরিন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তাকে মেঝেতে বিছানা দেওয়া হয়েছে। দুপুরে তার শরীরের ভাঙা স্থানগুলো এক্স-রে করা হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওই গৃহবধূর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্মম নির্যাতনের শিকার সৈয়দা আফরিনের বাবার বাড়ি সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চুনিয়াপটল গ্রামে। তার বাবা মো. আমজাদ হোসেন জামালপুরের আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট দপ্তরের ভূমি জরিপ কর্মচারী। মো. আমজাদ হোসেন তার মেয়ে সৈয়দা আফরিনকে বারো বছর আগে সরিষাবাড়ী পৌরসভার শিমলা বাজার এলাকার ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর মিস্ত্রি মো. আনোয়ার হোসেনের সাথে বিয়ে দেন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে আমেনা নার্সারি শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ময়ের বয়স এক বছর। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে আনোয়ার হোসেন বুলু তার স্ত্রীকে মাঝে মধ্যেই কারণে অকারণে নির্যাতন করে আসছেন। এর আগেও তিনবার সৈয়দা আফরিনকে মারধর করে গুরুতর আহত করেছিলেন। সর্বশেষ ঘটনার দিন মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আমেনা বেগম ভাত রান্না করছিলেন। তার স্বামী আনোয়ার হোসেন বাসায় ফিরে ভাত রান্না করতে দেরি করার অজুহাত তুলে সৈয়দা আফরিনকে প্রথমে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এরপর মোটা একটা লাঠি দিয়ে তার সারা শরীরে পেটাতে শুরু করেন। স্বামীর লাঠির পিটুনিতে সৈয়দা আফরিনের দুই হাত, দুই পা, কোমর, বাম হাতের একটি আঙুল ভেঙে দেওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়েছে। তার স্বজনেরা তাকে মুর্মূষু অবস্থায় উদ্ধার করে মঙ্গলবার রাত সাতটার দিকে সরিষাবাড়ী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। পরে তাকে মঙ্গলবার রাত বারোটার দিকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই গৃহবধূর বাবা মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আনোয়ার হোসেন বুলু তার মেয়েকে মেরে শুধু হাত-পা-কোমরই ভেঙে দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। তারা জামালপুর জেনারেল হাসপাতালেও পাহারা বসিয়েছে। তার মেয়েকে দুপুরে এক্স-রে করানোর জন্য নিচে নিয়ে যাওয়া হলে তার মেয়ের স্বামী আনোয়ার হোসেন বুলু অজ্ঞাত লোক পাঠিয়ে তার শিশুনাতি আমেনাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় সরিষবাড়ী থানায় তিনি একটি মামলা দায়ের করবেন। তিনি তার মেয়ের উপর পাশবিক নির্যাতনকারী মো. আনোয়ার হোসেন বুলুকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
×