ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা ‘ভূতের সরকার’ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছেন ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

খালেদা ‘ভূতের সরকার’ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছেন ॥ তথ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ‘ভূতের সরকার’ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন জাসদের একাংশের সভাপতি। গত রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেয়া খালেদা জিয়ার ভাষণের প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে নির্বাচনকালীন সরকার, সেনা মোতায়েন, ইভিএমের ব্যবহার, রাজনীতিসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বিরোধী রাজনীতি মোকাবেলার বিষয়টিও খোলাসা করেন সংবাদ সম্মেলনে। বিএনপি সংঘাতের রাজনীতি করলে সরকার কীভাবে মোকাবেলা করবে এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ যখন বলেন সাংবিধানিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করবেন না, এই রাজনৈতিক প্রস্তাবটাই হচ্ছে সাংঘর্ষিক প্রস্তাব। আমরা সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে যেভাবে অতীতে মোকাবেলা করেছি। সেই একই পদ্ধতিতে এরকম সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করব। ইনু বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে উনি (খালেদা) নির্বাচন করবেন না বলেছেন। কখনও সহায়ক, কখনও নিরপেক্ষ, কখনও নির্দলীয় সরকারের কথা বলেছেন। প্রকৃতঅর্থে তিনি কোন সরকার চান? এটা হয়ত তিনি নিজেও জানেন না। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উনি কার্যত শেখ হাসিনার অধীনে বা সংবিধানের অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি ভূতের সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কথা বলেছেন। কার্যত একটি ভূতের সরকার, একটি অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের পাঁয়তারা করলেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া সংবিধানের অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, উনি বাংলাদেশকে সংঘর্ষের দিকে, অস্বাভাবিক পথে ঠেলে দেয়ার একটা চক্রান্তের জাল বুনলেন। উনি সংবিধানের অধীনে নির্বাচন চান না। উনি কার্যত ভূতের সরকারই প্রতিষ্ঠ করতে চান, যা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হবে। ইনু বলেন, খালেদা জিয়া বিদেশ থেকে আসার পর আশা করেছিলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় তিনি আগুন সন্ত্রাসের জন্য, মানুষ পোড়ানোর জন্য এবং বিভিন্ন অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার জন্য জাতির কাছে মাফ চাইবেন। আমি আশা করেছিলাম উনি রাজাকার, জঙ্গী, যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতকে পরিহারের ঘোষণা দেবেন। নির্বাচন নিয়ে গঠনমূলক ইতিবাচক বক্তব্য দেবেন। তবে সে আশা পূরণ হয়নি, উনি জাতির কাছে মাফ চাননি। খালেদা জিয়া জাতির কাছে মাফ না চেয়ে সামরিক শাসনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, উনি প্রকারান্তরে মানুষ পোড়ানোর পক্ষে, জঙ্গী সন্ত্রাসের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, উনি সেনা মোতায়েনের কথা বলেছেন। সশস্ত্র বাহিনী ও সেনা মোতায়েনের বিষয়টা আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে এবং নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে পারে। অতীতে কোনদিনই সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ছিল না। সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে যখন কথা বলেছেন, আমি এর ভেতরের একটি ষড়যন্ত্রের বিষয় লুকানো দেখছি, তিনি ষড়যন্ত্রের আভাস দিয়েছেন। এটা এখন রাজনীতিতে পরিষ্কার হয়ে গেছে। ২০০৮ সালের পর থেকে খালেদা জিয়া অস্বাভাবিক রাজনীতির পথ অনুসরণ করেছেন মন্তব্য করে জাসদ সভাপতি বলেন, উনি সেই অস্বাভাবিক রাজনীতি এখনও অনুসরণ করেই চলেছেন। তিনি মোটেই বদলাননি, শোধরাননি। এখনও ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের রাজনীতির পথে হাঁটছেন। ইনু বলেন, শেখ হাসিনার সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আইনের শাসনে বাংলাদেশকে উত্তরণের রাজনীতি করছেন এবং বাংলাদেশে যেন গণতান্ত্রিক রাজনীতি সুপ্রতিষ্ঠা হয় সেই চেষ্টা করছেন। যুদ্ধাপরাধী, আগুন সন্ত্রাসী, একাত্তরের খুনী, পঁচাত্তরের খুনী, একুশে আগস্টের খুনীদের বিচারে আনা বিএনপির বিরুদ্ধে কোন প্রতিহিংসা নয়। শেখ হাসিনা নয়, খালেদা জিয়া ও তার স্বামী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, একুশে আগস্টের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে, মানুষ পুড়িয়ে জঙ্গী আক্রমণ করে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন বলে দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শেখ হাসিনাকে মাফ করে দেয়ার ঘোষণা বছরের সেরা রাজনৈতিক কৌতুক। মাফ তো চাইবেন বেগম জিয়া জাতির কাছে। মানুষ পোড়ানের জন্য, শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চক্রান্তের জন্য। মাফ চাইবে আহসান উল্লাহ মাস্টার ও শাহ এম এস কিবরিয়াকে হত্যার জন্য, জঙ্গীদের লালন, রাজাকার পোষার জন্য। খালেদা জিয়াকে বলব- গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যদি আপনি থাকতে চান, মানুষ পোড়ানোসহ যেসব জঘন্য অপরাধের সঙ্গে আপনি জড়িত এজন্য জাতির কাছে মাফ চাইবেন। রাজাকার ও জঙ্গীদের আপনার জোট থেকে বাদ দেবেন। নিয়মতান্ত্রিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অঙ্গীকার করবেন। ভোটে ইভিএম না রাখতে খালেদার বক্তব্যের বিষয়ে ইনু বলেন, ইভিএম একটি আধুনিক প্রযুক্তিগত ব্যাপার। আধুনিক প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার হবে সেই বিষয়ে আলোচনা চলছে, আলোচনা হবে। এটা নিয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হওয়ার কোন কারণ নেই।
×