ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্কে সৈয়দ রেজাউর

পিন্টুর সরকারী বাসা থেকে মুফতি হান্নানসহ জঙ্গীরা গ্রেনেড সংগ্রহ করে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

পিন্টুর সরকারী বাসা থেকে মুফতি হান্নানসহ জঙ্গীরা গ্রেনেড সংগ্রহ করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার দশম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান মঙ্গলবার যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, আসামি জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করায় র‌্যাবের তৎকালীন ডিজির (মহাপরিচালক) উপর ক্ষিপ্ত হন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তাকে না জানিয়ে কেন হান্নানকে গ্রেফতার করা হলো সে বিষয় তিনি তার (ডিজি) কাছে জানতে চান। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিকিউটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা। চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান তার দশম দিনে যুক্তিতে বলেন , বিএনপি নেতা ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাসভবন থেকে ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো সরবরাহ করা হয়। ওইদিন সকালে জঙ্গী নেতা মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সীসহ অন্য জঙ্গীরা পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন থেকে ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড ও ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। পরে ওইদিন জঙ্গী আহসানউল্লাহ কাজলের রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসা থেকে প্রস্তুতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দশম দিনের মতো যুক্ততর্ক শুনানিতে মামলার অন্যতম আসামি মাওলানা মঈনউদ্দিন ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর আলোকে এ তথ্য তুলে ধরেন। মুফতি হান্নানের জবানবন্দী সমর্থনে রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন সাক্ষী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। তাদের দেয়া জবানবন্দী যুক্তিতর্কে সোমবার ও মঙ্গলবার উপস্থাপন সম্পন্ন করেন রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর । এসব জবানবন্দীতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটনার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছে। এছাড়া জঙ্গী মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গীদের সিলেটের বিভিন্ন স্থানে, সিপিবির সমাবেশ ও উদীচীর সমাবেশে হামলার তথ্য উঠে এসেছে। ২১ আগস্ট হামলা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িতদের তথ্য উঠে এসেছে। মামলায় সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে জানা যায়, মামলার আসামি জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানকে গ্রেফতারের পর র‌্যাবের ডিজি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে জানান। সে সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী র‌্যাবের ডিজির উপর ক্ষিপ্ত হন।উল্লেখ্য অন্য মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে ওই সমাবেশে একটি ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চে যখন শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন আকস্মিক এই হামলা চালানো হয়। একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ও ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এসময় ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিকভাবে একটি মানব বলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে দলীয় সভানেত্রীকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। তবে গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তার ( শেখ হাসিনা) শ্রবণ শক্তির ক্ষতি হয়। এই বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন: প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন, ইসাহাক মিয়া প্রমুখ। এ মামলায় রাষ্ট্র্রপক্ষে ২২৫ জনের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আসামি পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন ২০ জন। মোট আসামির সংখ্যা ৪৯ জন। এর মধ্যে কারাগারে আটক আছেন ২৩ জন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক ও জামিনে রয়েছেন ৮ জন।
×