ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিনহার পদত্যাগ পত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন, প্রজ্ঞাপনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

সিনহার পদত্যাগ পত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন, প্রজ্ঞাপনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেয়া পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। মঙ্গলবার সকালে পদত্যাগপত্রটি গ্রহণের পর বঙ্গভবন তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এখন বিধি অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি পদটি শূন্য ঘোষণাসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির ব্যবস্থা নেবে আইন মন্ত্রণালয়। তবে কবে নাগাদ এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে তা ঠিক করে বলতে পারেননি কেউ। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আইনমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত সংবিধান অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিই দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট নথিপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে তা একমাত্র রাষ্ট্রপতিই ভাল জানেন বলে জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নতুন প্রধান বিচারপতির নিয়োগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। দুটি বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সম্পূর্ণ এখতিয়ার। এক হলো প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, অপরটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা। কাজেই রাষ্ট্রপতি যখনই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন তখন সবাই দেখবেন, আমিও দেখব। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে এক মাসের বেশি ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিদেশে যান বিচারপতি সিনহা। ওই ছুটি শেষে গত শনিবার তার পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা জানায় বঙ্গভবন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এস কে সিনহা। বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে ৮১ দিন আগেই তার কার্যকাল শেষ হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২১ জন বিচারক প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাই প্রথম পদত্যাগ করলেন। দায়িত্বে থাকাবস্থায় বাংলাদেশে আর কোন প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্রকাশ্যে এত আলোচনা-সমালোচনাও হয়নি। বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সর্বোচ্চ আদালত জানায়, ওই সব অভিযোগের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা তিনি না দিতে পারায় সহকর্মীরা তার সঙ্গে এজলাসে বসতে নারাজ। গত অক্টোবরে বিচারপতি সিনহা ছুটিতে যাওয়ার পর আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। আর বিচারপতি সিনহা পদত্যাগ করায় রাষ্ট্রপতি এখন সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলে গত শনিবার জানিয়েছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোন ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’
×