ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গারো পাহাড়ে আখ চাষে কৃষকের ভাগ্য বদল

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

গারো পাহাড়ে আখ চাষে কৃষকের ভাগ্য বদল

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর ॥ এবার শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে আখ চাষে বদলে যাচ্ছে এলাকার হতদরিদ্র কৃষকের ভাগ্য। উর্বর পতিত জমিতে আখ চাষ, স্বল্প খরচে ভালো ফলন ও ন্যায্য বাজার মূল্য পাওয়ায় এলাকার কৃষকরা এখন আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এতে গারো পাহাড়ের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে এখন আখ চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আখ এলাকার চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি হচ্ছে। ভারতের সীমানা ঘেষাঁ শেরপুরের শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তজুড়েই গারো পাহাড়। একসময় এখানকার ৩০/৩৫টি গ্রামের বেশিরভাগ জমিতে কোনো ফসল হতো না। পড়ে থাকতো পতিত। আর এজন্য কৃষকদের দিন কাটতো অভাব-অনটনে। অন্যদিকে জেলার অন্যান্য এলাকায় সীমিত পরিসরে এবং নকলা উপজেলায় যুগ যুগ ধরেই তুলনামূলক বেশি আখ চাষ হলেও তা দিয়ে জেলার চাহিদা মেটানো যেতো না। ফলে অন্য জেলা থেকে আখ আমদানি করতে হতো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। জেলায় আখের চাহিদা মেটাতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ ঘাটতির বিষয়টি মাথায় নিয়ে ৪/৫ বছর যাবত গারো পাহাড়ের ওইসব জমিতে চলছে আখ চাষ। কৃষি ভাষায় ওই আখ চুইং বা গেন্ডারি নামে পরিচিত। শ্রীবরদীর খারামোরা, বালিজুরি, মেঘাদল, মালাকোচা, চান্দাপাড়া, বাবেলাকোনা, হারিয়াকোনা, ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া, দুধনই ও গজনী পাহাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে এখন আখের সবুজ শীষও সবাইকে দোলা দেয়। জেলা খামারবাড়ির তথ্যমতে, এবার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকাসহ জেলায় ৭৫০ বিঘা জমিতে আখ চাষ হয়েছে। জানুয়ারি মাসে বপন করা ওইসব আখের ফলনও হয়েছে ভাল। এখন চলছে কাটা ও মাড়াইয়ের উৎসব। চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। রবি ও খরিব জাতের ১২ হাত উচ্চতার আখগুলো প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় ১৬ মণ। সে হিসেবে এবার ৫ হাজার মেট্রিকটনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রতিমণ আখ বিক্রি হচ্ছে ৭শ’ টাকা দরে। তবে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ অনেকের। সরেজমিনে গেলে কথা হয় শ্রীবরদীর খারামোরা গ্রামের কৃষক আমির উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, তিনি ২৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছিলেন। তার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। তিনি আখ বিক্রি করেছেন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তার মতে, গত বছর তিনি ওই জমিতেই আখ বিক্রি করেছিলেন প্রায় এক লাখ টাকা। তবে এবার লাভ একটু কম হওয়ার মূলে সময়মতো সঠিক পরিচর্যা ও বীজ রোপন না করাকে দায়ী করেছেন। আগামী বছর তিনি আরও ১০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করবেন বলে জানান। বালিজুরির কৃষক শামচুল হক জানান, আখ চাষে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ। আর পাহাড়ের যেসব এলাকায় ফসল ফলানো যেত না, সেসব এলাকাতে এখন আখ চাষ আশার আলো জ্বালিয়েছে। কারও কারও চোখে-মুখে ফুটেছে খুশির ঝিলিক। স্থানীয় কৃষি বিভাগসহ সুগারক্যান রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর সহায়তার কথাও স্বীকার করেন তারা। একই কথা জানান জরিনা বেগম, আজগর আলীসহ বেশ কয়েকজন আখ চাষী। তবে তাদের মতে, গারো পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন হলে এবং উৎপাদিত আখ সরকারিভাবে ন্যায্যমূলে ক্রয়ের ব্যবস্থা হলে তারা আরও লাভবান হবেন। এ ব্যাপারে জেলা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, স্বল্পব্যয়ে অধিক লাভে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে জেলা কৃষি বিভাগের পাশাপাশি সুগারক্যান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তরফ থেকে কৃষকদের নানা সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তবে পাহাড়ী এলাকায় আখ চাষে স্থানীয় কৃষকদের নতুন সম্ভাবনা জাগিয়েছে। এজন্য আগামীতে পাহাড়ের পতিত জমিজুড়ে আখ চাষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
×